ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ২০১৪ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

পদ্মা সেতুতে শিক্ষা দিয়েছি, আর কেউ অবহেলা করবে না

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৮ জানুয়ারি ২০১৬

পদ্মা সেতুতে শিক্ষা দিয়েছি, আর কেউ অবহেলা করবে না

বিডিনিউজ ॥ পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে টানাপড়েন শেষে নিজেদের টাকায় স্বপ্নের এ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ওই ‘শিক্ষা’র পর বাংলাদেশকে আর কেউ অবহেলা করতে পারবে না। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আর কারও কাছে মাথা নোয়াবে না। ‘বাঙালী জাতিকে আর যেন কেউ কখনও অবহেলা দেখাতে না পারে। আমার মনে হয়, আর কেউ দেখাবে না। কারণ সেই শিক্ষা তারা পেয়ে গেছে, পদ্মা সেতু নিয়ে।’ ‘সেই শিক্ষা আমরা দিয়ে দিয়েছি, যে আমরা পারি।’ পদ্মা সেতু প্রকল্পে ‘দুর্নীতির’ অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করলে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে শুরু হয় দীর্ঘ টানাপোড়েন। পরে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংককে না বলে দেয়; নিজস্ব অর্থে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল পদ্মা সেতুর নির্মাণ এবং নদী শাসনের কাজের উদ্বোধন করেন। প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ সেতু নির্মিত হলে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হবে দেশের ১৯ জেলা। ছয় দশমিক এক পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু বাংলাদেশ সরকারে অর্থায়নে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ২০১৪’ বিতরণ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন তারা আমাদের অপমানজনক মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে টাকা প্রত্যাহার করল, যখন আমি ঘোষণা দিলাম নিজস্ব অর্থায়নে করব, তখন দেশবাসীর কাছ থেকে আমরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছিলাম, যা আমার মনোবলকে অনেক বেশি শক্তিশালী করেছিল। আর কারও কাছে মাথা নত না।’ ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের আশা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। কৃষিক্ষেত্রে গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, কৃষিবিজ্ঞানী ও গবেষকরা বিভিন্ন শস্যের প্রতিকূল আবহাওয়া ও পরিবেশ প্রতিরোধ সক্ষম জাত উদ্ভাবন করছেন। ‘এতে চরাঞ্চলে ভুট্টা ও সবজি চাষ, পাহাড়ে ফল চাষ, জলাভূমিতে ভাসমান সবজি চাষ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। বিএডিসির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পেরেছি। কৃষিবিজ্ঞানীদের প্রণোদনা দেয়া ও গবেষণা কার্যক্রমকে জোরদার এবং বহুমুখী শষ্য উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষার তাগিদ দেন শেখ হাসিনা। গ্রামকে অর্থনীতির ‘প্রাণ’ হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্রামীণ অর্থনীতি দিন দিন আরও বেশি উন্নত হচ্ছে। আয় বৈষম্য হ্রাস পেয়েছে। ধনী দরিদ্রের ব্যবধান হ্রাস পেয়েছে।’ বিনিয়োগের একটি বড় অংশ কৃষিভিত্তিক শিল্পে হওয়া উচিত মন্তব্য করে সরকার প্রধান কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপরও গুরুত্ব দেন। কৃষকদের বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণের জন্য বিগত সাত বছরে প্রণোদনা ও কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচী হিসেবে ৪৭৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা উন্নয়ন সহায়তা দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা জানান, বর্তমানে কেজি প্রতি ইউরিয়া সারের দাম ১৬ টাকা, টিএসপি ২২ টাকা, এমওপি ১৫ টাকা, ডিএপির দাম ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খামার যান্ত্রিকীকরণের জন্য ৩০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০০৫Ñ০৬ অর্থবছরে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল দুই কোটি ৭৮ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৪Ñ১৫ অর্থবছরে তা তিন কোটি ৮৪ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। গতবছরই বাংলাদেশ প্রথম চাল রফতানি শুরু করেছে। কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করতে ১৯৭৩ সালে ‘বঙ্গবন্ধু পুরস্কার তহবিল’ গঠন করা হয়। ১৯৭৫ সালের পর তা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এ পুরস্কার বিতরণ আবার শুরু করলেও ২০০১ সালে ক্ষমতা বদলের পর ২০০২ সাল থেকে তা পুনরায় বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ তৃতীয় বারের মতো সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর তা পুনর্প্রবর্তন করে। মোট দশটি ক্ষেত্রে এ পুরস্কার দেয়া হয়। বাংলা ১৪১৯ সাল পর্যন্ত ২১ বারে ৯৭৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এ পুরস্কার দেয়া হয়। ওই সময়ে ৫৫টি স্বর্ণ, ৩৩০টি রৌপ্য এবং ৫৯২টি ব্রোঞ্জ পদক দেয়া হয়েছে। ১৪২০ সালে কৃষিক্ষেত্রের বিভিন্ন খাতে অবদানের জন্য ২৮ ব্যক্তি এবং চারটি প্রতিষ্ঠানকে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’ দেয়া হয়। বাণিজ্যিকভিত্তিতে গবাদী পশু ও হাঁস-মুরগি পালনের জন্য পাবনার মোসাম্মৎ নুরুন নাহার বেগম, কৃষি সম্প্রসারণে অবদানের জন্য চাঁদপুরের উত্তর মতলবের কৃষি অফিসার আবদুল কাইয়ুম মজুমদার, কৃষিতে নারীর অবদানের জন্য যশোরের মণিরামপুরের নিভা রাণী বিশ্বাস এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার শক্তি কীর্ত্তনীয়া স্বর্ণপদক পেয়েছেন। এছাড়া কৃষি গবেষণায় অবদানের জন্য গাজীপুরের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটকেও স্বর্ণপদক দেয়া হয়। তারা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে সোনার একটি মেডেল, ২৫ হাজার টাকার চেক এবং সনদপত্র নেন। রৌপ্য পদকপ্রাপ্তরা মেডেল ও সনদপত্রের সঙ্গে ১৫ হাজার টাকা এবং ব্রোঞ্জ পদকপ্রাপ্তরা সাত হাজার ৫০০ টাকার চেক পেয়েছেন। কৃষিমন্ত্রী এবং বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
×