ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মানবসম্পদে অর্থায়ন

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১০ জানুয়ারি ২০১৬

মানবসম্পদে অর্থায়ন

নতুন বছরের শুরুতেই আশার সংবাদ হলো- মানবসম্পদ উন্নয়নে অর্থায়ন বাড়াচ্ছে বিশ্বব্যাংক। নির্দিষ্টভাবে কারিগরি শিক্ষা প্রদানে অর্থ সহায়তা বাড়ছে। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা পাবে বিশেষ সুবিধা। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক ও কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (সিডা) প্রথমে ৫৭৩ কোটি ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা দিলেও পরে এটা বাড়িয়ে ৭৭২ কোটি ৯ লাখ ৭ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে দ্বিতীয়বারের মতো সহায়তা বাড়াচ্ছে বিশ্বব্যাংক। আছে বহুমুখী বাধা, আছে বিপুল বিঘœতা, তবু এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। আছে শত্রুতা, আছে উল্টো গাড়ির অপচালক- তবু সঠিক পথে অগ্রসরমান আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ কিংবা ‘বাংলাদেশ একটি উন্নয়নের পরীক্ষাগার’- এ জাতীয় শ্লেষ ও বিদ্রƒপ গায়ে না মেখে মানুষ আত্মশক্তি অর্জনের পথে এগিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে মর্যাদার আসনে স্বদেশকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিদায়ী বছরে প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের ক্রমোন্নতির বিষয়টির স্বীকৃতি মিলেছিল। মানবসম্পদ উন্নয়নে ১৮ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশের কাছে বাংলাদেশ এখন অনুকরণীয়। শুধু অর্থনীতি ও মানব উন্নয়ন নয়; বাংলাদেশ এশিয়ার কোন কোন দেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে আইনের শাসন, জবাবদিহিতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও। জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান মধ্যসারির দেশগুলোর তালিকায় আছে ১৫২ নম্বরে। সেখানে পাকিস্তানের অবস্থান ১৫৭। নারী-পুরুষ সমতা উন্নয়নে বাংলাদেশের অবস্থান ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় ভাল। আর সার্বিকভাবে মানবসম্পদ উন্নয়নে আমাদের অগ্রগতির ধারা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় দ্রুততর। ১৯৭২ সালের এক কোটি দশ লাখ টন খাদ্য উৎপাদনের তুলনায় এখন উৎপন্ন হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন। জমি শতকরা ১৫ ভাগ কমলেও বেড়েছে উদ্যোগ, পরিশ্রম, প্রণোদনা এবং কৃষিজীবী ও জমির উৎপাদনশীলতা। স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতে আমাদের ক্রমোন্নতি বেশ কয়েক বছর ধরেই আলোচিত বিষয়। মানবসম্পদকে সত্যিকারের কার্যকরী দক্ষ সম্পদে পরিণত করতে হলে আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজী শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। বিশ্বে অনেক দেশই রয়েছে যেখানকার মানুষ দক্ষ মানবসম্পদ হওয়া সত্ত্বেও শুধু ইংরেজী ভালভাবে না জানার ফলে পিছিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটুক তা কারোরই কাম্য নয়। বিপুলসংখ্যক ব্যক্তি দেশের বাইরে সুনামের সঙ্গে নানামুখী কাজ করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। এমন আলোকিত বিশ্ববাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা বাড়াতে হলে অবশ্যই ইংরেজী শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার সার্বিকভাবে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ করে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে। সরকার টেকনিক্যাল এ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশন এ্যান্ড ট্রেনিং খাতকে ফোকাস খাত হিসেবে গণ্য করছে, যাতে দেশে ও বিদেশে চাহিদা আছে এমন খাতে দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জনশক্তি যোগান দেয়া যায়। এ লক্ষ্যে সরকার উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সহায়তা কাজে লাগাতে বিশেষ উদ্যোগী হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের ক্রমোন্নয়নের পথে এগিয়ে চলার পেছনে রয়েছে এ দেশের সাধারণ মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম, শত বাধাবিপত্তির মুখেও সামনে এগিয়ে চলার অদম্য উদ্দীপনা। রাষ্ট্র সব সময়ে মানবের স্বার্থ রক্ষা করতে পারেনি, এটা অনস্বীকার্য। তার পরও উন্নয়নের বর্তমান গতিধারা নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক। তবে এখনই আত্মসন্তুষ্টি নয়। আমাদের আরও দ্রুত উন্নতি করার সুযোগ অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে।
×