ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এ বছরেই জামায়াত নিষিদ্ধ ॥ হরতাল প্রত্যাখ্যান

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৮ জানুয়ারি ২০১৬

এ বছরেই জামায়াত নিষিদ্ধ ॥ হরতাল প্রত্যাখ্যান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীসহ সারাদেশে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। আন্তঃজেলা রুটেও চলে সব ধরনের গাড়ি। সড়ক, নৌ ও রেলপথ ছিল পুরোপুরি নিরাপদ। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ছিল অন্যদিনের মতোই যানজট। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, মার্কেট থেকে শুরু করে সব কিছুই ছিল একেবারেই স্বাভাবিক। এর মধ্য দিয়েই পালিত হলো জামায়াতের দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা নিরুত্তাপ হরতাল। কোথাও রাস্তায় নামেনি হরতালকালীরা। সর্বোপরি যুদ্ধাপরাধীর দল জামাতের হরতালের ডাকে সাড়া মেলেনি কোথাও। এই কর্মসূচী প্রত্যাখ্যান করেছে দেশবাসী। সারাদেশে কোথাও হরতাল হয়নি। এদিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে হরতালবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। এর একটিতে অংশ নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, চলতি বছরের মধ্যে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে। হরতালে রাজধানীজুড়ে সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিজামীর এলাকা পাবনা ও সাঁথিয়ায় হরতালের কোন প্রভাব ছিল না। উল্টো নিজামীর ফাঁসি বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সবাই। বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ একাত্তরে গণহত্যা ও ধর্ষণের দায়ে আলবদর বাহিনীর কমান্ডার মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল রাখার প্রতিবাদে বুধবার হরতালের ডাক দেয় জামায়াত। হরতাল প্রত্যাখ্যান করে রাজধানীসহ আন্তঃজেলা রুটে বাস-মিনিবাস চালান পরিবহন মালিকরা। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, উচ্চতর আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও আদালত অবমাননার শামিল। হরতাল অবরোধের কারণে দেশব্যাপী পরিবহন সেক্টরের মালিকরা আজ নানা সঙ্কটের মুখোমুখি। জনবিরোধী এ হরতালে মালিক-শ্রমিকেরা কখনই সাড়া দেবে না, আজও দেয়নি। ঘৃণার সঙ্গে আমরা হরতাল কর্মসূচী প্রত্যাখ্যান করে পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রেখেছি। হরতালের প্রতিবাদে রাজপথে অবস্থান করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। রাজধানীর জিরো পয়েন্টের পাশে খদ্দরবাজার শপিং কমপ্লেক্সের সামনে পরিবহন শ্রমিকরা সমাবেশ ও হরতালবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এখন আর বিএনপির সম্পদ নয় বরং বোঝা বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। রমনা থানা আওয়ামী লীগ এ সমাবেশ আয়োজন করে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আপনার নেতাকর্মীরাই আর আপনাকে সম্পদ মনে করেন না। আপনার কারণেই বিএনপির আজকের এই দুর্দশা। আপনি সবার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে এখন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন আমায় একটু ডাকুন আমি একটু কথা বলতে চাই। সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, যারা হাতে পোড়া মানুষের গন্ধ, জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক, যারা দেশী-বিদেশী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে মদদ দেয়, তাদের সঙ্গে সরকার বা আওয়ামী লীগের কোন সংলাপ হতে পারে না। রমনা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল বাশারের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানা। এদিকে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের কোন সংগঠন থাকতে পারে না। আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১৬ সালের মধ্যেই এ দেশ থেকে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে। নিজামীর রায় কার্যকর করা এখন ‘সময়ের ব্যাপার’ মন্তব্য করে আাওয়ামী লীগ নেতা কামরুল বলেন, ‘নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একে একে সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করা হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় নিজামীর বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এ বিচার কার্যকর করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় পাকিস্তানকে সহযোগিতা করা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি স্বাধীন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের সময়ে এদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয় জামায়াত। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন। আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ, তাঁতী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হন। একের পর এক চলে হরতালবিরোধী বক্তব্য ও সেøাগান। ভোর থেকে বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য রাস্তায় নামে। সকালের দিকে রাস্তায় প্রাইভেটকারের সংখ্যা কিছুটা কম দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসে। রাস্তা থেকে শুরু করে অফিসপাড়ায় ছিল কর্মমুখর পরিবেশ। খোলা ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মহাখালী, সায়েদাবাদ, গাবতলীসহ সকল টার্মিনাল থেকে আন্তঃজেলা রুটের বাস ছেড়ে গেছে। ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে গাড়ি চলাচল ছিল একেবারেই স্বাভাবিক। অন্যান্য হরতালে জামায়াত নেতাকর্মীরা ব্যাপক সহিংসতা চালায় আগের দিন থেকেই। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর থেকেই সারাদেশে নানা ইস্যুতে তা-ব চালায় দলটির নেতাকর্মীরা। তবে বহু মানুষ হতাহতের শিকার হয়েছেন। শত বিরোধিতার পরও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। ইতোমধ্যে চারজনের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। বিচারাধীন আরও বেশ কিছু মামলা। দাবি উঠেছে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের। পাশাপাশি জামায়াত ইসলামী এখন কোন নির্বাচনেই আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। এই প্রেক্ষাপটে মেরুদ- ভাঙতে শুরু করে দলটির নেতাকর্মীদের। চট্টগ্রাম ছিল স্বাভাবিক ॥ স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে জানান মানবতাবিরোধী অপরাধে মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল রাখার প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামীর ডাকা হরতাল চট্টগ্রামে পালিত হয়নি। নগরী ও জেলার কোথাও হরতালের কোন প্রভাব পড়েনি। শহরের সড়ক এবং মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহন চলেছে স্বাভাবিক দিনের মতোই। এছাড়া অফিস পাড়া, শিল্পাঞ্চল, বন্দরসহ সর্বক্ষেত্রে ছিল স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য। হরতালের সমর্থনে কোথাও কোন পিকেটিং হয়নি। দেখা যায়নি জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের। তবে হরতালবিরোধী মিছিল সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনগুলো। ভোর থেকেই নগরীর চিত্র ছিল অন্যান্য দিনের মতোই। কর্মস্থলমুখী ছিলেন কর্মজীবীরা। সড়কে যানবাহনের কোন অভাব হয়নি। সিটি বাস, হিউম্যা হলার, অটোরিক্সা, টেম্পোসহ সব ধরনের গণপরিবহনই চলাচল করেছে। শুধু তাই নয়, এদিন নগরীর টার্মিনালগুলো থেকে দূর পাল্লার বাসও ছেড়ে যায়। একইভাবে ঢাকা এবং অন্যান্য জেলা থেকে যানবাহনগুলো ছেড়ে আসে চট্টগ্রামে। সামগ্রিক চিত্র ছিল একেবারেই স্বাভাবিক। হরতালের কোন প্রভাবই পরিলক্ষিত হয়নি। চট্টগ্রাম বন্দরে স্বাভাবিক পণ্য ওঠানামা হয়েছে। রেল স্টেশন থেকে সবগুলো ট্রেন ছেড়ে গেছে। বিমান বন্দরে ফ্লাইট ওঠানামাও ছিল স্বাভাবিক। বাণিজ্যপাড়া, অফিস পাড়া, শিল্প এলাকা যথারীতি ছিল কর্মচঞ্চল। হরতালের ভোগান্তি পোহাতে হয়নি সাধারণ মানুষকে। নগরী ও জেলার কোথাও হরতালের সমর্থনে কোন মিছিল কিংবা পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি। তবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় সর্বোচ্চ সতর্ক ছিল পুলিশ, র‌্যাবসহ নিরাপত্তা বাহিনী। হরতালকারীদের কোন ধরনের তৎপরতা না থাকায় এ বাহিনীগুলোকেও কোন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়নি। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে এদিনও অন্যান্য দিনের মতোই ট্রাফিক জ্যাম ছিল।
×