ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জ বিদ্যুত অফিসে গ্রাহক হয়রানি

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৯ জানুয়ারি ২০১৬

কেরানীগঞ্জ বিদ্যুত অফিসে গ্রাহক হয়রানি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ৮ জানুয়ারি ॥ ঢাকা পল্লী বিদ্যুত সমিতি ২ এর অধীনে কলাতিয়া, জিনজিরা, শুভাঢ্যা, হাসনাবাদ জোনাল অফিসে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অধিকাংশ কর্মচারী, কর্মকর্তা, ইলেকট্রিশিয়ান ও দালালদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। নতুন মিটার নিতে আসা গ্রাহকরাই বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছে। দালালরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও নেতা পাতিনেতা। কলাতিয়া জোনাল অফিসের ক্ষমতাধর এজিএম জসীম উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার আলীমুল, ওয়ারিং ইন্সপেক্টর এডুইন, লাইনম্যান কাদের, আমিনুল, দুলাল বসু, মিটার রিডার সানোয়ার ১৩ ইলেকট্রিশিয়ানদের মধ্যে মাসুদ ও আমির হোসেনের দাপটে পুরো অফিস ও গ্রাহকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। এরা সকলে বাড়ি-গাড়ি ও বহু সম্পদের মালিক বনে গেছে। গত ২৭ অক্টোবর এদের নেতৃত্বে এলাকা পরিচালক হাজী ফারুককে অফিসের ভিতর হামলা চালায়। পরবর্তীতে ডিজিএমের কক্ষ থেকে তুলে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে জীবননাশের হুমকি দেয়। এ ব্যাপারে তিনি বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রীর বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ঘাটার চরের সহিদুল ইসলাম দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছেন। এ ছাড়া ঘাটারচর, খালপাড়, আটি, নয়াগাঁও ও মধ্যের চরের গ্রামবাসী তাদের নাম ঠিকানা মোবাইল নং ও স্বাক্ষরসহ হয়রানি বন্ধে আকুল আবেদন জানিয়েছে। ঘাটার চরের বাসিন্দা আনোয়ার জানান, তার স্ত্রী সেলিনা ও শাশুড়ি মমতাজ বেগমের নামে ৫টি মিটারের অনুকূলে মিটার রিডার সানোয়ারকে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। কোন কাজ করেনি ৭ মাসে। এমনকি টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। নয়াগাওয়ের জহির উদ্দিন জানান, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলেকট্রিশিয়ান আমির বাড়ির লাইন কেটে ও টাকা দাবি করে। আমি অফিসের কাগজ দেখতে চাইলে পরে পালিয়ে যায়। এরা পরস্পর যোগসাজশে অফিসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যুতের নতুন মিটার সংযোগ পেতে সর্বসাকুল্য তিন হাজার ৯শ’ টাকা খরচ হয়। এর মধ্যে আবেদন ফি ১শ’ টাকা। জামানত ফেরতযোগ্য ৬শ’/৮শ’ টাকা। ইলেকট্রিশিয়ানদের মজুরি প্রথমে ওয়ারিং ৫শ’ টাকা ও পরে মিটার সংযোগ ৫শ’ টাকা। বৈদ্যুতিক বোর্ড সরঞ্জামসহ ২ হাজার টাকা। কিন্তু দালাল/ ইলেকটিশিয়ানরা অফিসের সঙ্গে যোগ সাজসে নতুন মিটারে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আদায় করে থাকে। কলাতিয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, নবেম্বর মাসে ১১৫৬টি মিটারে সংযোগ দেয়া হয়েছে। দেখা যায় প্রতি মাসে ৪ জোনাল অফিস থেকে দালালরা প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রাহকরা ৪/৫ গুণ টাকা দিয়েও সময়মতো মিটার সংযোগ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিজিএম আলমগীর হোসেন বলেন, গ্রাহক হয়রানির ব্যাপারে অভিযোগ পাইনি। তবে হাজী ফারুক হোসেন প্রতিমন্ত্রীর বরাবর আবেদন করেছে শুনেছি। জিনজিরা জোনাল অফিসের ডিজিএম মিজানুর রহমান জানান, অফিসে দালাল রয়েছে। তবে বেশিরভাগ সরকারী দলের। তাই কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। তবে দালাল উচ্ছেদে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। শুভাঢ্যা জোনাল অফিসের ডিজিএম আবুল বাশার আজাদ জানান, মাঝে মধ্যে দালালদের উৎপাত বেড়ে যায়। অফিসের কোন লোক গ্রাহককে হয়রানি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকার পল্লী বিদ্যুত সমিতি ২ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার রবিউল ইসলাম বলেন, কোন কর্মকর্তা কর্মচারী ঘুষ দাবি করে গ্রাহক হয়রানি করলে তাকে গলায় গামছা বেঁধে আমার কাছে ফোন দিবেন।
×