ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইটভাঁটির আগুনে পুড়ছে ফসলি জমি, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৯ জানুয়ারি ২০১৬

ইটভাঁটির আগুনে পুড়ছে ফসলি জমি, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ৮ জানুয়ারি ॥ ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ইটভাঁটির আগুনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এলাকার ফসলের ক্ষেত ও পরিবেশ। সঙ্গে ভূমিদস্যু ও দালালদের প্রলোভনে শত শত একর আবাদি জমি হয়ে যাচ্ছে অনাবাদি। ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ভিমটিয়া, গোয়াগাঁও মৌজা ও তার আশপাশ এলাকার আবাদি জমিগুলোর মাটি কেটে ভাঁটিগুলোতে ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। ওই মৌজা দুটির প্রায় ৫শ’ একর আবাদি জমির মাটি কেটে বড় বড় পরিখা, পুকুর ও খাল করায় ওই সব জমিতে ২০ বছরেও ফসল ফলানো সম্ভব হবে না বলে ভূমি বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। ভাঁটি মালিকরা তাদের এক শ্রেণীর দালালচক্রের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক আবাদি জমির মালিকদের মোটা অঙ্কের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে তাদের আবাদি জমিগুলোর মাটি খুঁড়ে ইটভাঁটিগুলোতে সরবরাহ করছে। যেসব জমিতে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালানো হচ্ছে তার সংলগ্ন জমিগুলোও অনাবাদি হয়ে পড়ছে। কারণ খালসংলগ্ন জমির উঁচু অংশে আর পানি জমে থাকছে না। ফলে ওই সব জমিতে এখন বোরো ধান আবাদে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গমক্ষেতগুলোতে সেচের পানি জমছে না। সেচের পানি চুইয়ে খাল, গর্ত ও পরিখাগুলোতে চলে যাচ্ছে। ভাঁটি মালিকদের লেলিযে দেয়া দালালরা প্রতি বিঘা জমির মাটি কাটার জন্য অভাবী কৃষককে ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরিশোধ করা হচ্ছে অর্ধেক টাকা। এমনি করে জমির মালিক হয়ে উঠছে ভূমিহীন আর চিরদিনের জন্য এই জমিগুলো পরিণত হচ্ছে অনাবাদি খালে। ইটভাঁটি মালিক শাহাজাহান আলী (এসবি ভাঁটি) জানান, দালালরা তাদের ইটভাঁটির মাটি সরবরাহ করে থাকে। ভাঁটি মালিকরা কেউ সরাসরি জড়িত নয়। উত্তরাঞ্চলের বগুড়ায় পরিবেশ অধিদফতরের অফিস থাকলেও ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে তারা সরেজমিন পরিদর্শন না করায় ইটভাঁটি মালিক ও দালালচক্র ভূমিদস্যুতায় মেতে ওঠে। যে ভিমটিয়া, গোয়াগাঁও মৌজার জমি পীরগঞ্জ উপজেলার ধান, গম, সরিষা উৎপাদনে সেরা রেকর্ড ছিল, ইটভাঁটিগুলোর আগ্রাসী তৎপরতায় এই মৌজা দুটি এখন ফসলহীন মাঠে পরিণত হতে চলেছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মূকেশ চন্দ্র বিশ্বাসকে জানালে তিনি উপজেলা এ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব ল্যান্ডকে তাৎক্ষণিকভাবে সরেজমিন তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দিলেও শুক্রবার পর্যন্ত কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। এই ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হলে তারা মরিয়া হয়ে অবশিষ্ট জমিগুলোকে ধ্বংস করে অনাবাদি ও ফসলহীন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার চক্রান্তে আরও শক্তিশালী হয়ে গরিব ক্ষুদ্র জমির মালিকদের পথে বসাতে বাধ্য করবে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন। একই ধরনের ইটভাঁটি মালিকদের লেলিয়ে দেয়া দালালরা সদর উপজেলার আক্চা, দক্ষিণ বঠিনা, রাজাগাঁও, পাটিয়াডাঙ্গী এলাকায় একই কায়দায় ও কৌশলে আবাদি জমির মাটি কেটে ভাঁটিতে যোগান দিয়ে জমিগুলোকে অনাবাদি করে ফেলছে। গত মৌসুমে ওই সব এলাকায় কমপক্ষে ২০০ একর জমির বোরো ধানক্ষেত ধ্বংস হয়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জেলা প্রশাসক অফিসে দলবদ্ধভাবে ঘেরাও ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। এরপরও চলতি মৌসুমে ইটভাঁটির সঙ্গে আবাদি জমির মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছে দুর্বৃত্তরা। অসহায় কৃষক, ক্ষুদ্র প্রান্তিক চাষীরা কোন আইন-বিচারের নাগাল পাচ্ছেন না। ফলে ওই জমিগুলো হতে বছরে শত শত মণ খাদ্যশস্য উৎপাদন হতে বঞ্চিত হচ্ছে ঠাকুরগাঁও জেলাবাসী।
×