ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাশিয়ার প্রতি কঠোর নীতি গ্রহণ করতে হবে ॥ ন্যাটোর সুপ্রীম কমান্ডার

ইউরোপে আরও মার্কিন সৈন্য চাই

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১০ জানুয়ারি ২০১৬

ইউরোপে আরও মার্কিন সৈন্য চাই

ঠাণ্ডা লড়াই শেষ হওয়ার পর ইউরোপের নিরাপত্তা সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়ে গেছে বলে যুক্তরাষ্ট্র আশা করেছিল, কিন্তু ইউক্রেন ও সিরিয়ায় রাশিয়ার সাম্প্রতিক হস্তক্ষেপের পর যুক্তরাষ্ট্র তার কথাবার্তায় পরিবর্তন এনেছে। চলতি সপ্তাহে ন্যাটো মিত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার ও মার্কিন বিমান বাহিনীর জেনারেল ফিলিপ ব্রিডলাভ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র খুব বেশিদিন ধরেই রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা দেখিয়ে এসেছে, কিন্তু এখন দেশটির প্রতি কঠোর নীতি অবলম্বনের সময় এসেছে। তার মন্তব্য বলতে গেলে অলক্ষ্যেই চলে যায়। তিনি বলেন, ইউরোপে আরও সৈন্য মোতায়েন করে কঠোর নীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে। সাবেক ঠা-া লড়াইকালীন বৈরী রাশিয়ার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য মার্কিন বাহিনীকে প্রস্তুত করতে তাদের উচ্চমানের প্রশিক্ষণও দিতে হবে। ওই মন্তব্যকে কারও কারও কাছে কিছুটা অকারণ আতঙ্ক ছড়ানোর মতোই মনে হয়েছে। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ারম্যান অব দ্য জয়েন্ট চীফস অব স্টাফ জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ডের ইউরোপ সফরকালে ওই মন্তব্য করা হয়। সত্য যে, রাশিয়া ক্রিমিয়া আক্রমণ করেছিল এবং ইউক্রেনে চর, গোপন তৎপরতা এবং এমন কি এর নিজস্ব রেড আর্মির কিছু কিছু সদস্যকে কাজে লাগিয়েছিল। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা রাশিয়া জার্মানির নিম্নভূমির করিডর ফুনাডা গ্যাপ দিয়ে এর ট্যাঙ্ক চালিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থানে রয়েছে, এ কথা বিশ্বাস করছেন না। সাড়ে চার দশক যুগের ঠা-া লড়াইকালে ওয়ারশ প্যাক্টের কোন আকস্মিক হামলা রোধ করতে মার্কিন বাহিনী সেই করিডরেই প্রস্তুত ছিল। কিন্তু জেনারেল ব্রিডলাভ ও অন্যদের মন্তব্য চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে বলে সাবেক রাষ্ট্রদূত জন হার্বস্ট যুক্তি দেখান। তিনি ২০০৩-২০০৬ সালে ইউক্রেনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি বলেন, আমার মনে হয়, যদি ব্রিডলাভ ছয় থেকে আট মাস আগে এ দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করতেন, তা হলে হোয়াইট হাউস তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিত এবং তাকে তার সুর নরম করতে বলত, কিন্তু এখন নয়। কেবল আমাদের সেনাবাহিনীর মধ্যেই নয়, প্রশাসনের মধ্যেও মনোভাবের পরিবর্তন ঘটেছে। এর বড় কারণ হলো সিরিয়ায় সাম্প্রতিক রুশ হস্তক্ষেপ এবং ক্রিমিয়া ও ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন। ক্রিমিয়া ও ইউক্লেনে রাশিয়া অচিহ্নিত সামরিক পোশাকে গুপ্ত রুশ সৈন্যদের ব্যবহার করেছিল। এটি ঠা-া লড়াইয়ের অবসানের পর এক লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন। সেই লড়াই শেষ হলে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের নিরাপত্তা সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে এমন ধারণা নিয়ে দ্রুত কাজ করতে শুরু করে। ভাষ্যকার জেফরিম্যানকফ বলেন, আমরা ভেবেছিলাম আমরা অন্যান্য বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দিতে পারব, কারণ ইউরোপকে নিরাপত্তা দিতে হবে না, ইউরোপই অন্যদের নিরাপত্তা দিতে পারবে। তিনি ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের রাশিয়া এ্যান্ড ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের ডিরেক্টর। রাশিয়া সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা নাটকীয়ভাবে ও দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে। পেন্টাগনের সাবেক কর্মকর্তা ক্রিস্টোফার হারমার বলেন, আমরা ভেবেছিলাম, ‘রাশিয়া এক পরাজিত শত্রু, কেবল তাই নয়, দেশটি পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে।’ ইউরোপ, ন্যাটো ও রাশিয়ার বিষয়ে সামরিক কৌশলের পরিকল্পনা করত এমন স্টাফে তিনি ২০০৫-২০০৮ সালে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। হারমার বলেন, আমরা ভেবেছিলাম তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে তাদের ন্যাটোতে আনতে পারব এবং তাদের সাদরে বরণ করে দায়িত্বশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারব। তিনি এখন ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ারে কার্যরত নৌবাহিনী বিষয়ক বিশ্লেষক। -ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর
×