ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৮ জানুয়ারি ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ শীতের কাল যেহেতু, অনেক দিন বৃষ্টি নেই। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকা এখন শুকনো; যারপরনাই কড়কড়ে। রাস্তার উপরিভাগের মাটি গুঁড়ো হয়ে বাতাসে উড়ছে। যেদিকে চোখ যায় ধুলোবালি। বিশেষ করে গত বর্ষায় যেখানে কাঁদা জমেছিল, এখন তা ধুলোর রাজ্য। এক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভার এলাকা। নির্মাণকাজ চলায় বর্ষায় এখানে কাঁদা জমে ছিল। এখন ধুলোবালিতে ডুবেছে। ইস্কাটন থেকে মগবাজার পর্যন্ত এলাকা প্রায় প্রতিদিনই ঘুরে দেখা হয়। ফ্লাইওভার দিয়ে দুই ভাগ করা রাস্তায় যানবাহনের চাপ। গাড়ির চাকা যত ঘুরে ততো ধুলো। ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে পার হওয়ার সময় মুখে রোমাল চাপতে হয়। রাস্তার পাশের মার্কেট শপিংমল ঘরবাড়ি- সব ধুলোয় মলিন। বাইরের চেহারা অনুজ্জ্বল। কয়েক স্তর ধুলো জমেছে। ইস্কাটনের এক বাসিন্দা বললেন, তার বাসার ভেতরে প্রতিদিন যে পরিমাণ ধুলো যায় তা দিয়ে নতুন বিল্ডিং গড়া যাবে! শীতের শুষ্কতা ঢাকার প্রকৃতিকেও ছুঁয়ে দিয়েছে। চিরচেনা সবুজ নেই এখন; নেই বললেই চলে। গাছের পাতা ঝরে পড়ছে। ডালপালা শুকনো। বৃহস্পতিবার ধানম-ি লেক এলাকায় গিয়ে দেখা গেল এমন দৃশ্য। কোন কোন গাছ মৃত প্রায়। রাস্তার পাশের গাছগুলোতে কয়েক স্তর ধুলো। ৮ নম্বর ব্রিজ হয়ে কলাবাগানের দিকে আসতে একটি বড় গাছ। নাম জানা গেল না। কাঁঠাল গাছের পাতার মতো পাতা। কিন্তু পাতার রং আর দেখা যায় না। সেখানে কয়েক স্তর ধুলো। দূর থেকে দেখা যায়। শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর অঙ্গনে একটি আমগাছকে আমগাছ বলে চেনা যায় না। ধুলোয় এমনভাবে ডুবে আছে সব পাতা! অবশ্য কিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজও হচ্ছে। এরই মাঝে ২০১৬ সালকে পরিচ্ছন্ন বছর হিসেবে ঘোষণা করেছে ডিএসসিসি। রুটিন কাজের বাইরে অভিযান পরিচালনা করছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের দুই অংশ। প্রশংসনীয় উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন। উভয় মেয়র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ভোটের আগে। এখন স্মার্ট ও পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দেয়ার পালা। কী হবে, কতটা হবে, তা সময়ই বলবে। তবে মেয়ররা পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতি ভুলে যাননি। এটি স্বস্তির। আশাবাদী হওয়ার মতো। এরই মাঝে নগরীর বিভন্ন স্থান পরিচ্ছন্ন করার কাজে হাত লাগাতে দেখা গেছে মেয়রদের। এমনকি যোগ দিয়েছেন র‌্যাবের সদস্যরা। রবিবার রাজধানীর টিকাটুলিতে এমন একটি কর্মসূচীর নেতৃত্ব দেন সাঈদ খোকন। তিনি চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করেই যেন বলেন, যারা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে রাস্তা দখল করে আছেন, পরিবেশ নষ্ট করে রেখেছেন, তাদের আর ছাড় দেয়া হবে না। র‌্যাবের সঙ্গে যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকার সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে পুরনো বাড়ি রং করারও আহ্বান জানান তিনি। র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ স্মরণ করিয়ে দেন, বর্তমানে এ শহরের পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা। শীতে প্রতি ঘরেই সর্দি, কাশি ও জ্বর দেখা দিচ্ছে। কারণ ঢাকার বাতাস বিষাক্ত। এ অবস্থায় শহরকে বসবাসযোগ্য রাখতে পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরী। এটি শুধু সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব না। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন মাশরাফিও নাকে মাস্ক পরে ময়লা পরিষ্কার করার কাজে নেমে গিয়েছেন। সবই সাধারণকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে। আসলেই তো, সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে, উদ্যোগী না হলে, পরিচ্ছন্ন নগরী দূরের স্বপ্ন হয়ে থেকে যাবে।
×