ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশে নিযুক্ত কূটনীতিকদের পাকিস্তানে পাঠানোর দাবি, নতুবা হাইকমিশন ঘেরাও, পণ্য বর্জন

৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম গণজাগরণ মঞ্চের

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৯ জানুয়ারি ২০১৬

৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম গণজাগরণ মঞ্চের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত কূটনীতিকদের পাকিস্তানে পাঠানোর দাবি জানিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। অন্যথায় আবারও পাকিস্তানের হাইকমিশন ঘেরাও ও দেশটির পণ্য বর্জনসহ কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করার কথা জানান মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার। শুক্রবার পাকিস্তান কর্তৃক বাংলাদেশের কূটনীতিক মৌসুমী রহমানকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সকল কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধের দাবিতে শাহবাগে গণসমাবেশ কর্মসূচী পালন করে গণজাগরণ মঞ্চ। সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ, ত্রিশ লাখ শহীদ এবং জাতির জনকের প্রশ্নে কোন আপোস চলবে না উল্লেখ করে ইমরান বলেন, বাংলাদেশের কোন রাজনীতিক যদি এসব ব্যাপারে বিভ্রান্তি তেরি করে, তাহলেও তাদের ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মানুষ এসব প্রশ্নে কোন আপোস মেনে নেবে না। সরকারকে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে তিনি বলেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরকার পাকিস্তানের কূটনীতিকদের ফেরত পাঠিয়ে উপযুক্ত জবাব না দিলে আবারও পাকিস্তান হাইকমিশন ঘেরাও এবং পাকিস্তানী পণ্য বর্জনের কর্মসূচী দেয়া হবে। এবারও যদি ২০১৩ সালের মতো আঘাত আসে, তাহলে সেই আঘাত উপেক্ষা করেই পাকিস্তানের হাইকমিশন ঘেরাও করা হবে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর যখনই কোন যুদ্ধাপরাধীর বিচারিক রায় কার্যকর হচ্ছে, তখনই পাকিস্তান নড়েচড়ে বসছে। সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের ভেতরে যারা পাকিস্তানের দোসর, যুদ্ধাপরাধীদের দোসর, তাদের অবস্থানও একই। যুদ্ধাপরাধের বিচারের সামগ্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এই চেষ্টা। সেই ধারাবাহিকতায় যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর রায় কার্যকর করার ঠিক আগের দিন ব্যর্থ রাষ্ট্র, উপমহাদেশের বিষফোঁড়া পাকিস্তান বাংলাদেশের কূটনীতিক মৌসুমী রহমানকে বহিষ্কার করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে পাকিস্তানের যে কূটনীতিক জঙ্গী অর্থায়নের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে, পাকিস্তান সেই কূটনীতিককে ভিয়েনা কনভেনশনের ইমিউনিটির সুযোগে নিজ দেশে নিয়ে গেল। বাংলাদেশ সরকার এবং পররাষ্ট্র দফতর সেই কূটনীতিকের অপরাধের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছে। অথচ মৌসুমী রহমানকে কেন পাকিস্তান বহিষ্কার করল, তার কোন রকম ব্যাখ্যা তারা দেয়নি। অথচ এই ব্যাখ্যা দেয়াটা কূটনৈতিক নিয়মের মধ্যে পড়ে। এটাই ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী আইন। তারা সেই আইনের কোন তোয়াক্কা করেনি। কূটনৈতিক সম্পর্কের তোয়াক্কাও করছে না পাকিস্তান। তিনি বলেন, পাকিস্তান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একের পর এক বিভ্রান্তিমূলক ও কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে জোর দাবি উঠেছে- পাকিস্তানের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে ততক্ষণ কোন সম্পর্ক রাখা যাবে না, যতক্ষণ তারা বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করে, যতক্ষণ তারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দেয়া বন্ধ না করে, যতক্ষণ পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের যে পাওনা রয়েছে, সেই পাওনা দিয়ে ক্ষতিপূরণ প্রদান না করে। বাংলাদেশের কূটনীতিককে বহিষ্কার পরিষ্কারভাবেই পাকিস্তানের একটি কূটনৈতিক উস্কানি এবং ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ- এমন মন্তব্য করে ইমরান বলেন, একই রকম ধৃষ্টতা তারা দেখিয়েছিল একাত্তরে, ত্রিশ লাখ মানুষকে হত্যা করে, আড়াই লাখ নারীর সম্ভ্রমহানি করে। মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে সেই ধৃষ্টতার জবাব দিয়েছেন। আবারও পাকিস্তান বাংলাদেশের আত্মমর্যাদাকে অপমান করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের এখনই পাকিস্তানের এই ধৃষ্টতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আত্মমর্যাদার প্রশ্নে শক্ত পদক্ষেপ নেয়া উচিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে, আত্মমর্যাদার প্রশ্নে কোন রকম আপোসের সুযোগ নেই। যে রাষ্ট্রই বাংলাদেশের আত্মমর্যাদা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে আঘাত করার চেষ্টা করবে, তাকে ক্ষমা করার কোন সুযোগ সরকারের নেই। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে কাদের মোল্লার রায় কার্যকরের পরও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছিল পাকিস্তান। সে দেশের আদালত থেকে শুরু করে সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনার দুঃসাহস তারা দেখিয়েছিল। তারপরও সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেনি। যে জবাব দিয়েছে, আমরা মনে করি সেটি উপযুক্ত জবাব হয়নি। তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর আমরা পাকিস্তানের হাইকমিশন ঘেরাও করেছিলাম। আজ সরকার যদি পাকিস্তানকে উপযুক্ত জবাব দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমাদের আবারও আরও কঠোর কর্মসূচী নিয়ে রাজপথে নামতে হবে। আমি সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, সরকার কঠোর অবস্থান নিতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের হাইকমিশন ঘেরাও করে সকল পাকিস্তানী কূটনীতিককে আটক করে পাকিস্তানী ফ্লাইটে করে সে দেশে ফেরত পাঠাবে।
×