ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

স্বস্তিবোধ হলেও ভরসা নেই

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৯ জানুয়ারি ২০১৬

স্বস্তিবোধ হলেও ভরসা নেই

৫ জানুয়ারি ছিল বর্তমান পার্লামেন্টের নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি। এই পার্লামেন্ট দ্বিতীয় বছর পার করে তৃতীয় বর্ষে পা রাখল। বিভিন্ন কারণে দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৫ জানুয়ারি ২০১৪ এবং এতে বিএনপি অংশ না নিলেও নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে দেশব্যাপী হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও, গাছ-রাস্তা কেটে যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং নির্বাচনের আগের দিন থেকে ৫ শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় জ্বালিয়ে দেয় ও হিন্দুদের গৃহত্যাগে বাধ্য করে, এমনকি একজন প্রিসাইডিং অফিসার হত্যা করেও নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। যথারীতি নির্বাচন হয়ে যায় এবং আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন মহাজোট বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ ও রাসেল স্কোয়ারে সমাবেশের মাধ্যমে ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ হিসেবে উদযাপন করেছে। পক্ষান্তরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন দক্ষিণপন্থী ২০ দলীয় জোট নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করেছে। আওয়ামী লীগের দুটি সমাবেশ থেকে জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পেট্রোলবোমা-সন্ত্রাস ও মানুষ হত্যার পথ ছেড়ে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথে ফিরে আসতে আহ্বান জানানো হয়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘সময়মতো শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তখন মানুষ হত্যার প্রয়োজন পড়বে না।’ ওদিকে জোটনেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। তিনি নির্যাতন বন্ধ করে অবিলম্বে সংলাপের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন (মধ্যবর্তী নির্বাচন) প্রদানের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হতে হবে।’ দুই দিক থেকেই শান্তির বারি বর্ষিত হলো। এতে নাগরিকদের স্বস্তি পাওয়ার কথা। পেয়েছেন হয়ত। আপাতদৃষ্টিতে তাই মনে হবে। আগামী দিনগুলো কেবল শান্তির পথেই এগিয়ে চলবে। খালেদা জিয়া বাড়ি ছেড়ে অফিসে থাকবার এবং স্বেচ্ছা গৃহবন্দী হয়ে আর ভীতিকর কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন না। তার ভারাক্রান্ত সেক্রেটারি জেনারেলকেও কাঁথা-বালিশ নিয়ে প্রেসক্লাবে রাত যাপনের জন্য পাঠাবেন না এবং সাংবাদিকদেরও প্রয়োজন পড়বে না তাকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য আন্দোলন করার। এ সবই স্বস্তির কথা। বেগম জিয়া এরই মধ্যে দীর্ঘ আগুন সন্ত্রাসের পথ পরিহারপূর্বক পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরিবেশটাকেই পাল্টে দিয়েছেন বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়। এবার তার সমাবেশের মঞ্চে ব্যানারধারী জামায়াতকে দেখা যায়নি এটি আরও স্বস্তির কথা। মনে হবে রাজনৈতিক পরিবেশটাই বুঝি পাল্টে গেল। কিন্তু না, এমন এক ব্যক্তিকে সমাবেশে সভাপতিত্ব করতে দিলেন যে, মানুষের ভরসার জায়গাটা আর থাকল না। সভাপতিত্ব করালেন তার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে দিয়ে, যে রায়বাবু মাত্র ক’দিন আগেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি অবমাননাকর উক্তি করে ‘বেয়াদব’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। এখানেই বেগম জিয়া মানুষের ভরসার জায়গাটা নষ্ট করেছেন। মনে হয়েছে বেগম জিয়া তার বিকৃত রুচি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। অথচ তার দলেই রয়েছে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. ওসমান ফারুকরা। তাদের কাউকে দিয়ে সভাপতিত্ব করাতে পারতেন। তাছাড়া কেনইবা নিজে সভাপতিত্ব না করে গয়েশ্বরের মতো বিকৃত মানসিকতার একজনকে দিয়ে সভাপতিত্ব করালেন। এমনি নানা প্রশ্ন নাগরিকদের মনে। তবে কি বেগম জিয়া লন্ডন থেকে সবক নিয়ে দেশে ফিরে যেভাবে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধে জাতির আত্মত্যাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করে পাকিস্তানী আইএসআই’র এজেন্ডা বাস্তবায়নের যে পথ ধরেছেন, গয়েশ্বরের সভাপতিত্ব তারই ধারাবাহিকতা নয়ত? এমনি নানা প্রশ্ন। জামায়াত-শিবির মঞ্চে দেখা যায়নি সত্য, তবে দাড়ি-গোপ ছেঁটে প্যান্ট-শার্ট পরে ছদ্মবেশে সমাবেশে যে ছিল না তার কি নিশ্চয়তা আছে? হয়ত নেই, তবু নাগরিকদের ভরসার জায়গাটা ধাক্কা তো খেল। নইলে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বেগম জিয়াইবা কেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে কটাক্ষ করবেন? যেমন করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ নিয়ে কটাক্ষ করলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। অবশ্য খালেদা জিয়ার জন্য এটি নতুন কোন ব্যাপার নয়। তিনি কোনদিনই মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে বাঙালীর আত্মত্যাগকে সম্মান দেখাননি। কারণ তিনি মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি। একাত্তরের ৯ মাস ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানী হানাদার মিলিটারির আশ্রয়ে আয়েশী জীবন কাটিয়েছেন। কাজেই মুক্তিযুদ্ধ তার কাছে বিরক্তির ব্যাপার। নইলে আলবদর কমান্ডার মতিউর রহমান নিজামী (মৃত্যুদ-প্রাপ্ত) ও আলী আহসান মুজাহিদের (মৃত্যুদ- কার্যকর) মতো কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানাতেন না বা তাদের গাড়ি-বাড়িতে শহীদের রক্তরঞ্চিত পতাকা তুলে দিতে পারতেন না। তাও তিনি করেছেন। অবশ্য নাগরিক হিসেবে তার কাছ থেকে এরচেয়ে বেশি কিছু কী আশা করা যাবে? যাবে না। কারণ আমরা দেখেছি কতখানি বিকৃত মানসিকতার হলে জাতির পিতার শাহাদাৎ দিবসে কেক কেটে নিজের ‘ভুয়া’ জন্মদিন উদযাপন করছেন। বেগম জিয়া তাও করে চলেছেন প্রতিবছর। সুস্থ মানুষের অনুরোধ, সমালোচনা কোন কিছুই তাকে বিরত করতে পারছে না। তবুও যদি ১৫ আগস্ট তার সত্যিকার জন্মদিন হতো? তার কয়টি যে জন্মদিন আছে সে এক অবাক করা ব্যাপার। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনদিন শোনা যায়নি ১৫ আগস্ট তার জন্মদিন। তার মায়ের দেয়া তথ্য বা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি অথবা ম্যাট্রিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন (যাতে নাকি ৬ বিষয়েই ফেল) কিংবা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময়কার জীবনবৃত্তান্ত কোথাও তার জন্মদিন ১৫ আগস্ট নয়। একেক জায়গা একেকটা। ১৫ আগস্ট তার বানানো জন্মদিন, স্রেফ জাতির পিতার প্রতি অসম্মান জানানোর জন্যই এই দিন তিনি কেক কাটেন। সমস্ত পৃথিবী যেখানে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তাদের কাছে বঙ্গবন্ধু মুক্তিকামী মানুষের আন্দোলনে বিপ্লবী নেতা, যাকে প্রধানত লেনিন, মাও সেতুং, হো চি মিন, ড. আলেন্দে, বুমেদিন, মহাত্মা গান্ধী প্রমুখের সঙ্গে তুলনা করা হয়। অথচ খালেদা জিয়ার বুক কাঁপে না বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কটাক্ষ করতে। খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু নাকি স্বাধীনতা চাননি।’ প্রশ্ন করি তবে কে চেয়েছে স্বাধীনতা? বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের আন্দোলন, কারাভোগ, গোপালগঞ্জ থেকে কলকাতা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী লাভ, কলকাতা থেকে ঢাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি, রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলন, কারাভোগ, ’৫৪-এর নির্বাচন, ’৫৮-এর আইয়ুবের মার্শাল ল’ বিরোধী আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফিরে আসা, ’৭০-এর নির্বাচন; ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, একাত্তরের মার্চ মাসব্যাপী নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন, গোটা বাংলাদেশ চলেছে তখন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে; ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আক্রমণ শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রদান, যা তৎকালীন ইপিআর (বর্তমান বিজিবি)-এর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে চট্টগ্রামে জহুর আহমদ চৌধুরীর কাছে প্রেরণ ও দেশব্যাপী প্রচার এবং যা চাঁদপুরে আমার বাড়িতে বিএলএফ লিডার মমিন খানের সৌজন্যে সাইক্লোস্টাইল কপি পাই ২৬ মার্চ বেলা আড়াইটার দিকেÑ এই সব কে করেছিল খালেদা জবাব দেবেন কি? ২৭ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তার স্বামী জিয়া ঙহ নবযধষভ ড়ভ ড়ঁৎ মৎবধঃ ষবধফবৎ ঝযবরশয গঁলরনঁৎ জধযসধহ বলে যে ঘোষণা পাঠ করেছিলেন চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আবদুল হান্নান, জহুর আহমেদ চৌধুরীর নির্দেশে তা খালেদা জিয়া গোপন করবেন কি করে? প্রথমে মিলিটারি জিয়া ও পরে আলবদর নিজামী-মুজাহিদদের নিয়ে হাফ মিলিটারি খালেদা বহু ঐতিহাসিক দলিল নষ্ট করেছেন জানি। কাক যেমন বাড়তি খাবার লুকায় চোখ বন্ধ করে, ভাবে কেউ দেখল না, তেমনি জিয়া খালেদারাও চোখ বন্ধ করে বাংলাদেশ থেকে স্বাধীনতার অনেক দলিলপত্র নষ্ট করেছেন। কিন্তু বহির্বিশ্বের আরকাইভ-লাইব্রেরি বা ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে বিনষ্ট করতে তো পারেননি, পারবেনও না। জিয়ার মার্শাল ল’ যেমন বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল তেমনি খালেদার হাতও বাংলাদেশের বাইরে যেতে পারেনি। তারেকের হাতও যেতে পারবে না। আমাদের দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর বিপ্লবী নেতৃত্ব ছিল দুনিয়া কাঁপানো ও বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাছে মডেল এবং যার তাবত ডকুমেন্ট বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে আছে, সেখানে জিয়া, খালেদা বা পুত্র তারেক (সবই লেখাপড়ায় প্রথম বা দ্বিতীয় পাঠ) তাদের হাত যাবে কি করে? এই সাধারণ কথাটাও তাদের মাথায় ঢোকে না বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলার আগে। অবশ্য ঢোকে না এ জন্য যে, সব তো প্রথম বা দ্বিতীয় পাঠ। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে প্রথম বেয়াদবিটি করেছে জিয়া-খালেদার গুণধর পুত্র তারেক, যে কিনা দুর্নীতির মামলায় ফেরারি হয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ লন্ডনে আত্মগোপন করে আছে। দেশে থাকলে গ্রেফতার হতো, মিলিটারি (মইন উ আহমেদ) পিটিয়ে কোমর ভেঙ্গে দিয়েছে বলে চিকিৎসার নাম করে প্যারোলে লন্ডনে গিয়ে সেই যে পালাল আর দেশে ফিরলেন না, সেই অর্বাচীন প্রথমে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলেছে, বঙ্গবন্ধু নাকি স্বাধীনতা চাননি। ভেতরের খবর হচ্ছে লন্ডনে পালিয়ে থাকা জামায়াত-শিবির, রাজাকার-আলবদর গোষ্ঠী তাকে মিথ্যা কথাগুলো সাজিয়ে হল ভাড়া করে দেয় আর সে বলতে থাকে। তবে সাম্প্রতিককালে কমেছে বলে মনে হয়। এখন আর শোনা যায় না। তার মা দুই মাস লন্ডন বেড়িয়ে এসে এখন বলতে শুরু করেছেন। এ যে চরম মূর্খতা তা প্রমাণ হলো তার কথা কেউ গ্রহণ করেনি, আওয়ামী বিরোধীরাও নয়। আসলে সাফারি স্যুট বা শিফন শাড়ি বা স্যুট-টাই দিয়ে মূর্খতা ঢাকা যায় না তা বোঝার মতো ঘিলুও সম্ভবত তাদের কম আছে। খালেদা জিয়া আরেকটি মিথ্যা বলার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন শহীদের সংখ্যা নিয়ে। অর্থাৎ শহীদের সংখ্যা, যা প্রতিষ্ঠিত সত্য, তাকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং বিতর্কিত করার হীন মানসিকতা নিয়ে এমন মিথ্যা প্রচার করার চেষ্টা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হয়ে পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন এবং দেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পর ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরেন। তার আগেই দেশে-বিদেশে মিডিয়া এবং মানবাধিকার কর্মীরা শহীদের সংখ্যা ৩০ লাখ এবং ধর্ষিত নারীর সংখ্যা পৌনে তিন লাখ বলেছেন। এটাই প্রকৃত তথ্য। অবশ্য ধর্ষিত নারী এবং ধর্ষণের পর মৃত্যুবরণকারী নারীর সংখ্যা ৪ লাখ থেকে প্রায় ৬ লাখ মনে করা হচ্ছে এখন। অনেকের গবেষণায় তাই বেরিয়ে এসেছে। খালেদার আগে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার প্রয়াস চালিয়েছিল ড. কামাল হোসেনের জামাতা ডেভিড বার্গম্যান (তার নাম হওয়া উচিত ছিল ডেভিল বার্গম্যান)। বেশি সুবিধা করতে পারেনি। চারদিক থেকে ধাওয়া খেয়ে এখন ঘরে বসে আছে। এক সময় আমরা শুনতাম বঙ্গবন্ধু ইংরেজী জানতেন না বলে ৩ যঁহফৎবফ ঃযড়ঁংধহফ-কে (৩ লাখ) ৩ সরষষরড়হ বা ৩০ লাখ বলেছেন। ওরা সেই কাকের মতোই নিজেরা ইংরেজী জানে না, তাই অন্যরাও জানে না। তাদের জ্ঞাতার্থে বলে দিচ্ছি বঙ্গবন্ধু যখন লেখাপড়া করেছেন- প্রথমে গোপালগঞ্জ মিশন হাইস্কুল, তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমান মওলানা আজাদ কলেজ) থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি এর সব পর্যায়েই পড়া, লেকচার শোনা বা পরীক্ষা দেয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল ইংরেজী। কোন পর্যায়েই বাংলায় এ্যাপিয়ার হওয়ার কোন সুযোগ ছিল না। বঙ্গবন্ধু কতখানি মেধাবী ছিলেন বা কোন্ পর্যায়ের ইংরেজী জানতেন তাঁর পাকিস্তান ন্যাশনাল এ্যাসেম্বলির বক্তৃতা পড়লে বোঝা যাবে। সব বক্তৃতাই ছিল ইংরেজীতে, যা ঝযবরশয গঁলরন রহ চধশরংঃধহ ঢ়ধৎষরধসবহঃ (১৯৫৫-৫৮) ঢ়ৎরহঃবফ নু ঝযধযৎরড়ৎ ওয়নধষ অথবা ঝঢ়ববপযবং ড়ভ ঝযবরশয গঁলরন নু তরধঁৎ জধযসধহ (এই জিয়াউর রহমান শিক্ষিত, মিলিটারি জিয়ার মতো হাফ শিক্ষিত নয়) গ্রন্থ দুটিতে রয়েছে। অবশ্য তা পাঠ করার মতো শিক্ষা জিয়া পরিবারের নেই জানি। আছে কেবল মিথ্য বলা। একটি প্রশ্ন করতে পারি, খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন ২৬ মার্চ ১৬ ডিসেম্বর যে বিবৃতি দেন তাতেও তিনি শহীদের সংখ্যা ৩০ লাখ বলেই উল্লেখ করেছিলেন। এখন নিজেই নিজেকে মিথ্যাবাদী বানালেন। তাছাড়া বেগম জিয়া কথাগুলো বললেন যখন পাকিস্তান বিবৃতি দিয়ে বলেছে তাদের (বর্বর) সেনারা ’৭১-এ বাংলাদেশে কোন গণহত্যা বা নারী নির্যাতন এমনি কোন অপরাধ বা ডধৎ পৎরসব করেনি। এমনকি যখন এক আলবদরের ফাঁসি হচ্ছিল তখন তারা তাদের পার্লামেন্টে নিন্দা প্রস্তাব পাস করেছে। তারপরও কি সন্দেহ আছে যে, খালেদা পাকিস্তানের এজেন্ট নয়? এই ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আমরা বিশ্বাস করতে চাই তার আজকের শান্তির বাণী অতীতের ভুল-ভ্রান্তির সংশোধন। এটি স্বস্তির ব্যাপার। কিন্তু ওই যে একটা কথা আছে ‘লিটল লার্নিং ইজ ডেনজারাস’ তাই ভরসা পাই না। ঢাকা ॥ ৭ জানুয়ারি ২০১৬ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব
×