ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আইটি ডটকম ডেস্ক

ফেসবুকের বিকল্প খোঁজে

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৯ জানুয়ারি ২০১৬

ফেসবুকের বিকল্প খোঁজে

বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণ সম্প্রদায়ের একটি বিরাট অংশের ব্যক্তিগত ভাললাগা, মন্দলাগা শেয়ার করার জায়গা এই প্ল্যাটফর্ম ঘিরেই। তাই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তারা বেছে নেন তাদের পণ্যের খবর সম্ভাব্য ক্রেতাকে জানানোর জন্যে এই প্ল্যাটফর্মকে। ফেসবুকে পেজ কিংবা গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন পোস্ট ও ছবি দেখে পণ্য সম্পর্কে জানতে পারেন। ফেসবুক-এর এই পেজ কিংবা গ্রুপগুলো মূলত পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারে সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করার কথা থাকলেও অনেকেই অত্যুৎসাহী হয়ে এর মাধ্যমেই ইনবক্সে অর্ডার নিতে শুরু করেন। এভাবেই আস্তে আস্তে আমাদের দেশে গড়ে উঠেছে ফেসবুক ব্যবসা। দেশের সফটওয়্যার খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিশনের অফ সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বেসিসের হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন প্রতি সপ্তাহে অনলাইনে প্রায় দেড় কোটি টাকার পণ্য ও সেবা লেনদেন হয়। বেসিসের হিসেবে প্রায় এক হাজার ওয়েব পেজ আছে, যারা ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমের সাহায্যে ব্যবসা করে। ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ইক্যাব)-এর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে ব্যবসা করেন এমন ফেসবুক পেজ আছে সাড়ে ৭ হাজার। ফেসবুক বন্ধ থাকার কারণে এই খাত বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। যেহেতু ফেসবুক নির্ভর উদ্যোক্তারা সবাই ক্ষুদ্র ও মাঝারি তাই তাদের সীমিত পুঁজিও পরেছে হুমকির মুখে। নতুন কোন অর্ডার আসছিল না, অনেক অর্ডার আগে পেয়েছিলেন কিন্তু ডেলিভারি দিতে পারেননি। কারণ ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যমই ছিল ফেসবুক। যেহেতু ক্রেতারা ফেসবুক এ্যাক্সেস করতে পারছিলেন না তাই তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করা যাচ্ছিল না। একজন উদ্যোক্তা জানান, ফেসবুকে আগে তিনি অর্ডার পেতেন দৈনিক ৪০ থেকে ৪৫টি। কিন্তু ফেসবুক বন্ধ থাকার ২২ দিনের মধ্যে তিনি সাকুল্যে ৪০টি অর্ডারও পাননি। প্রতিদিন তার গড় বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার টাকা। এই বিক্রির পরিমাণও তাই কমে এসেছিল আনুপাতিক হারে। ইক্যাবের সভাপতি জানান, ফেসবুক বন্ধের ২২ দিনে ইকমার্স ব্যবসায়ীদের অর্ডারের পরিমাণ সাধারণ সময়ের থেকে ৭০%-এর মতো কমে গিয়েছিল। আর যারা শুধু ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা করেন তাদের অর্ডারের পরিমাণ কমে গিয়েছিল ৯০%-এর মতো। সব মিলিয়ে বিশাল এক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল প্রতিশ্রুতিশীল ইকমার্স খাতে। ফেসবুকের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠা এই বিশাল উদ্যোক্তাশ্রেণীর কি তবে আর কোন সমাধান নেই? ফেসবুক এভাবে হঠাৎ বন্ধ থাকলে কিংবা পেজ রিপোর্ট হয়ে বন্ধ হয়ে গেলে কি তাদের ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যাবে? যদি একটি নিজের অনলাইন স্টোর থাকে তবে এই সমস্যা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। অনলাইন স্টোরের ক্রেতা সমাগম কখনও ফেসবুকের কোন সিদ্ধান্তের জন্যে আটকে থাকবে না। ফেসবুক পেজ বিশ্বজুড়ে মূলত ব্যবহার হয় অনলাইন মার্কেটিংয়ের জন্য। কিন্তু ক্রেতাকে সম্পূর্ণ অনলাইন কেনাকাটার অভিজ্ঞতার স্বাদ দিতে নিজস্ব ওয়েবসাইটের বিকল্প নেই। আর ক্রেতার জন্য যদি আলাদা লগ-ইন এর অপশন থাকে তবে এতে বিক্রেতা সরাসরি ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধা নিতে পারেন। চীনে যে ফেসবুক নেই তাতে করে তাদের অনলাইন ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়নি উপরন্তু তাদের দেশ থেকেই আলিবাবার মতো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স ব্যবসার উদ্ভব হয়েছে। নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিক্রির তাই কোন বিকল্প নেই। এমন পরিস্থিতিতে সমাধান হতে পারে স্টোরিয়া বা ঘুড়ির মতো প্ল্যাটফর্মগুলো। নতুন উদ্যোক্তারা এই ধরনের মার্কেটপ্লেসে বিনা খরচে নির্দিষ্টসংখ্যক পণ্য আপলোড করতে পারেন। ব্যবসার মূল কাজগুলোর পাশাপাশি নিজের ওয়েবসাইট নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন বিক্রেতা। যখনই নতুন পণ্য আসবে তখনই নিজেই আপলোড করতে পারবেন একজন অনলাইন মার্চেন্ট। আর এ ধরনের প্ল্যাটফর্মে ওয়েবসাইট বানাতে তেমন কোন কারিগরি জ্ঞানেরও প্রয়োজন নেই। মার্কিন বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী ওয়ারেন বাফেটের একটি কথা স্মরণ করা যেতে পারে এখানে। তিনি বলেছেন, ‘কখনও আয়ের জন্য একটি উৎসের উপর নির্ভর করে থাকবেন না। দ্বিতীয় বা তৃতীয় উৎসের খোঁজ রাখুন।’ যারা স্রেফ ফেসবুকের উপর নির্ভর করে ব্যবসা করার চিন্তা করছেন, তাদের সম্ভবত ভিন্ন পথে চিন্তা করার সময় এসেছে।
×