ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইএসবিরোধী লড়াই একযোগে

সৌদি জোটে যোগ দিলেও সৈন্য পাঠাবে না বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৯ জানুয়ারি ২০১৬

সৌদি জোটে যোগ দিলেও সৈন্য পাঠাবে না বাংলাদেশ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ সৌদি আরবের নেতৃত্বে সন্ত্রাসবিরোধী জোটে যোগ দিলেও সেখানে কোন সৈন্য পাঠাবে না বাংলাদেশ। তবে সৌদি জোটকে বাংলাদেশ বেসামরিকভাবে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া আইএসবিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব এক যোগে কাজ করবে। রিয়াদে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে এসব আলোচনা হয়েছে। সৌদি আরবের নেতৃত্বে জোটের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত ৫ জানুয়ারি সৌদি আরব সফর করেন। সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়েরের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর মধ্যে সৌদি আরবের জোটের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তিনদিন সৌদি আরব সফর শেষে শুক্রবার ঢাকায় ফিরেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। কূটনৈতিক সূত্র, সৌদি আরবের নেতৃত্বে সন্ত্রাসবিরোধী জোটের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, রূপরেখা, কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রিয়াদে একটি জঙ্গীবাদবিরোধী সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হবে। জঙ্গীবাদ নিরসনে সদস্য দেশগুলোকে তথ্য আদান প্রদান, সহযোগিতা, অভিজ্ঞতা বিনিময় ইত্যাদি কার্যক্রম চালানো হবে। এছাড়া এই সেন্টার থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সহযোগিতাও করা হবে। এই সেন্টার কয়েকটি ধাপে কাজ করবে। একদিকে যেমন তথ্য-আদান প্রদান করবে। অভিজ্ঞতা বিনিময় করবে। আবার প্রয়োজন হলে জোটের সদস্য দেশগুলো থেকে সামরিক সহযোগিতাও নেবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সৌদি আরবকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এই জোটের বিভিন্ন ধাপে অংশগ্রহণ করবে। তবে জোটে সেনা পাঠানো সম্ভব নয়। কেননা বাংলাদেশ শুধু জাতিসংঘের নেতৃত্বে কোন জোটেই সেনা পাঠিয়ে থাকে। জাতিসংঘ ছাড়া অন্য কোন জোটে সাধারণত সেনা পাঠায় না বাংলাদেশ। জোটের বিষয়ে রিয়াদকে বাংলাদেশের অবস্থান খুব সুস্পষ্ট করা হয়েছে। এদিকে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন এই জোট কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে ইতোমধ্যেই সংশয় প্রকাশ করেছে বিভিন্ন দেশ। সৌদি আরবের ঘোষণায় সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ের রূপরেখাটি এখনও অনেক দেশের কাছেই স্পষ্ট নয়। তাই জোট নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া এই জোট গঠনের পর আইএস ইতোমধ্যেই সৌদি আরবকে হুমকি দিয়েছে। তারা এটিকে নির্বোধদের জোট হিসেবে অভিহিত করেছে। তবে আইএসের হুমকি উপেক্ষা করেই সৌদি আরব এই জোটকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সন্ত্রাসবিরোধী জোটের চেয়ে এই মুহূর্তে সৌদি আরব ইরান ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। শিয়া নেতা শেখ নিমর আল নিমরসহ ৪৭ জনের মৃত্যুদ-কে কেন্দ্র করে তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে রিয়াদ। এছাড়া সৌদি আরবকে সমর্থন জানিয়ে বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুদান ও জিবুতিও ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্নের পর রিয়াদ-তেহরানের মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে। এছাড়া ইয়েমেনে ইরান দূতাবাসে হামলার জন্যও সৌদি আরবের প্রতি অভিযোগ উঠেছে। এখন তেহরানকে সামাল দেয়ার জন্যই সৌদি আরবের সন্ত্রাসবিরোধী জোটের গতি হ্রাস পাবে। কেননা একই সঙ্গে তেহরানকে সামাল দেয়া ও আইএসবিরোধী জোট এগিয়ে নেয়া সৌদি আরবের পক্ষে কঠিন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সৌদি আরবের নেতৃত্বে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী ৩৪টি মুসলিম দেশের সন্ত্রাসবিরোধী জোটে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ এই জোট গঠনের উদ্যোক্তা। সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আলোকে অন্যান্য মুসলিম দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশ এই জোটে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সৌদি আরব ও বাংলাদেশ ছাড়াও বাহরাইন, বেনিন, শাদ, কোমোরোস, আইভরি কোস্ট, জিবুতি, মিসর, গ্যাবন, গায়ানা, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালি, মরক্কো, মৌরিতানিয়া, নাইজার, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, কাতার, সেনেগাল, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, সুদান, টোগো, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, আরব আমিরাত ও ইয়েমেন থাকছে এ জোটে। পাকিস্তান প্রথমে জোটে থাকবে না জানালেও একদিন পর জানায় তারাও এই জোটে রয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকটি মুসলিম দেশ এই জোটকে সমর্থন জানিয়েছে। জোটে অন্তর্ভুক্ত করতে এসব দেশের সঙ্গে সৌদি আরব আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান ও সিরিয়াকে এ জোটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান মুসলিম দেশের নতুন এই জোটের বিষয়ে জানিয়েছেন, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, মিসর ও আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে নতুন করে সমন্বয় ঘটাবে এই জোট। ইসলামিক উগ্রপন্থা নামক রোগের সঙ্গে লড়াই করার বিষয়ে ইসলামী বিশ্বের নজরদারি থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইসলামিক উগ্রপন্থা নামক রোগ ইসলামী বিশ্বকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বর্তমানে প্রতিটি মুসলিম দেশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তাই এসব লড়াই অভিযানে সমন্বয় ঘটানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানান, এই জোটে যোগ দেয়ার আগে এই দেশগুলোকে কিছু পদ্ধতির মধ্য দিয়ে আসতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আইএসবিরোধী জোটে ৬৫টি দেশ রয়েছে। যদিও খুব কম দেশই সক্রিয়ভাবে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছে। ইরাক ও সিরিয়ার আইএসের বিরুদ্ধে সক্রিয় সামরিক ভূমিকা নেয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রবল চাপ রয়েছে। তবে সকল দেশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটে অংশগ্রহণ করেনি। এখন সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটে অনেক দেশই যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর আগে ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠী দমনে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল বাংলাদেশ।
×