ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশী-বিদেশী সব স্টল প্যাভিলিয়নেই ক্রেতাদের ভিড়

ছুটির দিনে মানুষের ঢল, জমজমাট বাণিজ্য মেলা

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ৯ জানুয়ারি ২০১৬

ছুটির দিনে মানুষের ঢল, জমজমাট বাণিজ্য মেলা

রহিম শেখ ॥ দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ে ছুটির দিনে বেশ জমজমাট ছিল বাণিজ্য মেলা। শুক্রবার মেলায় সকালের দিকে দর্শনার্থী কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। বিকেলের দিকে মেলায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের মেলায় প্রবেশ করতে দেখা যায়। দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ভাল থাকায় মেলায় প্রচুর ক্রেতা-দর্শকদের সমাগম ঘটছে। এজন্য সন্তোষ প্রকাশ করলেন বিক্রেতারাও। জানালেন, ছুটির দিনে ভাল বিক্রির খবর। শুক্রবার সরেজমিন মেলা ঘুরে দেখা গেছে, সকালে মেলার প্রধান গেট খুলতেই ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলায় আসতে শুরু করেন। কেউ সপরিবারে, কেউ বন্ধু-বান্ধবী, স্কুল-কলেজের সহপাঠীদের নিয়ে দল বেঁধে মেলায় এসেছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে থাকে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যায় দর্শনার্থীদের জনস্রোতে মেলার মাঠে ফাঁকা জায়গা দেখা যায়নি। শুক্রবার ছুটির দিন বলেই সব স্টল-প্যাভিলিয়নে ক্রেতাদের ভিড় ছিল বেশি। এ কারণে বিকেলের দিকে মেলার আশপাশের সড়কগুলোতে যানবাহনের জটলা লেগে যায়। এদিন টিকেট কাউন্টার ও মেলার মূল প্রবেশ পথেও দেখা গেছে দীর্ঘ লাইন। এ প্রসঙ্গে মেলার ইজারাদার মীর ব্রাদার্সের স্বত্বাধীকারী মীর শহীদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, এবার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় মেলা শুরু থেকেই জমে উঠেছে। ছুটির দিনগুলোতে আশানুরূপ ক্রেতা সমাগম ঘটেছে বলে তিনি জানান। গতবার হরতাল-অবরোধে ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা এবার পুষিয়ে নেয়া সম্ভব বলে শহীদুল ইসলাম জানান। এদিকে মেলায় আসা ক্রেতাদের নিরাপত্তা দিতে আনসার, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, পুলিশ ও র‌্যাব ছিল সতর্ক অবস্থানে। এছাড়া ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়নে। মেলা প্রাঙ্গণে ওয়াচ টাওয়ার, আর্চওয়ে, হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর ও ভেহিকল সার্চ মিরর দিয়ে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে ৮০টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে। শুক্রবার মেলায় প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম গৃহস্থালির উপকরণ, ইলেকট্রনিক্স, ইমিটেশনের গয়না, প্রসাধন সামগ্রী, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রীর স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। শিশুদের খেলনার দোকানেও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। মেলায় দর্শনার্থীদের সরব পদচারণায় মুখরিত ছিল বিনোদন কেন্দ্র, ইকোপার্ক ও বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। রাজধানীর ফার্মগেট থেকে দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে মেলায় এসেছেন বেসরকারী একটি কোম্পানিতে কর্মরত আসিফুর রহমান। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ‘দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ভাল থাকায় মেলায় এসে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।’ গতবার হরতাল-অবরোধের কারণে মেলায় ছেলেদের নিয়ে আসা হয়নি। তিনি জানান, ঘরের কিছু গৃহস্থালি জিনিসপত্র ও বাচ্চাদের পোশাক কিনেছেন। তুলনামূলক দাম একটু বেশি, এর মধ্যে খাবারের দোকানগুলোতে গলাকাটা দাম রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। রাজধানীর বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা আতিকা ইসলামের সঙ্গে কথা হয় দিল্লী এ্যালুমিনিয়ামের প্যাভিলিয়নে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় দুই বান্ধবীসহ মেলায় এসেছেন। রান্না ঘরের টুকিটাকি কিছু জিনিসপত্র ও প্রসাধনী সামগ্রী কিনেছেন। আরএফএলের ইটালিয়ানো প্যাভিলিয়নে কথা হয় মিরপুর থেকে আসা নওরীন খন্দকারের সঙ্গে। তিনি জানান, ঘুরে ঘুরে প্লাস্টিক ও এ্যালুমিনিয়াম প্যাভিলিয়ন থেকে গৃহস্থালির কিছু উপকরণ কিনেছেন। তিনি জানালেন, এবারের বাণিজ্য মেলায় বিদেশী পণ্যের চেয়ে দেশীয় পণ্যেরই আধিক্য বেশি। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ওয়ালটন, রানার, মাইওয়ান, যমুনা, আরএফএলসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান মেলায় তাদের নিজেস্ব পণ্য প্রদর্শন করছে। শুক্রবার ক্রেতা-দর্শনার্থীদের বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে দেশীয় পণ্যের প্যাভিলিয়ন ও স্টলগুলোতে। টেলিভিশন, ফ্রিজ, এয়ারকুলার, মোটরসাইকেল, মোবাইল, হোম ও কিচেন এ্যাপ্লায়েন্স পণ্য দেখতে মেলায় ওয়ালটন প্যাভিলিয়নে ক্রেতাদের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। বাণিজ্য মেলায় ক্রেতাদের চাহিদা ও রুচির ভিন্নতা অনুযায়ী ৪ শতাধিক মডেলের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করছে ওয়ালটন। মেলা ও নতুন বছর উপলক্ষে ওয়ালটন ব্র্যান্ড বাজারে ছেড়েছে প্রায় অর্ধশতক নতুন মডেলের পণ্য। পাশাপাশি দাম কমানো হয়েছে রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, সিআরটি ও এলইডি টেলিভিশনসহ অসংখ্য পণ্যের। ওয়ালটনের বিপণন বিভাগের ফার্স্ট সিনিয়র এ্যাডিশনাল ডিরেক্টর মোহাম্মদ রায়হান বলেন, ‘মেলায় আগত বিদেশী ক্রেতাদের ওয়ালটন পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে ধারণা দেয়ার লক্ষ্যে আমরা রফতানির জন্য প্রস্তুতকৃত বেশকিছু আপকামিং মডেলের ফ্রিজ ও টেলিভিশন প্রদর্শন করছি।’ মেলা এবং নতুন বছরে ক্রেতাদের বাড়তি কিছু উপহার দিতে রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার, সিআরটি ও এলইডি টেলিভিশনসহ অনেক পণ্যের দাম কমানো হয়েছে বলে জানান তিনি। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তাহসান ওয়ালটনের মোটরসাইকেল কিনতে এসে জানালেন, ওয়ালটনের মোটর সাইকেলগুলোতে স্টাইল, সময় উপযোগী বলেই কিনবো বলে দেখতে এসেছি। দিল্লী এ্যালুমিনিয়ামের বিক্রেতা জামাল হোসেন বলেন, সকাল থেকেই বেচাকেনা ভাল। বিকেলে আরও বেড়েছে। মেলা শুরুর পর এত বেচাকেনা আর হয়নি। ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টসের নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল আলম বলেন, বেশি ক্রেতা মানেই বেশি বিক্রি। বেঙ্গল প্লাস্টিক প্যাভিলিয়নের কর্মকর্তা সানজিদ ইব্রাহিম বলেন, এ সপ্তাহের মধ্যে আজকেই একটু ক্রেতাদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। গৃহস্থালীর পণ্য কিনতে আমাদের প্রধান ক্রেতা নারীরা। এ সম্পর্কে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব এ এফ এম মনজুর কাদির বলেন, এবারের মেলায় সব ধরনের আয়োজন যতœ সহকারে করা হয়েছে। তাছাড়া মেলার পরিসরও ভাল। শুরু থেকে গত কদিনের মধ্যে আজকে মেলায় ভিড় বেশি। তিনি বলেন, বিক্রেতারাও অপেক্ষা করে থাকেন এ দিনটির জন্য। আশা করছি আগামী দিনগুলোতে দর্শনার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে। মেলায় বিদেশী স্টল হংকং জুয়েলারিতে কথা হয় পুরান ঢাকা থেকে আসা ক্রেতা অপর্ণা রাণীর সঙ্গে। কিনেছি কানের টপ, গোল্ড প্লেট, ব্রেসলেট ঘড়ি। এ বিষয়ে হংকং স্টলের বিক্রেতা এয়ং ইনহারেক বলেন, বাঙালী নারীরা ফ্যাশন সচেতন। তাদের কথা চিন্তা করেই আমরা গয়না এনেছি। এখানকার গয়নার দাম ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০০ টাকা। চায়না স্টলের বিক্রেতা শামীম জানান, আমাদের এখানে চায়নার নীল রঙের গয়না রয়েছে। ব্রেসলেট ও হারের দাম পড়বে ১০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এখানকার বেশির ভাগই ক্রেতা তরুণী।
×