ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

বেঙ্গলে প্রাণের খেলা অনুষ্ঠানে দুই শিল্পীর পরিবেশনা

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৭ জানুয়ারি ২০১৬

বেঙ্গলে প্রাণের খেলা অনুষ্ঠানে দুই শিল্পীর পরিবেশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মিলনায়তনের বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছে এস্রাজে বাজছে রাগ পুরিয়া ধনশ্রীর আলাপ। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল দর্শক উৎসুক হয়ে শুনছেন সে রাগ এবং আত্মনিমগ্ন হওয়ার চেষ্টা করছেন। এস্রাজে রাগ পরিবেশন করছেন দেশের স্বনামধন্য শিল্পী আশোক কুমার সরকার। ধানম-ির বেঙ্গল শিল্পালয়ে বুধবার সন্ধ্যায় ‘প্রাণের খেলা’ অনুষ্ঠানের প্রথম শিল্পী ছিলেন তিনি। প্রথমে রাগের আলাপ এবং পরে বিলম্বিত বাজিয়ে শোনান। এরপর ত্রিতালে মধ্য ও দ্রুত লয়ে বাজান। সবশেষে ঝালা বাজিয়ে রাগের সমাপ্তি টানেন। শিল্পীর সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন ইফতেখার আহমেদ প্রধান। এরপর মঞ্চে আসেন শিল্পী লাইসা আহমদ লিসা। ‘প্রথম যুগের উদয়দিগঙ্গনে’ রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে শুরু করেন তার পরিবেশনা। সুপ্রাচীন কাল থেকে এই উপমহাদেশে ধ্রুপদীসঙ্গীত সাধনার এক সফল ধারা রচিত হয়েছে, বাদন যন্ত্রের সুর ও তালের মধুর মায়াজাল মানুষের চিত্তকে উদ্বেলিত ও প্রসারিত করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান, বাণী ও সুরের এক মহাসম্মিলন। তাঁর গান কোমল ও মধুর, গাম্ভীর্য আছে, উদারতা আছে, ছন্দের গাণিতিক কাঠিন্য আছে, কিন্তু সবই মাধুর্যে মোড়ানো। প্রকাশরীতির এমন স্বকীয়তা সঙ্গীত মনস্ক শ্রোতার হৃদয়ের বোধকে জাগ্রত করে। পরে শিল্পী একের পর এক পরিবেশন করেন রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন পর্যায়ের গান। তার পরিবেশনায় ছিল- না গো এই-যে ধুলা আমার না এ, আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে, আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধুলার তলে, যদি প্রেম দিলে না প্রাণে, নাইবা ডাকো রইব তোমার দ্বারে, তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা, আহা তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা, আমারে করো তোমার বীণা, নিদ্রাহারা রাতের এ গান, চিনিলে না আমারে কি, কাল রাতের বেলা গান এলো মোর মনে, দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না, রোদন-ভরা এ বসন্ত ও কিছুই তো হলো না। শিল্পীর সঙ্গে যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন তবলায় এনামুল হক ওমর, কী-বোর্ডে বিনোদ রায়, এসরাজে অসিত বিশ্বাস এবং মন্দিরায় নাজমুল আলম ঝরু। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। রাজধানীর অরচার্ড পয়েন্টে শুরু হয়েছে পক্ষকালব্যাপী পিঠা উৎসব ॥ টেবিলে সাজানো রয়েছে ডিম পিঠা, নারকেলি পিঠা, পায়েশ, ফুল পিঠা, রস টিতইসহ নানা স্বাদ ও বাহারি পিঠা। নিচতলা থেকে শুরু করে তিন তলা পর্যন্ত এসব পিঠায় পুরো শপিংমলের চেহারাটাই যেন পাল্টে গেছে। এর মধ্যে ঢাক বাদন দলের লোকজ আঙ্গিকের বাজনায় মনে হচ্ছে উৎসবের আমেজ পুরো শপিংমলে এক বৈচিত্র্য এনে দিয়েছে। নগর জীবনে শীতের আমেজ ছড়িয়ে দিতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ধানম-ির অরচার্ড পয়েন্ট শপিংমল। এ মার্কেটের আয়োজনে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে পক্ষকালব্যাপী পিঠা উৎসব। উৎসবের উদ্বোধন করেন নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ফেরদৌস আরা, নাট্যজন লাকী ইমাম, সাঈদ বাবু প্রমুখ। ১৫ দিনের উৎসবে রয়েছে দেশীয় ঐতিহ্যবাহী পিঠার সমাহার। এছাড়াও উৎসব উপলক্ষে মার্কেটের বিপণি বিতানগুলোয় ক্রেতাদের জন্য রয়েছে মূল্যছাড়। আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে উৎসব। সাপ্তাহিক ছুটির কারণে মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে। নানা আয়োজনে পালিত হবে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০১৬ ॥ শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর তাৎপর্য বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। সেটি মাথায় রেখেই এই বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস উপলক্ষে জাতীয়ভাবে নানা কর্মসূচী পালিত হবে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দিবসটি যথাযথভাবে উদযাপন করা হবে। বুধবার বিকেলে এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার হলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনের এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করা হয়। ‘আহমদ রফিক : জীবন বাস্তবতার নান্দনিক কবি’ গ্রন্থ প্রকাশনা অনুষ্ঠিত ॥ আহমদ রফিক। পড়েছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সংশ্লিষ্ট ছিলেন সাহিত্যচর্চার সঙ্গে। লিখতেন কবিতা। সেই সঙ্গে রাজনীতিও করতেন। বিভিন্ন প্রগতিবাদী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি অংশ নিয়েছিলেন ’৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলনেও। সেই ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলেন একজন লড়াকু সৈনিকের ভূমিকায়। পরবর্তীতে দেশের বরেণ্য এই ভাষাসৈনিক নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন একজন-প্রাবন্ধিক, রবীন্দ্রগবেষক হিসেবে। রবীন্দ্রবিষয়ক গবেষণার ফসল হিসেবে তিনি বাংলাসাহিত্য ভা-ারে একাধারে যোগ করলেন অসংখ্য অনবদ্য সব গ্রন্থ। সেই সাথে অনেকটা ঢাকা পড়ে গেল তিনি কবিতা-ও লিখতেন। তার এই ঢাকা পড়ে যাওয়া কবিসত্তাকে নতুন করে সামনে নিয়ে আসতে প্রকাশিত হলো ‘আহমদ রফিক : জীবন বাস্তবতার নান্দনিক কবি’ শীরোনামের একটি গ্রন্থ। এ উপলক্ষে বুধবার শীতের সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এক প্রকাশনা উৎসব। এই প্রকাশনা উৎসবে ‘আহমদ রফিক : জীবন বাস্তবতার নান্দনিক কবি’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি এ্যামেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও বইটির লেখক মুনীর সিরাজ ও বইটির প্রকাশনা সংস্থা ‘অন্য’ প্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন-যাকে নিয়ে এই বই সেই ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক। ভাষাসৈনিক, কবি ও রবীন্দ্রগবেষক আহমদ রফিক ছয় দশক ধরে কাব্যচর্চা করছেন। তার প্রকাশিত কাব্যের শিল্পময় জীবনবাস্তবতা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে রচিত হয়েছে এই গ্রন্থ ‘আহমদ রফিক : জীবন বাস্তবতার নান্দনিক কবি’। ১৩টি প্রবন্ধ সংকলনের এই গ্রন্থটি রচনা করেছেন সত্তরের দশকের কবি মুনীর সিরাজ। এর আগে প্রকাশনা সংস্থা ‘অন্যপ্রকাশ’-এর আয়োজনে এ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে শুরু আলোচনা অনুষ্ঠান। এ আলোচনা পর্ব শুরু হয় অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলামের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে। এরপর বক্তব্য দেন বইটির লেখক কবি মুনীর সিরাজ। ‘আহমদ রফিক : জীবন বাস্তবতার নান্দনিক কবি’ গ্রন্থ সম্পর্কে লেখক মুনীর বলেন, কিংবদন্তি লেখক ও ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিকের ১২টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৩ সালে তার কবিতাসমগ্র প্রকাশ হয়েছে। এই কবিতাসমগ্রের ওপর ভিত্তি করে আমি বইটি লিখেছি। তার ৮৭তম জন্মদিন উপলক্ষে এ গ্রন্থটি প্রকাশ হয়েছে। এরপরই বইটি নিয়ে আলোচানা করেন অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। তারা বলেন, কবি মুনীর সিরাজ আহমদ রফিককে আমাদের সামনে নতুন করে ধরেছেন। আহমদ রফিক নিজে কবি, ৮৭ বছর তার বয়স। আর আহমদ রফিককে আমাদের মাঝে নতুনভাবে উপস্থাপনকারী মইনুল সিরাজ-তিনিও কবি, বয়স ৭০ বছর। মাত্র ১৭ বছরের পার্থক্যের এক কবি আমাদের সামনে নতুন করে তুলে ধরলেন অগ্রজ আরেক কবিকে। এটাই ভাললাগার বিষয়।
×