ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে ফসলি জমিতে পুকুর খননের হিড়িক

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৯ জানুয়ারি ২০১৬

রাজশাহীতে ফসলি জমিতে পুকুর খননের হিড়িক

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় এখন কৃষিজমি নষ্ট করে হিড়িক পড়েছে পুকুর খননের। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুকুর খননে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলেও তা মানছেন না প্রভাবশালীরা। একের পর এক জমি খনন করে রূপান্তরিত করা হচ্ছে পুকুরে। জেলার পবা উপজেলার ঝুজকাই ও বড়বাড়িয়ার মধ্যবর্তী পুরাতন সøুইসগেট সংলগ্ন স্থানে পুকুর খননের কাজ চলছে। সøুইসগেটের সামনে বড় আকারের পুকুর খননের ফলে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে। এ কারণে ওই এলাকার তিনটি গ্রামসহ আট শ’ বিঘা জমিতে সৃষ্টি হবে জলাবদ্ধতার। পরিবর্তিত হবে ভূমির শ্রেণী। জলাবদ্ধতার কারণে ফসল ফলবে না। বেকার হয়ে পড়বেন দুই হাজার কৃষক ও প্রায় দশ হাজার কৃষিশ্রমিক। বাগমারা উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের নন্দনপুর, বালানগর, সগুনা, মোহাম্মদপুর, দ্বীপনগর গ্রামে কৃষিজমি নষ্ট করে চলছে পুকুর খননের কাজ। ফলে ওই এলাকার দেড় শ’ একর কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কৃষকরা জানান, ওই অঞ্চলের ধান ও পাট, পানবরজ, মরিচ, শাক-সবজির উৎপদান কমে যাবে। শুধু বাগমারা ও পবায় নয়, জেলার পুঠিয়া, তানোর, মোহনপুর উপজেলায় পুকুর খননের হিড়িক পড়েছে। এতে অর্থনৈতিকভাবে কিছু কৃষক স্বাবলম্বী হলেও আবাদি জমির পরিমাণ পর্যায়ক্রমে কমে যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাতারাতি আবাদি জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে মাছের খামার। দু-এক বছর আগেও যেসব জমি ছিল চাষাবাদের জন্য এখন তা পরিণত হয়েছে পুকুরে। তানোর উপজেলার সলিমপুর, মোহনপুরের কেশরহাট ছাড়াও পবা ও বাগমারার বিভিন্ন ফসলের মাঠ এখন পরিণত করা হয়েছে পুকুরে। এক বছরে পবা ও বাগমারা উপজেলায় ২০০টির বেশি ছোট-বড় পুকুর খনন করা হয়েছে। এভাবে ধানসহ অন্যান্য ফসলি জমি রাতারাতি পুকুর ও দীঘিতে রূপান্তর হয়ে যাচ্ছে। বাগমারা উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুরাতন পুকুর-দীঘির পরিসংখ্যান তাদের কাছে থাকলেও নতুন করে খনন করা পুকুর-দীঘির সংখ্যা নেই। কৃষি অফিস আরও জানায়, ব্যক্তিগত উদ্যোগে পুকুর-দীঘি খনন করতে পূর্ব অনুমতির প্রয়োজন না থাকায় যে যার মতো যেখানে সেখানে পুকুর-দীঘি খনন করে চলেছে। পবার কৃষকরা অভিযোগ করেন, অপরিকল্পিতভাবে পুকুর-দীঘি খনন করায় আবাদি জমিতে সারাবছর জলাবদ্ধতা থাকছে। সময়মতো বিভিন্ন ফসল ফলানো যাচ্ছে না। বেশিরভাগ পুকুর খনন করা হচ্ছে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করেই। বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম জানান, ফসলি জমি কেটে পুকুর খনন পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। মাছ চাষে লাভের কারণে গ্রামের কৃষক জমি নষ্ট করে পুকুর করছেন। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তারা পুকুর খনন বন্ধে মালিকদের সতর্ক করেছেন। পবা উপজেলার বড়বাড়িয়া মৌজা এলাকার আবদুল মালেকের ছেলে আবদুল শরিফ গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে ড্রেজার দিয়ে পুকুর খননের কাজ শুরু করেন। প্রায় ১০ বিঘা জমিতে তার এ কাজ চলছে। বিলের জমি থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি তুলে পুকুরের বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। তার দেখাদেখি পার্শ্ববর্তী ঝুজকাই গ্রামের জুলমত আলীর ছেলে ইব্রাহিম খলিলও পুকুর খননের কাজ করছেন। এ ব্যাপারে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পুকুর খনন বন্ধের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপরও যদি পুকুর খনন করা হয়, তাহলে সংশ্লিষ্টরা আইনের আওতা থেকে রক্ষা পাবেন না।
×