ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও ;###;নির্বাচন ও আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে

ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু ইসির

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৯ জানুয়ারি ২০১৬

ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু ইসির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৌরসভা নির্বাচনের পর এবার সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে নির্বাচন উপযোগী ইউনিয়ন পরিষদের তালিকা কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। আর এ তালিকা পাওয়ার পরই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। কমিশন জানিয়েছে, মার্চ শেষ থেকে নির্বাচন শুরু হলেও প্রথম পর্যায়ে উপকূলীয় এলাকায় নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। এরপর মে থেকে জুলাই পর্যন্ত কয়েক ধাপে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। স্থানীয় সরকার আইনানুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদেও পৌরসভার মতোই দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবার। তবে পৌরসভার মতো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক নির্বাচন হবে কিনা এ বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। সদস্য পদে আগের মতোই নির্দলীয়ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচনের কারণে বিদ্যমান বিধিমালা ও আচরণ বিধিতে পরিবর্তন আনতে হবে। এতদিন স্থানীয় নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হয়েছে। সরকার সম্প্রতি দলীয়ভাবে নির্বাচনের আইন পাস করেছে। এ ক্ষেত্রে আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিধিমালায়ও প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হবে। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনানুযায়ী, নির্বাচন পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে (মেয়াদ শেষের আগের ১৮০ দিন) নির্বাচন করতে হবে। আর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। নির্বাচনের পর পরিষদের প্রথম সভা থেকে পরবর্তী ৫ বছরের মেয়াদ গণনা হয়ে থাকে। জানা গেছে, ৪ হাজার ৫শ’ ৫৪টি পৌরসভার একটি তালিকায় কমিশনের কাছে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ পাঠানো হয়েছে। এ তালিকায় ইউনিয়ন পরিষদগুলোর মেয়াদ শেষ হবে মার্চ থেকে জুলাই মাসের মধ্যেই। কমিশন জানিয়েছে, যেহেতু আইনানুযায়ী মেয়াদ শেষের আগেই এসব নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে তাই প্রাথমিক প্রস্তুতি এখনই শুরু করতে হবে। কত ধাপে নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে তা শীঘ্রই কমিশনের বৈঠকে তার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে তারা জানান, প্রথম ধাপের নির্বাচন মার্চের শেষে করতে হলে সে ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তফসিল ঘোষণা করতে চায় কমিশন। কারণ পৌরসভায় সংক্ষিপ্ত সময় নিয়ে নির্বাচন করা হলেও ইউনিয়ন পরিষদে পর্যাপ্ত সময় হাতে রেখেই নির্বাচন পরিচালনা করতে চায় কমিশন। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে প্রার্থীদেরও পর্যাপ্ত সময় দেয়া হবে। জানা গেছে, কমপক্ষে ৪০ থেকে ৪৫ দিন হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। কমিশনের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে দেশে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা রয়েছে ৪ হাজার ৫৭১টি। সর্বশেষ ২০১১ সালে এটিএম শামসুল হুদার নির্বাচন কমিশন ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচন করে। ওই বছরের কয়েক ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করে হুদা কমিশন। এর মধ্যে ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল উপকূলীয় ২৪ উপজেলার প্রায় ৬শ’ ইউনিয়ন পরিষদে এবং ৩১ মে থেকে ৫ জুলাই দেশের বাকি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ করা হয়। কমিশন জানিয়েছে, পরিষদের মেয়াদের মধ্য থেকে নির্বাচন পরিচালনা করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। শুরুতে উপযুক্ত এলাকাগুলোর ভোট করা হতে পারে। পর্যায়ক্রমে এ নির্বাচন জুন-জুলাই পর্যন্ত চলবে। জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে বর্তমান কমিশনের অধীনে দেশে বড় কোন নির্বাচনী আয়োজন। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে। এরপর এ কমিশনের অধীনে গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশ না নেয়ায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনেকটা একপেশে নির্বাচনে পরিণত হয়। এ নির্বাচনের পরই সরাদেশে কয়েকধাপে উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা করা হয়। এছাড়া এ কমিশনের অধীনে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় সারাদেশে ২৩৪টি পৌরসভা নির্বাচন। এরপর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে এ কমিশনের কার্যক্রম। জানা গেছে, আগামী বছরের প্রথমদিকে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এ কমিশনের অধীনে হতে পারে। কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচন উপযোগী ইউনিয়ন পরিষদের তালিকা হাতে পাওয়ার পরই ইসি সচিবালয়কে নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রথমেই নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণবিধি সংশোধনের কাজ গুছিয়ে আনা হচ্ছে বলেও ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, মার্চের শেষ ভাগে উপকূলীয় ইউপিগুলোর নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছেন। পরের ধাপে মে থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে বাকিগুলোর নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতামত নিয়ে সুবিধামতো সময়ে ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মোঃ আবু হাফিজ বলেন, ইসি সচিবালয়কে ইউপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। মেয়াদ পূর্তির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কবে, কোথায় ভোট করা যাবে এ সংক্রান্ত তালিকা কমিশনের আসবে। সব কিছু বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, হালনাগাদে প্রায় ৪৪ লাখ নতুন ভোটার যোগ হচ্ছে। যা চূড়ান্ত হবে ৩১ জানুয়ারি। ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা রয়েছে। এ সময়ে কোনভাবেই সাধারণ নির্বাচন করা যাবে না। এপ্রিল মাসে শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা। আগের মতো দুই ধাপে ভোট করা হবে, নাকি আরও বেশি ধাপে করতে হবে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পরীক্ষার ফাঁকে উপযুক্ত সময় কখন পাওয়া যাবে তাও খতিয়ে দেখা হবে। শিক্ষার্থীদের যাতে কোন অসুবিধা না হয় এবং প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা পাওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে উল্লেখ করেন।
×