স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরিবর্তন আসছে রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর টেলিটকে। নতুন করে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পাশাপাশি ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফিরে আসবে কোম্পানিটি। ফেব্রুয়ারিতেই রি-ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য লোগোতে পরিবর্তন আসছে টেলিটক। একই মাসে বাংলা ডোমেইন ‘ডটবাংলা’ চালু করা হবে বলে জানান তিনি। তারানা হালিম জানান, আগামী ১২ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি এই বছর থেকেই মোবাইলে কলড্রপের ক্ষতিপূরণ চালু হবে। সরকারের দুই বছরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অর্জন নিয়ে বুধবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের গ্রাহক সেবা নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। এই কারণে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে টেলিটককে একেবারে রি-ব্র্যান্ডিং করা হবে। ফেব্রুয়ারিতে টেলিটকের নতুন লোগো আসবে। বর্তমানে টেলিটকের যে বিনিয়োগ রয়েছে তা নিয়ে প্রতিযোগিতায় যাওয়া কষ্টকর। আমরা চেষ্টা করছি। টুজি ও থ্রিজি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। টেলিটকের জন্য সহযোগিতা বা বিদেশী বিনিয়োগ আনতে আহ্বান জানানো হয়েছে। এ সময় নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল (এমএএনপি) শুরু হলে টেলিটকের অবস্থার উন্নতি হবে আশা করে তারানা হালিম বলেন, ইতোমধ্যে টেলিটক টপআপ এবং সেবার মান উন্নত করেছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। এ সময় টেলিটকের বিনিয়োগ নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী বলেন, টেলিযোগাযোগ খাতে মোট বিনিয়োগের মাত্র ৪ শতাংশ টেলিটকের, বাকি ৯৬ শতাংশ বেসরকারী অপারেটরগুলোর।
টেলিটকে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেয়া হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগে এ বিষয়ে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিল, পরে তা আবার বাতিল করা হয়েছে। নিয়োগের বিজ্ঞপ্তির শর্ত পরিবর্তন করে যোগ্যতম সৃজনশীল ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হবে। এর আগে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রয়ত্ত এই অপারেটরটি আগামী ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করেছিলেন প্রতিমন্ত্রী।
মাতৃভাষার প্রতি মর্যাদা জানিয়ে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলা ডোমেইন ‘ডটবাংলা’ চালু করা হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে বাংলা ডোমেইন চালু করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তা নিয়ে কাজ করে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড। এরপর ২০১১ সালে ডটবাংলা ডোমেইন ব্যবহারের অনুমোদন পাওয়া গেলেও তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠান নিযুক্ত করতে না পারায় দীর্ঘ সময়েও এটি চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে গত বছরের জুনে ডোমেইন কার্যকর করতে উদ্যোগ নেয় সরকার।
ডোমেইনটির অবস্থা জানতে চেয়ে ডোমেইন নেম সিস্টেম পরিচালনাকারী সংস্থা ইন্টারনেট কর্পোরেশন ফর এ্যাসাইন্ড নেমস এ্যান্ড নাম্বারস’ কে (আইসিএএনএন) চিঠি দেয় বিটিসিএল। জবাবে ডোমেইনটি বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ রয়েছে বলে জানানো হয়। ডটবাংলা ডোমেইনের নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে বিটিসিএল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ১২ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরে আলোচনায় বসবেন উল্লেখ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ফেসবুকের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। তারা আমাদের এখানে এসেছিল। এখন আমরা গিয়ে আলোচনা করব। আমরা চাই তাদের সঙ্গে ভাল একটি আদান-প্রদানের সম্পর্ক হোক।
একই সফরে গুগল ও মাইক্রোসফটের সঙ্গেও বৈঠক করবেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক মানদ- পশ্চিমা বিশ্বের মানদ-ের সঙ্গে মেলে না। তাই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুকে অনেক সময় নারীর প্রতি অবমাননাকর দৃশ্য দেখা যায়। তিনি বলেন, আমরা চাইব বাংলাদেশে যাতে ফেসবুকের একটি শাখা অফিস থাকে। দেশের মানুষ অনেক ফেসবুক ব্যবহার করেন। বাজার হিসেবেও বাংলাদেশ কম বড় নয়। তাই তারা যদি এখানে থাকেন তাহলে উভয়েরই কাজের সুবিধা হবে বলে জানান তিনি। তারানা বলেন, আসন্ন বৈঠকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কী পরিমাণ তথ্য চাওয়া হয়েছে ও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কী পরিমাণ তথ্য দিয়েছে তার একটি চিত্র আমরা তাদের কাছে চাইব। এর আগে ৬ ডিসেম্বর সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য ফেসবুকের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছিল।
মোবাইলে কথা বলার সময় নেটওয়ার্ক সমস্যা বা মোবাইল অপারেটরের যে কোন সমস্যার জন্য কল কেটে গেলে (কলড্রপ) গ্রাহকের যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয় তার সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেবে সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটররা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে কথা হয়েছে। দৈনিক কি পরিমাণ কলড্রপ হয় এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে গ্রাহককে কতটুকু ফেরত দেয়া হয় তার হিসাব কোম্পানিগুলো রাখবে।
তারানা হালিম বলেন, টেলিযোগাযোগ সেবার মান উন্নয়নের জন্য মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে কলড্রপ রোধ, নেটওয়ার্কের মান বৃদ্ধি, বিটিআরসির নির্দেশনা মেনে চলা, অবাঞ্ছিত প্যাকেজ বন্ধ করা কপিরাইট লঙ্ঘন রোধ করার বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে।
চলতি বছরের উল্লেখযোগ্য পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ফোরজি তরঙ্গ নিলাম, মোবাইল হ্যান্ডসেটের আইএমইআই রেজিস্ট্রেশন শুরু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের জন্য গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন স্থান, ইউনিয়ন পর্যন্ত থ্রিজি বিস্তার, মোবাইল নাম্বার পোর্টাবিলিটি চালু এবং দেশব্যাপী অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে ব্রডব্যান্ড সেবা প্রদান করা।