ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শীতে মনকাড়া ফ্যাশন

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৮ জানুয়ারি ২০১৬

শীতে মনকাড়া ফ্যাশন

পান্থ আফজাল প্রকৃতির পালাবদলে আসে একেক রূপ, একেক রং। এদেশের রঙ্গিন প্রকৃতি পরিবর্তন হয় এক ভিন্ন মাত্রায়। প্রকৃতির চরিত্রের বহুরূপতা মাঝে মাঝে বোঝা বড় দায়। ছয় ঋতুর দেশ হলেও এদেশের ঋতুচক্রের পরিধি একেক মুহূর্ত একেক রকম। নতুন বছরে শীতের প্রকোপ স্বভাবতই অত্যধিক জেঁকে বসার কথা, কিন্তু তা না হয়ে শীত কোথাও কোথাও অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, আবার কোথাও হাল্কাভাবে দেখা দিচ্ছে। তাই নিঃসন্দেহে বছরে শীত এখনও জেঁকে বসেনি। শীত বাড়লে শীতের কাপড় কেনায় ব্যস্ততা বাড়ে ফ্যাশন সচেতন মানুষের। এখনও বলা যায় শীত আসি আসি করছে, একটু একটু করে ঠা-া পড়তে শুরু করেছে চারপাশে। সময় এসেছে শীতের পোশাক এবং অনুষঙ্গের খোঁজে বেরিয়ে পড়ার। শীতের সকালটা যেন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো প্রকৃতির এক অদ্ভুত খেলা। একটু রোদ উঠতেই যেন সব ভ্যানিস। প্রকৃতির ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জীবন ধারারও পরিবর্তন চলে আসে। হিমেল হাওয়ার দিনে স্থবিরতাই প্রকৃতির নিয়ম। তাই এ সময় গরম কাপড়ের প্রয়োজন হয়ে ওঠে। কেউ কোন কাজে সকালে বের হলে কিংবা রাতে বাড়ি ফেরার সময় শরীরের ওপর ঠা-া পড়ে। মৌসুমটি বেশ উপভোগেরও বটে। এমন সময়ে না ভারি শীতের পোশাক পরা যায়, না বেছে নেয়া যায় সাধারণ পোশাক। তবে এ হালকা শীতটা কিন্তু ফ্যাশনের জন্য দারুণ উপযোগী। চমৎকার সব স্টাইলিশ পোশাক হতে পারে আপনার এ সময়ের সঙ্গী। বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানে শীতের পোশাক তৈরির প্রতিযোগিতা যেন বেড়ে যায়। মেনস ক্লাব, ক্যাটস আই, প্লাস পয়েন্ট, রিচম্যান, অঞ্জনস, ক্র্যাফট থেকে শুরু করে ফুটপাথেও এই সময়ে পোশাকের চাহিদা থাকে। শীতের কাপড় মানেই যে সোয়েটার বা চাদর হতে হবে এমন কোন কথা নেই। যুগের পরিবর্তন ধারায় দৈনন্দিন লাইফ স্টাইলে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাই এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন নতুন অধ্যায়। উষ্ণতায় স্টাইলিশ ব্লেজার সব সময়ই তরুণদের চাহিদা থাকে নতুনের প্রতি। হালের ফ্যাশনে তাই প্রতিনিয়ত যোগ হয় নতুন মাত্রা। পোশাকের রং-ঢঙে চাই নতুনত্ব। এবারের শীতে তাদের শীত নিবারণের পাশাপাশি স্টাইল রক্ষা করাটাও জরুরী হয়ে পড়েছে। তবে ব্লেজার বা কোট পরার সময় শরীরের গঠন ও মুখের গড়ন বিবেচনা করা উচিত। উচ্চতা কম হলে স্ট্রাইপ ব্লেজার পরা ভাল। এক রঙের চেক ব্লেজার বেশি মানানসই যাদের উচ্চতা বেশি। যারা মাঝারি গড়নের তারা যে কোনটিই পরতে পারেন। মোটা হলে এক বোতাম, চিকন ও মাঝারি গড়ন হলে দুই-তিন বোতাম দিয়ে ব্লেজার পরলে ভালল দেখাবে। এক বোতামের ব্লেজার মেয়েদের বেশি মানায়। কোট বা ব্লেজার, যেটাই পরুন না কেন, সঙ্গে হাইনেক বুট আর গলায় পেঁচিয়ে নিতে পারেন স্কার্ফ। শীতে ফ্যাশনেবল জ্যাকেটে তরুণ-তরুণী তরুণ-তরুণীরা ফ্যাশনের ব্যাপারে বেশ খুঁতখুঁতে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এই বিষয়টি মাথায় রেখেই ফ্যাশন হাউসগুলো বাজারে এনেছে ফ্যাশনেবল জ্যাকেট। জ্যাকেটগুলো ব্যবহার করা যাবে শীতের ফ্যাশনেবল অনুষঙ্গ হিসেবে। শীতের ভারি পোশাক জ্যাকেটেও এসেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। বর্তমান সময়ে শীতের পোশাকে স্টাইল হিসেবে জ্যাকেটের চলটাই সবচেয়ে বেশি। ছেলেদের শীতের পোশাকে এবার অবশ্য জনপ্রিয় জ্যাকেটও। এবারের শীতের ফ্যাশনে জ্যাকেটগুলো তৈরি করা হয়েছে প্রয়োজন ও ফ্যাশন দুটি বিষয়ের কথা মাথায় রেখে। সম্পূর্ণ দেশী কাপড়ে দৃষ্টিনন্দন এবং সময়োপযোগী নক্সায় তৈরি হয়েছে এসব জ্যাকেট। বাহারি সোয়েটারে শীত উপশম ছেলেদের শীত পোশাকের তালিকায় প্রথমেই আসে সোয়েটার, জ্যাকেট কিংবা স্যুট-থ্রিপিস বা টুপিসের কথা। সোয়েটার যে কোন গড়নের ছেলেমেয়ে পরতে পারে। তবে যারা অফিস করেন তাদের জন্যও রয়েছে বিশেষ পোশাক। অফিস মানেই স্যুট-কোট পরতে হবে, তা নয়। ফুলহাতা শার্ট-টাই’র সঙ্গে সোয়েটারও পরতে পারেন। এসব সোয়েটারের গলা প্রশস্ত হতে হবে। সে ক্ষেত্রে আপনি চাইলে ভি-আকৃতির ডিজাইন করা সোয়েটার পরতে পারবেন। শীতে হুডি ফ্যাশন মূলত পশ্চিমা ফ্যাশনের হাত ধরেই আমাদের দেশে হুডি ফ্যাশনের আগমন ঘটে। কনকনে ঠা-া বাতাস বইছে। কানের ভেতর দিয়ে পৌঁছে যেন অবশ করে দিচ্ছে মাথা। কানঢাকা টুপি পরা ছাড়া গতি নেই; কিন্তু জিনিসটা তো বড্ড সেকেলে। ফ্যাশনেবল না হলে কী আর তা পরা যায়? এর সমাধান হুডি। জ্যাকেট বা সোয়েটারের শুধু হুডটা টেনে মাথা ঢেকে নেয়া। দেখতেও দারুণ। ব্যস আর কী চাই। হুড পরা তরুণ-তরুণীর সংখ্যা তাই বাড়ছেই। ডেনিম, ক্যানভাস কাপড় কিংবা চামড়ার জ্যাকেটের সঙ্গে এখন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হুডির জনপ্রিয়তাও। রকমারি টুপি ও ক্যাপ ফ্যাশন হাউসগুলো এবারের শীত মৌসুমটার জন্য আলাদাভাবে চিন্তা করেই তৈরি করেছে সম্পূর্ণ নতুন ডিজাইনের বাহারি পোশাকের সঙ্গে ছেলেমেয়ে উভয়ের সঙ্গী হতে পারে হালফ্যাশনের মাফলার আর কানটুপিও। শীতের হাত থেকে গলা বাঁচাতে মাফলার কাজ দেয়, আবার তরুণদের ফ্যাশনেও এর রয়েছে যথেষ্ট কদর। এ ছাড়াও উলের টুপি, কানটুপি, মানকিক্যাপ এবং মোজাও এই শীতে আপনাকে বেশ আরাম দেবে এ ধরনের ক্যাপ, বেল্ট এবং মাফলার। সঙ্গে গরম কাপড় তো রয়েছেই। ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো কোথায় পাবেন এবং দরদাম বাংলাদেশী ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো মূলত বাইরের দেশের বায়ারদের ডিজাইন-ই বেশি অনুকরণ করে থাকে। তবে এর মধ্যেও দেশীয় ব্র্যান্ড মেনজ ক্লাব, জেন্টল পার্ক, ক্যাটস আই, এক্সট্যাসি, রেক্স, ইয়োল বেশকিছু ইউনিক ডিজাইন ডেভলপ করেছে এই শীতে। রাজধানীর বড় বড় শোরুম কিংবা শপিংমলের কাপড়ের দোকানগুলোতে ব্লেজার, কোট, জ্যাকেট ও ফুলহাতা টি-শার্ট বিক্রির জন্য রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন দোকানে দুই হাজার থেকে শুরু করে ৬০ হাজার টাকা দামের পর্যন্ত ব্লেজার ও কোট রয়েছে। বসুন্ধরা শপিংমলের দোকানগুলোতে পুরুষদের পোশাকের পাশাপাশি নারীদের জ্যাকেট, ব্লেজারসহ শিশুদের বিভিন্ন ধরনের শীতের পোশাকও কম বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় প্রসিদ্ধ ব্যান্ড মেনস ক্লাবের এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান মার্কেট, ধানম-ির রাইফেলস স্কয়ার, মেট্রো শপিংমল এলাকা ও বসুন্ধরা শপিংমলের দোকানগুলোতে পাওয়া যাবে ফ্যাশনেবল ব্লেজার, কোট, জ্যাকেট, সোয়েটার, স্কার্ফসহ বিভিন্ন রকমের আরামদায়ক ফুলহাতা শার্ট এবং রাউনড টি-শার্ট। ফ্যাশনেবল শীতের বিভিন্ন নয়নকাড়া জ্যাকেটের দাম পড়বে ২৩৯০ টাকা। ডিজাইন কোর্ট ৬৭৫০ টাকা এবং চেক কোর্ট ৬৯৫০ টাকা। আরামদায়ক সোয়েটার ফুল ১৬৯০ টাকা এবং হাফ ১৫৯০ টাকা। এছাড়াও বাহারি স্কার্ফ পাবেন ৭৮০ টাকায়। এগুলো পরতে পারেন মেনস ক্লাবের ফুলহাতা শার্ট এবং রাউনড টি-শার্ট। দাম ফুলহাতা শার্ট চেক ১৯৮০ টাকা ও প্রিন্ট ১৫৯০ টাকা এবং রাউনড টি-শার্ট ১০৫০ টাকা মাত্র। আপনি যদি ফ্যাশন সচেতন হয়ে থাকেন তবে বেরিয়ে পড়ুন এখনই! এ শীতকালটি হতে পারে আপনার ফ্যাশন সেন্সকে ঝালিয়ে নেয়ার মোক্ষম সময়। মডেল : শাওন, সামিয়া, অপূর্ব ও মৌসুমী পোশাক : কেক্রাফট ইয়ং, মেনজ ক্লাব স্টাইলিং : সেজান সজল
×