ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দাবি না মানলে ১১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি শিক্ষকদের

৩৭ পাবলিক ভার্সিটিতে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি অবস্থান কর্মসূচী

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৮ জানুয়ারি ২০১৬

৩৭ পাবলিক ভার্সিটিতে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি অবস্থান কর্মসূচী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ, বেতন কাঠামোর বৈষম্য নিরসনের দাবিতে বৃহস্পতিবার একযোগে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছেন আন্দোলনরত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলোর জোট বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে চলে কর্মসূচী। যেখান থেকে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সরকারের সাড়া না পেলে ১১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়া ছাড়া তাদের আর বিকল্প থাকবে না। তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ রাখার দায় শিক্ষকরা নেবেন না। বৈষম্য দূর করাসহ তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এর আগে কর্মবিরতির পূর্বঘোষণা থাকলেও এ ইস্যুতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি ব্যাখ্যা নিয়ে বুধবার রাতে শিক্ষকদের মাঝে কিছুটা অসন্তোষ দেখা দেয়। ফলে রাতেই শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে পাল্টা বিবৃতি দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যাকে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ বলে অভিহিত করে জবাব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ফেডারেশনের অভিযোগ, কতিপয় আমলা প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবিদাওয়ার বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছেন। ৪ জানুয়ারি বেতন স্কেল নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছিল, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যাতে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ব্যতীত গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ প্রাপ্য হন, সে জন্য সরকারের সিদ্ধান্তের আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন প্রশ্ন তুলেছে, যদি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করে থাকে, তাহলে গত ১৫ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের পাঠানো পরিপত্রে বেতনবৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত দেখিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করা হলো কেন? এই ‘বিতর্কিত’ পরিপত্রটি প্রত্যাহার করা হয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রেখেছে ফেডারেশন। এ জন্য তারা একটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এ ধরনের পরিপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন। ব্যাখ্যায় বলা হয়েছিল, শিক্ষকরা নিজের কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পান। এর জবাবে ফেডারেশন বলছে, সরকারী কর্মকর্তারাও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন এমন তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে আছে। আর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন এমন শিক্ষকের সংখ্যা মোট শিক্ষকের দুই থেকে তিন শতাংশের বেশি হবে না। নয়টা-পাঁচটা অফিস সময়ের বিষয়ে শিক্ষকদের ফেডারেশন বলছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাচিবিক দায়িত্ব পালন শিক্ষকের কাজ নয়। একজন শিক্ষকের কাজ তাঁর শ্রেণীকক্ষে, গবেষণাগারে, এমনকি তাঁর নিজ গৃহে। অর্থ মন্ত্রণালয় গ্রেড-১ভুক্ত অধ্যাপকের সংখ্যা ৮২০ উল্লেখ করলেও ফেডারেশন বলেছে, এই সংখ্যা ৬০৮ জন। ফেডারেশনের প্রশ্ন, ক্যাডারবহির্ভূত কর্মকর্তারা কি সচিব পদে পদোন্নতি পান। এদিকে শিক্ষকদের এমন অসন্তোষের মধ্যেই বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ১১টা থেকে একটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি ও নিজ নিজ ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে বটতলায় কর্মসূচীতে দুই শতাধিক শিক্ষক অংশ নেন। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমদাদুল হক, শিক্ষক নেতা ও কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান, অধ্যাপক নাজমা শাহীন, এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া প্রমুখ। অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, গত ৯ মাস ধরে আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করে আসছি। ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায় বিঘœ ঘটে এমন কোন কর্মসূচী আমরা দিইনি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, এখান থেকে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আজ বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচী থেকে আমরা আবারও সময় দিচ্ছি। দাবি মেনে নেয়া না হলে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ১১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়া ছাড়া কোন বিকল্প আমাদের থাকবে না। তিনি আরও বলেন, গত ৬ ডিসেম্বর এক সভায় সপ্তম বেতন স্কেলে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা না কমিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল রাখা, সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপকদের মধ্যে থেকে একটি অংশকে সিনিয়র সচিবদের জন্য সৃষ্ট ‘সুপার গ্রেডে’ উন্নীত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রারম্ভিক বেতন সপ্তম গ্রেডে সম্ভব না হলে অষ্টম গ্রেড থেকে শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সেই প্রতিশ্রুতির মধ্যে শুধু প্রারম্ভিক বেতনের প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন তিনি (অর্থমন্ত্রী) বিবৃতি দিয়ে নানা কথা বলছেন। তাঁর মতো একজন সিনিয়র মন্ত্রীর ওপর যদি আমরা আস্থা রাখতে না পারি তাহলে কার ওপরে রাখব? অর্থমন্ত্রী এখন বিবৃতি দিয়ে বলছেন- প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়নি। প্রতিশ্রুতি না দিলে তিনি বেতন বৈষম্য নিরসন কমিটিতে আলোচনা ছাড়াই এবং তাদের অনুমোদন ছাড়া পরিপত্র জারি করলেন কেন? অধ্যাপক ইমদাদুল হক বলেন, আমরা বার বার স্পষ্ট করেছি, আমাদের আন্দোলন বেতনের পরিমাণ নিয়ে নয়, মর্যাদার জন্য। আমরা ছাত্রদের জিম্মি করতে চাই না। পেট্রোলবোমা সন্ত্রাসের সময় জীবনবাজি রেখে ক্লাস নিয়েছি, শুক্রবারেও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রেখেছি। সুতরাং আমাদের যদি কর্মবিরতিতে যেতে হয়, তাহলে সেই দায় শিক্ষকরা নেবে না। সেই দায় যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের ওপর বর্তাবে। সর্বাত্মক কমবিরতির হুমকি চবি শিক্ষকদের ॥ অবিলম্বে অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো সংক্রান্ত গেজেটের সংশোধন এবং প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করলে ১১ জানুয়ারি থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষকরা। চবির বুদ্ধিজীবী চত্বরে অবস্থান কর্মসূচীতে এ হুঁশিয়ারি দেন তারা। ইবিতে কর্মবিরতি ॥ অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য অর্থমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবিতে কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষক সমিতি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও আন্দোলন ॥ নতুন বেতন কাঠামোয় পদ বৈষম্য দূর করাসহ তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকালে সব স্তরের কর্মকর্তারা কাজ বন্ধ রেখে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় চত্বরে ১০টা থেকে এক ঘণ্টা অবস্থান করেন। এ সময় বাইরে থেকে কাউকে ব্যাংক চত্বরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এর আগে বুধবার এক সভায় ‘গেট গ্যাদারিং’ শীর্ষক আন্দোলনের এ কর্মসূচী ঘোষণা করে অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল। দাবি আদায়ে আগামী ১০ ও ১১ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এবং ১২-১৪ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করা হবে। এর মধ্যে সরকার দাবি মেনে না নিলে ১৫ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা গণছুটিতে যাবেন বলে হুঁশিয়ারী দিয়েছেন কাউন্সিলের নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অভিযোগ-অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে তাদের মর্যাদাহানি করা হয়েছে।
×