ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ও বন্ধু আমার!

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৯ জানুয়ারি ২০১৬

ও বন্ধু আমার!

স্কুল-কলেজ জীবনে আজকাল বন্ধুত্ব করা, বন্ধুর সঙ্গে ঘোরাফেরা, বন্ধুর বাড়ি যাওয়া নিরাপদ তো নয়-ই বরং সর্বনাশ ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। প্রায়ই ঘটছে- বন্ধু বন্ধুকে খুন করছে। অল্প বয়সী ছেলেদের মধ্যে এর বিস্তৃতিটা সবচেয়ে বেশি। মেমোরি কার্ড, মোবাইল, ফেসবুক, ল্যাপটপ, টাকা-পয়সা ইত্যাদি নিয়ে বন্ধু কর্তৃক বন্ধু খুন হচ্ছে। আসলে আজ আমরা কোন্ জমানায় এলামÑ এ যুগকে কী বলব, বন্ধু কর্তৃক বন্ধুর সর্বনাশ বা খুনোখুনি হওয়ার যুগ? এখন কল্পনা হলেও সত্য, চেনা নেই জানা নেই ১৯৭২-৭৩ সালে লঞ্চ-স্টিমারে উঠে অচেনা-অজানা ছেলের সঙ্গে পরিচয় হতেই ক্ষণিক পরে বন্ধুত্ব হওয়া। অতঃপর বন্ধুর গাঁয়ের বাড়িতে বেড়ানো, পাঁচ থেকে সাত দিন ধরে থাকা, পোলাও-কোরমা, মাছ-মাংস, দুধ-ডিম খাওয়া। গাঁয়ের হাটে ঘুরে বেড়ানো- কত না অচেনার সঙ্গে পরিচয়, অতঃপর আন্তরিকতা। এটা-ওটা খাইয়ে অজ্ঞান করে সবকিছু লুটপাট করে চম্পট করার দিন তো তখন ছিল না। আজ অজানা- অচেনা লোকের সঙ্গে পরিচয় হওয়া মানেই এটা-ওটা খাইয়ে সবকিছু নিয়ে চম্পট দেয়ার ঘটনা হরহামেশা ঘটছে। বন্ধুত্ব হলেই তো স্বার্থের জন্য দু’দিন বাদেই বন্ধু বন্ধুকে খুন করে ফেলছে। এও মনে আছে, পত্রমিতালী অর্থাৎ চিঠিপত্র লিখতে লিখতে বন্ধুত্ব, তারপর অচেনা-অজানা বন্ধুর নিমন্ত্রণে ছুটে গিয়েছি সুদূর সুনামগঞ্জ, দিনাজপুর, বগুড়া, জয়পুরহাট, সিলেট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, পাবনা, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম আরও কত না জায়গায়। ১৯৬৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ছিল ১০ হাজার পত্রমিতা। ওদের অনেকের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠতা, কতইনা বন্ধুত্বÑ এরা কেউ তো আমাকে খুন করল না। এও শুনিনি, সেই যুগের কেউ তো খুনও হয়নি বন্ধু কর্তৃক। তখন তো কেউ-ই বন্ধুকে খুন করা, বন্ধুর সর্বনাশ করার কথা ভুলেও কখনও ভাবতে পারেনি। বরং বন্ধু যেন বন্ধুকে বুকে আগলে রেখে মনের আনন্দে গাইতোÑ ‘তুমি আর আমি দু’জনাতে রচি গান। এ গান দোলায় সারা নিখিলের প্রাণ।’ বন্ধুর ডাকে পাহাড়িয়া রাঙ্গামাটিতে বেড়াতে গিয়ে (১৯৭২ সালে) মনের কোণে উঁকি দিয়েছিল অনিমা দাশগুপ্তার গাওয়াÑ ‘এই রাঙ্গামাটির দেশে এই গাঁয়ের পথের ধারে আমার মনের মানুষ এলো কী তাই আজ মন ভোলাতে...’ গানের এই কথাগুলো। আমাদের যুগে বন্ধুত্ব এমনই নিবিড় ছিল যে, বন্ধু বিদায় নেয়ার ক্ষণে হৃদয়ে তোলপাড় খেত বলেইÑ ‘দূর কোন পরবাসে তুমি চলে যাইবারে, বন্ধু কবে আইবারে’ গানের এই কথাগুলো। শচীন দেব বর্মণের গাওয়া এই গান যখন এই ৬৩ বছর বয়সেও শুনি তখন মনে পড়ে কত না বন্ধু-বান্ধবীর কথা। একদা এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে দুষ্টুমির ছলে এও বলতাম গানের ভাষায়Ñ ‘ও বন্ধু রঙ্গিলা রঙ্গিলারে... তুমি হও চান্দরে বন্ধু আমি গাঙের পানি, জোয়ারে ভাটাতে হবে নিতুই জানাজানিরে বন্ধু নিতুই জানাজানি...।’ বন্ধু-বন্ধু কত মিল, কত ভালবাসা ছিল সেই অতীত যুগে। নদীতে খালে-বিলে নাও ভাসিয়ে দূরে বহু দূরে চলে যেতাম কোন এক নির্জন প্রান্তরে। কখনওবা বন্ধু না এলে গুন গুন করে কেউবা গাইতÑ ‘ভাসিয়ে দিলেম মালা... তুমি যদি আসিবে না এ মালা নিবে না গলে...।’ আহা কতই না মধুময় ছিল বন্ধুত্বের দিনগুলো। বন্ধু-বন্ধু মিলেÑ কানন দেবী, সুরাইয়া, নিন্মি, সুচিত্রা সেনের ছবি দেখা। গভীর রাতে হাতে হাত রেখেÑ অজানা ডাক এলো ভাবনার বনছায়ে ওই শুনি বাণী তার দক্ষিণ বায়ে! গাইতে গাইতে নিজ নিজ ঘরে ফেরা। কখনওবা একত্রে ঘুমিয়ে পড়া। আজ এমনটি কি আর ভাবা যায়? ইস্্ সেদিন ছিল বন্ধুর প্রতি বন্ধুর কত দরদ, কত মায়া-মমতা। ‘বন্ধুরে তুমি বিহনে বন্ধু মনোব্যথা কাহারে জানাই’Ñ ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের গাওয়া এই গান যখন শুনতাম তখন বন্ধুর জন্য মন পুড়ত, বিপদে বন্ধুর পাশে দাঁড়াতাম। মায়া-মমতা জড়ানো দরদী গান এখন আর হয় না বলেই এ জমানার উঠতি বয়সীরা কেমন জানি পাষাণ হতে চলেছে। আহা সেই দিন কি আর ফিরবেÑ বন্ধু বন্ধু ছিল কত না মিলÑ মোহাব্বত। সেকালের বন্ধুত্ব যেন ছিলা ‘সাগরের বুকে মোরা যে ঢেউ এর সাথী পাগল হাওয়ায় আমরা দু’জনে মাতি...’ এই গানেরই কথার প্রতিচ্ছবি। অতীত ছিল বন্ধুত্বের স্বর্ণযুগÑ সেই যুগ, সেই মায়া জড়ানো দিনগুলো আর কোনদিন ফিরবে না...। ফিরবে না বলেই তো প্রায়ই ঘটছে বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন হওয়ার ঘটনা। সম্প্রতি পত্রিকার পাতায় আবারও দেখলাম, ‘জৈন্তাপুরে তিন বন্ধু মিলে খুন করল স্কুলছাত্র পুলককে।’ কত আর শুনতে হবে বন্ধুদের হাতে বন্ধু খুন হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা। মায়া জড়ানো বন্ধুর আজ বড়ই অভাব বলেই তো এমনটি ঘটছে একের পর এক। এই যদি হয় এই যুগে বন্ধুত্বের নমুনার বাস্তবচিত্র তাহলে অভিভাবকরা কেনই বা হচ্ছেন না কঠোর আর হচ্ছেন না সতর্ক? বিশেষ নজর রাখছেনই না কেন প্রিয় সন্তানটির ওপর। খুনাখুনীর এই বর্বরতায় যুগে ১৮ বছর বয়সের আগে কিসের বন্ধুত্ব, কিসের ফেসবুক, কিসের মোবাইল-মেমোরি কার্ড ওদের হাতে দেয়া? অভিভাবকরা কি দেখেও দেখেন না, প্রিয় সন্তানটি মোবাইল হাতে নিয়ে টিপছে, কি-ইবা দেখছে মেবাইলে? সবই যে যৌন বিকৃতিতে ছড়াছড়ি...। এ-ও কি জানেন না, এ-ও বোঝেন না ১৮ বছর বয়সের নিচের ছেলেমেয়েদের বাবা-মায়েরা? চোখ-কান খোলা রাখলে দেখা মিলবেই যে ফেসবুক চালাতে চালাতে প্রিয় সন্তানটি ১৮ বছর বয়সের আগে নগ্নতার কোন্ পর্যায়ে চলে গেছে। এ যুগে ১৮ বয়সের নিচের ছেলেমেয়েরা বন্ধুত্বে জড়িয়ে পড়া মানেই নিজেকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া। প্রিয় সন্তানটিকে আগলে না রাখলে দিন চলে গেলে সবই যে হারাতে হয় অভিভাবকদের। আজ যার সন্তান বন্ধুর দ্বারা খুন হচ্ছে- তারাই বোঝেন তাদের মর্মব্যথা। আর কেউ কি বুঝবেনÑ বুঝবেন না। বুঝবেন না বলেই তো প্রিয় সন্তানটি এক সময় বন্ধু দ্বারা খুন হচ্ছে। তাই এখনই উপলব্ধি করতে হবেÑ এ কালের বন্ধুত্ব বড়ই ভয়ঙ্কর। এ কথা সবাইকে গুরুত্ব সহকারে ভাবতে যে হবেই। নচেৎ দুর্ঘটনা ঘটার পর দু’চোখের জল মুছলে কি আর প্রিয় সন্তানটিকে ফিরে পওয়া যায়? ‘এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম প্রেম মেলে না/ শুধু সুখ চলে যায় এমনি মায়ার ছলনায়...’ শুনতে শুনতে শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়বেন বৈকি! বলুন, এ মনোব্যথা কেউ তো বুঝবেন না, যার যায় সেই যে বোঝে। লিয়াকত হোসেন খোকন রূপনগর, ঢাকা ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগে বৈষম্য কেন? সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে প্রায় প্রতি বছরই ইসলাম ধর্মের শিক্ষক নিয়োগ করা হলেও বিগত ২৫-২৬ বছর ধরে হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। পূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষকরা পর্যায়ক্রমে অবসরে যাওয়ায় বর্তমানে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়গুলো হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষকশূন্য হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে হিন্দু ধর্মের কোন ক্লাস হয় না। এর ফলে হিন্দু ছাত্রছাত্রীরা তাদের সাংবিধানিক অধিকার হারাচ্ছে। পঁচাত্তরপরবর্তী সরকারগুলোর সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা ভবনে নিয়োগপ্রাপ্ত আমলারা ছিলেন স্বাধীনতার আদর্শ বিবর্জিত ও শাসক শ্রেণী কর্তৃক অবৈধ সুবিধাপ্রাপ্ত। তারা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়গুলোকে পর্যায়ক্রমে মাদ্রাসায় রূপান্তর করার নীল নক্সা অনুযায়ী ১৯৯১ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছরই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইসলাম ধর্মের শিক্ষকের নিয়োগদান শুরু করে এবং সুকৌশলে হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষকের নিয়োগ বন্ধ করে দেয়। প্রতিবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়ার আগে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়গুলো হতে নির্ধারিত ছকে শূন্যপদের সংখ্যা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু ওই নির্ধারিত ছকে সব বিষয়ের শিক্ষকের কথা উল্লেখ করা হলেও হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষকের কথা উল্লেখ করা হয় না। প্রধান শিক্ষকদের মৌখিকভাবে জানিয়ে দেয়া হয় যে, হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষকের চাহিদা দেয়া যাবে না। কারণ, হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগদানে অনিচ্ছুক। ১৯৯৭ সালে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্রণব কুমার দেব সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করেন। সে সময়ের আওয়ামী লীগ সরকার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা ভবনের আমলাদের নির্দেশ দেয়। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা ভবনে কর্মরত পূর্ববর্তী সরকারের সুবিধাভোগী আমলারা সুকৌশলে সরকারের সে নির্দেশ ধামাচাপা দেয়। এমতাবস্থায়, ৩১৭টি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে (ডাবল শিফটসহ) ৪৫০ জন হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগদান করে হিন্দু ছাত্রছাত্রীদের সাংবিধানিক অধিকার পুনর্প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল মহাজোট সরকারের সদয় সৃষ্টি আকর্ষণ করছি। শংকরী রানী দে তরফদার মশিউর নগর, ময়মনসিংহ
×