ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবহারের জন্য ১৮০০ পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া

পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৯ জানুয়ারি ২০১৬

পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ছে

কোন আঞ্চলিক যুদ্ধে বা সন্ত্রাসী হামলায় দুর্ঘটনাবশত বা ভুল অনুমানের কারণে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহৃত হওয়ার ঝুঁকির মাত্রা ঠা-া লড়াই যুগের তুলনায় এখন বেশি এবং তা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যতম সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী উইলিয়াম পেরি এ কথা বলেন। খবর গার্ডিয়ান অনলাইনের। উত্তর কোরিয়া বুধবার পরমাণু পরীক্ষা চালানোর কয়েক ঘণ্টা আগে পেরি ওই মন্তব্য করেন। তিনি পিয়ংইয়ংয়ের আক্রমণাত্মক পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচীকে বিশ্বের জন্য ঝুঁকির অন্যতম কারণ বলে তালিকাভুক্ত করেন। তিনি ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত পেন্টাগনে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পরমাণু যুদ্ধের সম্ভাবনা কমানোর ক্ষেত্রে অর্জিত অগ্রগতি এখন ব্যর্থতার দিকে মোড় নিয়েছে। পেরি বলেন, গত তিন বছর ধরে এক নতুন বিপদ চাড়া দিয়ে উঠছে এবং সেটি হলো বড় রকমের ভুল-অনুমান বা ভ্রান্ত ভীতিভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে কোন পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা। সাইবার হামলাজনিত ঝুঁকি উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচী এবং কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনার পাশাপাশি ইউক্রেন ও সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপ এবং আকাশ ও সমুদ্রে টহল দিতে গিয়ে রাশিয়ার ক্রমশ শক্তি প্রদর্শন রুশ বাহিনীকে তাদের পশ্চিমা প্রতিপক্ষের একেবারে কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের সমর্থক গ্রুপ গ্লোবাল জিরো গত ২১ মাসে সংঘটিত ১৪৬টি এ রকম ঘটনার বিশ্লেষণ করে তাদের দুটিকে উচ্চমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ বলে অভিহিত করে। গ্রুপ ৩৩টিকে উস্কানিমূলক বলে শ্রেণী বিভাগ করে। একই সময়ে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে তিনটি উচ্চমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনাসহ ২৯টি ঘটনা ঘটেছিল বলে গ্রুপটির হিসাবে দেখানো হয়। গ্রুপটির গণনা অনুযায়ী ওই সময়ে দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধপূর্ণ দ্বীপগুলোর চারদিকে ৪০টি বিপজ্জনক সামরিক ঘটনা ঘটেছিল। তখন চীনা বাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্র বা আঞ্চলিক মিত্র দেশগুলোর মিত্রবাহিনী মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল এবং অল্পের জন্য সংঘাত এড়ানোর ঘটনাও ঘটেছিল। ওই সব ঘটনার ১০টিকে উস্কানিমূলক বলে গণ্য করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় তিনটি পরমাণু অস্ত্রসজ্জিত রাষ্ট্রের অবস্থান রয়েছে। ওই জরিপে তিনটি রাষ্ট্র ভারত, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে ৫৪টি উল্লেখযোগ্য সামরিক ঘটনা ঘটেছিল বলে গণনা করা হয়। এদের মধ্যে ২২টি ছিল কাশ্মীরে ও এর আশপাশে সংঘটিত সীমান্ত সংঘর্ষ। প্রচলিত অস্ত্রের সংখ্যার দিক দিয়ে ভারতের তুলনায় পাকিস্তান পিছিয়ে আছে। সেজন্য পাকিস্তান ভারতের কোন হামলা ঠেকাতে আগেভাগে রণক্ষেত্রেই পরমাণু বোমা প্রয়োগ করার ওপর ক্রমশ নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এরূপ অস্ত্র আক্রমণ কার্যকরভাবে ঠেকাতে সঙ্কটকালে সীমান্তে মোতায়েন করতে হবে। এগুলো প্রয়োগ করার ক্ষমতা আদৌ বা কখনও ফিল্ড কমান্ডারদের দেয়া হবে কি-না তা স্পষ্ট নয়। কাশ্মীরেরই পরমাণু যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার সবচেয়ে বেশি আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু যে অঞ্চলে রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলো জড়িত হয়ে পড়েছে, সেখানেও ক্রমশ অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে। এতে আক্রান্ত হলে বা আক্রমণ ঠেকাতে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি চাওয়ার মার্কিন ও রুশ মতবাদের অন্তর্নিহিত ঝুঁকিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ঠা-া লড়াই যুগের ২০ বছর পর কোন দেশই এর পরমাণু অস্ত্র প্রথম ব্যবহার করার সম্ভাবনা নাচক করে দেয়নি। উভয় দেশই মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যবহারের জন্য মোট ১৮০০ পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন রেখেছে। কোন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অত্যাসন্ন বলে আর্লি ওয়ার্নিং স্যাটেলাইটে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্বাসযোগ্য কি-না তা স্থির করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার হাতে ৩০ মিনিটেরও কম সময় থাকবে। তার রুশ প্রতিপক্ষ ভøাদিমির পুতিনের সিদ্ধান্ত নিতে এর অধের্কেরও কম সময় থাকবে। কারণ রাশিয়ার বর্তমানে কোন কার্যকর আর্লি ওয়ার্কিং স্যাটেলাইট নেই।
×