ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মানবসম্পদ উন্নয়নেরমাধ্যমে সমুদ্রসম্পদ আহরণের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৯ জানুয়ারি ২০১৬

মানবসম্পদ উন্নয়নেরমাধ্যমে সমুদ্রসম্পদ আহরণের যোগ্যতা অর্জন করতে  হবে ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সমুদ্র সীমানার বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সাগরের তেল, গ্যাস, মৎস্যসহ সকল সম্পদের সঠিক আহরণ ও ব্যবহার প্রয়োজন। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির কারণে দেশের উপকূলীয় ও সামুদ্রিক পরিবেশ বহুমুখী হুমকির মুখে রয়েছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের উপকূল ও সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় একটি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। করতে হবে কর্মপরিকল্পনাও। শুধু তাই নয়, উপকূলীয় ও সামুদ্রিক পরিবেশের সমস্যাবলীকে একটি সামগ্রিক ও পারস্পরিক সম্পর্কের আলোকে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। শুক্রবার রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশের উপকূল ও সামুদ্রিক পরিবেশ’ বিষয়ক বিশেষ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে। অর্থমন্ত্রী বলেন, উপকূল ও সমুদ্র অঞ্চল সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত হয়েছে। এ নিয়ে এখন আর কোন ঝগড়াঝাটি নেই। কিন্তু এই উপকূল ও সমুদ্রসম্পদ আহরণ এবং ব্যবহার করার প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান এখনও আমাদের নেই। প্রয়োজনীয় মানবসম্পদও নেই। এক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি। তিনি বলেন, সমুদ্রসম্পদ আহরণে আমরা এখনও উপযুক্ত নই। মানবসম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের এই যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এজন্য পরিকল্পিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। এ বিষয়ে থাইল্যান্ড ও মালদ্বীপের শিক্ষাকে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিবেশ আন্দোলনে যারা জড়িত তাদের সকলের চুল সাদা হয়ে গেছে। এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে কালো চুলের মানুষ বাড়াতে হবে। বাপার সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সভাপতিত্বে সূচনা বক্তব্য রাখেন বেনের বৈশি^ক সমন্বয়কারী ড. নজরুল ইসলাম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের সদস্য সচিব ও বাপার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোঃ আব্দুল মতিন। উদ্বোধনের পর সকাল ১০টায় সম্মেলনের প্রথম প্ল্যানারিতে অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম বিষয়ক ইউনিটের সচিব রিয়ার এ্যাডমিরাল (অব) মোঃ খোরশেদ আলম বিএন উপস্থিত ছিলেন। দিনের দ্বিতীয় প্ল্যানারিতে বিকেল ৫টায় এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত আবদুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে উপকূল অঞ্চলের ১০০ প্রতিনিধিসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও বিজ্ঞানী অংশ নিচ্ছেন। এ সম্মেলনে নির্ধারিত বিষয়ে ৮২টি প্রবন্ধ বা পত্র উপস্থাপন ও এসবের ওপর আলোচনা করা হবে। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, দেশের এক-চতুর্থাংশ জায়গাজুড়ে আমাদের সমুদ্র উপকূল বিস্তৃত। এখানে দেশের এক-পঞ্চমাংশ জনগণ বসবাস করে। অথচ এ অঞ্চল আজও অবহেলিত। এখানে যথেষ্ট উন্নয়ন দরকার। তবে এই উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ও পরিবেশের ছাড় দেয়া যাবে না। তাই সুন্দরবনের ঘাড়ের ওপর কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের এক-পঞ্চমাংশ মানুষের বাসভূমি, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের অনন্য ভা-ার, অর্থনৈতিক সম্ভাবনার অফুরন্ত উৎস দীর্ঘ সমুদ্র উপকূল আজ মানুষের তৈরি নানান নিগ্রহ ও অভিঘাতে ক্লিষ্ট। আমাদের গৌরব ও সৌন্দর্যের অন্যতম স্থান দেশের উপকূল অঞ্চল। একদিকে সুন্দরবন, অন্য প্রান্তে বিশ্বের অন্যতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। অথচ বিভিন্নভাবে আমাদের এই গৌরবের স্থানগুলোকে ধ্বংস করার চক্রান্ত চলছে প্রতিনিয়ত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্রমাগতভাবে বেড়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধে বিপুলভাবে কার্যকর সুন্দরবনকে অনিন্দ্যসুন্দর জীববৈচিত্র্যকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন করে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। এছাড়া উপকূলে দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ করে, অপরিকল্পিতভাবে পর্যটন এলাকাগুলো গড়ে তুলে, জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পকে বল্গাহীন বিকাশের সুযোগ দিয়ে, উপকূলের ভেতরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে, মিঠাপানির সঙ্কট ঘটিয়ে আমাদের উপকূল অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক সম্ভাবনাকেই প্রায় বিনষ্ট করার আয়োজন চলছে। তিনি বলেন, আমরা উন্নয়ন চাই, তবে পরিবেশ-প্রকৃতিকে বিনষ্ট করে নয়। পরিবেশ সংরক্ষণে অধিক গুরুত্বারোপের জন্য সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। ড. নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের উপকূল এলাকাকে মোটাদাগে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, যথা- পশ্চিমাংশ, মধ্যমাংশ ও পূর্বাংশ। পশ্চিমাংশে রয়েছে গাঙ্গেয় জোয়ারা-প্লাবনভূমি, যার দক্ষিণে সুন্দরবন। মধ্যমাংশে রয়েছে মেঘনা মোহনা আর পূর্বাঞ্চলে রয়েছে চট্টগ্রামের উপকূল। পশ্চিমাংশের জন্য মূল ইস্যু হলো সুন্দরবন রক্ষা এবং পোল্ডার সঙ্কটের নিরসন। প্রায় তিন দশক পর পোল্ডারসমূহ আজ সঙ্কটে নিপতিত। কেননা পোল্ডারের ভেতরে পানি পৌঁছাচ্ছে না, ফলে জমি অবনমিত হচ্ছে। অন্যদিকে নদী খাতে অতিরিক্ত পলি জমছে, ফলে জলকপাটগুলো খুলছে না এবং পোল্ডারসমূহের অভ্যন্তরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মেঘনা মোহনা বিষয়ে ড. নজরুল ইসলাম জমির ভাঙ্গন হ্রাস এবং নতুন জমির উত্থানের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। চট্টগ্রাম উপকূলের সমুদ্র ভাঙ্গা প্রশমিত করতে স্থানীয়ভিত্তিক করণীয় নির্ধারণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা ও তথ্যের ভিত্তিতে উপকূল ও সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় সমন্বিত প্রয়াস গ্রহণের আহ্বান জানান।
×