ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাওড়-বাঁওড় আর মোষের শিং এই তিনে ময়মনসিং

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৯ জানুয়ারি ২০১৬

হাওড়-বাঁওড় আর মোষের শিং এই তিনে ময়মনসিং

কথিত আছে হাওড়-বাঁওড় আর মোষের শিং-এই তিনে ময়মনসিং। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে শুরু করে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত ময়মনসিংহ জনপদের ছিল এমন অবস্থা। গ্রামীণ কি শহর সব জায়গায় যোগাযোগের প্রধান বাহন ছিল রিক্সা, গরুর গাড়ি, পালকি ও ঘোড়ার টমটম গাড়ি। আর মালামাল পরিবহনের মাধ্যম ছিল ময়মনসিংহে মোষের গাড়ি ও নৌকা। এসব বাহন এখন হারিয়ে যাওয়ার কাতারে। ঢাকার সঙ্গে ময়মনসিংহের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয় ১৮৮৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। ময়মনসিংহের জমিদার মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য্য চৌধুরী এই রেলযোগাযোগ স্থাপনের জন্য তৎকালীন দুই লাখ টাকার জমি দান করেছিলেন বলে উল্লেখ রয়েছে আহমদ তৌফিক চৌধুরীর শহর ময়মনসিংহের ইতিকথা পুস্তিকায়। ১৯৩৮ সালে ময়মনসিংহ শহরে প্রথম দু’টি রিক্সা আমদানি হয়। সেই রিক্সা দেখার জন্য এবং তাতে উঠে বেড়াবার জন্য ভিড় লেগে থাকত। বিশেষ করে ছোট ছেলেমেয়েরা এবং গ্রাম থেকে আসা মানুষ শখ করে রিক্সায় চড়ে চক্কর দিত। এই রিক্সাই এখন শহরবাসীর ভোগান্তির কারণ। ওই সময়ে ছিল ঘোড়ার গাড়ি টমটম আর পালকিসহ গরু ও মোষের গাড়ি। অভিজাত পরিবারের সদস্যরা চড়ত রিক্সায়, ঘোড়ার গাড়ি টমটম ও পালকিতে। নববধূ ও বরের জন্য বিশেষ চাহিদা ছিল পালকির। নতুন বৌঝিদের নাইওর আনা নেয়ার কাজে ছই তোলা গরুর গাড়ি শাড়ি কাপড়ে মুড়ে ব্যবহারের প্রচলন ছিল গ্রামগঞ্জে। আর কৃষিকাজের মালামাল কিংবা পণ্য পরিবহনের প্রধান মাধ্যম ছিল নৌকা ও গরু-মোষের গাড়ি। গ্রামীণ যোগাযোগ অবকাঠামোসহ সবধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নের ফলে বদলে গেছে চিরচেনা এসব বাহনের। হারিয়ে গেছে পালকি ও ঘোড়ার গাড়ি টমটমের। তবে কদাচিৎ দেখা মেলে গরু ও মোষের গাড়িসহ নৌকার। অথচ এক সময় ময়মনসিংহের বিয়ে পালকি ছাড়া ভাবাই যেত না। ঘোড়ার গাড়ি টমটমের ব্যবহারে প্রকাশ পেত আভিজাত্য। ময়মনসিংহের জনপদে বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদে গরু ও মোষের গাড়ির ব্যাপক প্রচলন ছিল। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন রংতুলিতে ফুটিয়ে তুলেছিলেন সেদিনের গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার বাস্তব দৃশ্য। এঁকেছিলেন ‘সংগ্রাম’ চিত্র কর্মটি। যেখানে কাদায় দেবে যাওয়া গরুর গাড়ির চাকা ঠেলে তুলছে অদম্য মানুষ। যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নের সঙ্গে বদলে গেছে ঐতিহ্যের নানা বাহনের। সেসবের স্থলে জায়গা করে নিয়েছে যন্ত্রচালিত নসিমন-করিমন-ভটভটি নামের বাহারি বাহন। শহর কি গ্রাম সবখানেই ছেয়ে গেছে এসব যানবাহনে। যাত্রী পরিবহন থেকে শুরু করে মালামাল বহনেও ব্যবহার হচ্ছে এসব যানের। আমদানি করা ইঞ্জিন চালিত এসব যানকে স্থানীয়ভাবে চাহিদামত রূপ দিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা কাজে। এতে করে মানুষের চাহিদা পূরণ হলেও প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ঝরে যাচ্ছে তাজা প্রাণ, বাড়ছে পরিবেশের দূষণ। তারপরও মানুষ তার চাহিদার প্রয়োজনেই এসব যানে আরোহন করে গন্তব্যে যাচ্ছে। অথচ পালকি, গরুর গাড়ি কিংবা ঘোড়ার টমটমে ছিল না কোন পরিবেশ দূষণ ও দুর্ঘটনা। Ñবাবুল হোসেন ময়মনসিংহ থেকে
×