ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বদর বাহিনী প্রধানের ফাঁসি

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ৮ জানুয়ারি ২০১৬

বদর বাহিনী প্রধানের ফাঁসি

যুদ্ধাপরাধ সে করেছে, তা স্বীকার করে সাজা মওকুফ চেয়েছিল আইনজীবীর মাধ্যমে। সে মতিউর রহমান নিজামী। একজন যুদ্ধাপরাধী। একজন নরহত্যাকারী। যেখানেই মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী, সেখানেই মূর্তিমান আতঙ্ক নিজামী ও আলবদর। বাঙালীর কাছে যেন আজরাইল ছিল বদর বাহিনী ১৯৭১ সালে। সেই বদর বাহিনীর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী। বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের নীলনক্সা বাস্তবায়নে সরাসরি জড়িত কুখ্যাত আলবদর সংগঠন নিজামী একটি গণধিক্কৃত নাম। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদ- কার্যকর করার নির্দেশনা দিয়েছে আপীলের রায়েও। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়ন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং জাতির বিবেক হিসেবে বিবেচিত বুদ্ধিজীবীদের করার জন্য হত্যাকা- চালানোর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যু দ-াদেশ দেয়া হলো। মুক্তিযুদ্ধকালে পাবনায় হত্যা, ধর্ষণ ও বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে দেড় বছর আগে নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-ের রায় দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বুধবার তার বিরুদ্ধে আনা ৮ অভিযোগে তিনি ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হয়। আপীলে তিন অভিযোগে খালাস, তিনটিতে মৃত্যুদ- দুটিতে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দিয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়েছিল, নিজামী আলবদর বাহিনী গঠন প্রক্রিয়া শুধু নয়, বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং তিনি নিজেও বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। নিজামী রাজনীতিতে ধর্মের যেমন অপব্যবহার করেছে। কিন্তু অদ্যাবধি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকা-ের জন্য কোন অনুতাপ প্রকাশ করেনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকার করেনি। মুক্তিযুদ্ধ ছিল তাদের কাছে পাকিস্তানবিরোধী তৎপরতা। পাকিস্তান রক্ষার জন্য পাকি হানাদারদের পদলেহন করে বাঙালী নিধনে মত্ত হয়েছিল একদা ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ও পরে জামায়াতে ইসলামীর প্রধান। এই নরঘাতককে মন্ত্রীর মর্যাদায় বসিয়ে বিএনপি জাতীয় পতাকাকে চরম অবমাননা করেছিল। মন্ত্রী থাকাকালে জঙ্গীবাদকে চরমভাবে প্রশ্রয় দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। নিজামী চাঞ্চল্যকর ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাতেও ফাঁসির দ-াদেশপ্রাপ্ত। খালেদা সরকারের কৃষি ও শিল্পমন্ত্রী ছিল এই ঘাতক। উভয় মামলাতে বিচার প্রক্রিয়া ছিল দীর্ঘ এবং আসামি পক্ষ এক্ষেত্রে পূর্ণ বিচারিক সুবিধা ভোগ করেছে। নিজামী ৭১ সালে নিজে অপরাধ করেছে, অন্যদের অপরাধ করায় সংগঠিত ও প্ররোচিত করেছে। ইতিহাস তাদের ক্ষমা করেনি। জাতি হিসেবে বাঙালীও তাদের ক্ষমা করেনি, করবে না। ইতিহাসের দায় তাকে মেটাতেই হবে। একাত্তরের জল্লাদরা যতই হম্বিতম্বি করুক না কেন, আইনের দ- তাদের পেতেই হবে। নিজামী গ্রেফতার হয় ২০১০ সালের ২৯ জুন। অভিযোগ গঠন করা হয় ২০১১ সালের ১৮ মে, সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২০১২ সালের ২৬ আগস্ট, দ্বিতীয় দফায় যুক্তি উপস্থাপন করা হয় ২০১৪ সালের ১০ মার্চ, বিচার শেষ হয় ২০১৪ সালের ২৪ মার্চ এবং রায় ঘোষণা করা হয় ২৯ অক্টোবর। যাতে মৃত্যুদ-াদেশ দেয়া হয়। এর বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৩ নবেম্বর নিজামী নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ২৩ নবেম্বর আপীল করে। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি আপীলের রায়ে দ-াদেশ বহাল রাখা হয়। ঘাতক নিজামীর শাস্তি ঘোষণার পর ট্রাইব্যুনালের বাইরে অপেক্ষমাণ মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা, শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বানে উপস্থিত জনতা উল্লাস প্রকাশ করে। আরও উল্লাস প্রকাশ করে পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গণমানুষ। দ-াদেশের প্রতিবাদে আগের মতো এবারও নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দল হরতাল ডাকে তাদের ওয়েবসাইটে। এই হরতাল মুক্তিযুদ্ধের, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। যা রুখে দিয়েছে দেশবাসী।
×