ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমিরকে নিয়ে অস্বস্তিতে কেন্দ্র

প্রকাশিত: ১৮:৫৩, ৯ জানুয়ারি ২০১৬

আমিরকে নিয়ে অস্বস্তিতে কেন্দ্র

অনলাইন ডেস্ক॥ ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া’-র বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের জন্য কোনও পারিশ্রমিক নিতেন না আমির খান। তাঁকে সরিয়ে যাঁকে দেশের পর্যটনের নতুন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করা হবে, তিনিও বিনা পারিশ্রমিকে বিজ্ঞাপন করবেন তো? সরকার না বিজ্ঞাপন সংস্থা— কে তাঁকে নিয়োগ করবে? এমন গুগলি বোধ হয় একেবারেই হিসেবের বাইরে ছিল পর্যটন সচিব বিনোদ জুৎসির। পর্যটন মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে সেই প্রশ্নের মুখেই পড়তে হল তাঁকে। এই বিষয়টি তুলেই কংগ্রেস-সিপিএমের সাংসদরা মিলেমিশে কোণঠাসা করলেন বিজেপিকে। আক্রমণের মুখে বিজেপি সাংসদরা বলে বসলেন— আমির খান ‘দেশদ্রোহী’। তিনি দেশকে অপমান করেছেন। তাঁকে বাদ দেওয়াটা উচিত কাজই হচ্ছে। কিন্তু জোড়া গুগলি একেবারেই খেলতে পারলেন না জুৎসি। তিনি জবাব দিতে না-পারায় তাঁর মন্ত্রককে দশ দিনের মধ্যে উত্তর দিতে নির্দেশ দিয়েছে কমিটি। দু’দিন আগে পর্যটন মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নেয়, ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া’-র বিজ্ঞাপনে আমিরের চুক্তি নবীকরণ হবে না। প্রশ্ন ওঠে, অসহিষ্ণুতা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেই কি পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের আসন খোয়ালেন আমির! সম্প্রতি আমির বলেছিলেন, দেশে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। তাঁর স্ত্রী আতঙ্কিত হয়ে দেশ ছাড়ার কথাও ভেবেছেন। আজ পর্যটন মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে সরকারকে চেপে ধরতে কংগ্রেস ও সিপিএমের নেতারা আগে থেকেই তৈরি ছিলেন। সূত্রের খবর, বৈঠকে পর্যটনসচিব বিনোদ জুৎসি হাজির হতেই প্রাক্তন পর্যটনমন্ত্রী কংগ্রেসের কুমারী সেলজা বলেন, ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া’-র বিজ্ঞাপনের বিষয়টি সদস্যদের কাছে খোলসা করে জানান। এর পর সিপিএমের সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, দেশের পর্যটনের জন্য আমির বিনা পারিশ্রমিকে অভিনয় করতেন। এর পর যিনি বিজ্ঞাপনের মুখ হবেন, তিনিও সেটাই করবেন তো? সেলজাও তাঁকে জোরালো সমর্থন করেন। সচিব প্রথমে ‘আমাকে খোঁজ নিতে হবে’, ‘এটা আজকের বিষয় নয়’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও কংগ্রেস ও সিপিএম সদস্যরা তাঁকে চেপে ধরেন। কংগ্রেসের কে সি বেনুগোপাল বলেন, ঋতব্রতর প্রশ্নর উত্তর দিতেই হবে। কাল কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী মহেশ শর্মা ব্যাখ্যা দেন, পর্যটনের প্রচারের জন্য একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল কেন্দ্রের। ওই সংস্থাই আমিরকে বেছে নেয়। সরকার নয়। এখন ওই সংস্থার সঙ্গে সরকারের চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে আমিরও বিজ্ঞাপনে থাকছেন না। আজ স্থায়ী কমিটিতে প্রশ্নের মুখে পড়ে পর্যটনসচিবও সেই একই যুক্তি দেন। সদস্যরা জানতে চান, এ বার যিনি ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হবেন, তাঁকে কে বাছবে? সরকার না বেসরকারি বিজ্ঞাপন সংস্থা? বিপদ বুঝে মুখ খোলেন বিজেপির অভিনেতা-সাংসদ মনোজ তিওয়ারি। তিনি বলেন, ‘‘আমির দেশদ্রোহী। তিনি দেশকে অপমান করেছেন। তাঁকে বিজ্ঞাপন থেকে সরিয়ে দেওয়াটা ঠিকই হয়েছে। মনোজের সমর্থনে এগিয়ে আসেন বিজেপি সাংসদ রামচরিত্র নিষাদ। তাতে ঋতব্রত পাল্টা যুক্তি দেন— কে দেশদ্রোহী আর কে নয়, তা স্থায়ী কমিটি ঠিক করে দেবে না। কিন্তু কমিটির সদস্যরা এই দু’টো প্রশ্নের জবাব চায়— আমিরের বদলে যিনি সরকারি বিজ্ঞাপন করবেন, কে তাঁকে বাছাই করবে? তিনিও বিনা পারিশ্রমিকে বিজ্ঞাপন করবেন তো। আমিরকে নিয়ে এই বাগ্‌যুদ্ধ চলার সময়ে বিজেপির আর এক সদস্য শত্রুঘ্ন সিন্‌হা ‘খামোশ’ হয়েই বসেছিলেন। মাঝে মাঝে শুধু মিটিমিটি হেসেছেন। মুখ খোলেননি তৃণমূল সাংসদ দশরথ তিরকেও। কমিটির চেয়ারম্যান কে ডি সিংহ অবশ্য পর্যটনসচিবকে বলেন, আপনি সাংসদদের প্রশ্নের উত্তর দিন। কিন্তু তিনি বৈঠকে উত্তর দিতে না পারায় পর্যটন মন্ত্রককে দশ দিনের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে। সরকারের একটি সূত্রের দাবি, আমির-কাণ্ড নিয়ে এই বিতর্কের জেরে নড়ে বসেছেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরও। দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি নৃপেন্দ্র মিশ্রও আমির খান ও বিজ্ঞাপন সংস্থার সঙ্গে চুক্তি নিয়ে পর্যটন মন্ত্রকের রিপোর্ট চেয়েছেন। আর একটি সূত্রে বলা হচ্ছে, এমন কোনও রিপোর্ট চাওয়া হয়নি। কারণ আপাতত বিতর্ক ধামাচাপা দেওয়াই সরকারের উদ্দেশ্য। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×