ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রিয়াদে আদেল ও আবুল হাসান বৈঠক

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব একত্রে কাজ করবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৮ জানুয়ারি ২০১৬

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব একত্রে কাজ করবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে সৌদি আরব সফরে যেতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে স্বাগত জানিয়েছে সৌদি আরব। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে বাংলাদেশ। রিয়াদে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবেইরের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মোহাম্মাদ আলীর এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বর্তমানে সৌদি আরব সফরে রয়েছেন। সৌদি আরব সফরকালে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে সৌদি আরবের সঙ্গে একজোট হয়ে লড়াই করবে বাংলাদেশ। তারা বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্কের কথা আলোচনা করেন। এ ছাড়া সংস্কৃতি, শিক্ষা, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে বলেও মত দেন তারা। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ বিন সউদের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেন। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে সৌদি আরব সফর করতে পারেন। এ সময় সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানানোর জন্য সৌদি আরব প্রস্তুত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফরে গেলে সৌদি বাদশা খুশি হবেন বলেও জানান সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব নিয়মিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ সভা করার জন্য একমত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফরের সময় এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন তারা। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো আরও বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেন দুই মন্ত্রী। সৌদি আরবে বাংলাদেশের কর্মীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবেইর বলেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশের কর্মীদের অবদান রয়েছে। এর ফলে উভয় দেশই লাভবান হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষ ও আধাদক্ষ কর্মী নেয়ার জন্য তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসক ও সেবিকা নিতে আগ্রহী সৌদি আরব। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক ওষুধ নেয়ার জন্য সৌদি আরবের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এছাড়া সৌদি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য তিনি আহ্বান জানান। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসায়িক ভিসা প্রদানের জন্য সৌদি আরবের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া সৌদি আরবের জেদ্দা, রিয়াদ ও দাম্মামে বাংলাদেশী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জমি দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন মাহমুদ আলী। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সৌদি আরবের নেতৃত্বে আইএস বিরোধী সামরিক জোটের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার জন্যই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৌদি আরব সফর করেন। সৌদি আরবের এই সামরিক জোটে যোগ দিলেও বাংলাদেশ সেখানে সেনা পাঠাতে আগ্রহী নয়। তবে আইএসবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রমে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব একযোগে কাজ করবে। এছাড়া আইএসবিরোধী সামরিক জোটের রূপরেখা জানতেও আগ্রহী বাংলাদেশ। এই সফরের সময়ে আইএসবিরোধী সামরিক জোট নিয়ে আলোচনা হবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেছিলেন, দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বৈঠক করেন, তখন সেখানে সব বিষয়েই আলোচনা হতে পারে। বৃহস্পতিবার আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি তেহরানে সৌদি আরবের দূতাবাসে হামলার নিন্দা জানান রিয়াদে সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি এই হামলাকে ভিয়েনা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলেও মন্তব্য করেন। আবুল হাসান মোহাম্মদ আলী বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী একটি দেশে অবস্থান করা অন্য দেশের কূটনীতিক ও কনস্যুলারদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব ওই দেশের সরকারের। সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে এ মুহূর্তে দেশটিতে অবস্থান করছেন আবুল হাসান মোহাম্মদ আলী। বৈঠকে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ, ডেপুটি অব মিশন নজরুল ইসলাম, জেদ্দার কনস্যুল জেনারেল শহীদুল করিমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ শুক্রবার সৌদি আরব থেকে ঢাকা ফেরার কথা রয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। ঢাকা ফেরার আগে জেদ্দায় ওআইসি মহাসচিব আইয়াদ আল মাদানির সঙ্গে বৈঠক করবেন আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
×