ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চলতি মাসে বোর্ড সভায় অনুমোদন

পাঁচ বছরে ৮১ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৭ জানুয়ারি ২০১৬

পাঁচ বছরে ৮১ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ আগামী পাঁচ বছরে (২০১৬ থেকে ২০ সাল পর্যন্ত) বাংলাদেশকে ১ হাজার ১০ কোটি মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৮১ হাজার কোটি টাকার বড় অঙ্কের সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। প্রতিবছর ২ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এ সহায়তা দেয়া হবে। কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় এ সহায়তা দেবে সংস্থাটি। প্রত্যেকবার চার বছর মেয়াদী সহায়তা দেয়া হলেও এবারই প্রথম সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে মিল রেখে পাঁচ বছর মেয়াদী সহায়তা কৌশল করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ইতোমধ্যেই এই ফ্রেমওয়ার্ক চূড়ান্তকরণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায় নিয়ে আসা হয়েছে বলে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকরে যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহরিন এ মাহবুব জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি চূড়ান্ত করতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ব্যাপকভিত্তিক কন্সালটেন্সী করা হয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে অনুমোদনের জন্য চলতি মাসের শেষ দিকে উপস্থাপন করা হতে পারে। সে লক্ষ্যেই অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদের সঙ্গে মিল রেখে পাঁচ বছর মেয়াদী ফ্রেমওয়ার্ক করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) এর মাধ্যমে সহজ শর্তে বাংলাদেশকে ঋণ দিয়ে থাকে। এ ঋণের জন্য বিশ্বব্যাংককে দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। এ ঋণ দশবছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের একটি অন্যতম ঋণ দাতা প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইডিএ এর মাধ্যমে মোট ১৫০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে সংস্থাটি। অবকাঠামো, মানব সম্পদ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ গুরুকত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সংস্থাটি বাংলাদেশকে ঋণ দিয়ে থাকে। তবে এবারই বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বিদ্যুত উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ খাতকে। এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডাইরেক্টর ইফফাত শরীফ বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা পাঁচ বছর মেয়াদী যে কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করছি সেখানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বিদ্যুত খাতকে। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য নিরসনে বিদ্যুত খাত বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। এ বিবেচনায় বিশ্বব্যাংক বিদ্যুত উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র তৈরিতে আপাতত বিশ্বব্যাংক যাবে না। এর আগে সর্বশেষ চার বছর মেয়াদী সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্কে বিশ্বব্যাংক প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহযোগিতা দিয়েছিল। কিন্তু এবার সেটি বাড়িয়ে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করা হচ্ছে। তবে এখনও চূড়ান্ত কোন অঙ্ক ইআরডিকে জানায়নি বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও বিশ্বব্যাংক ডেস্কের প্রধান কাজী শফিকুল আযম জনকণ্ঠকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে এখনও নিদিষ্ট করে কোন অঙ্ক জানানো হয়নি। তবে আমরা আশা করছি, সেটি চলতি যা আছে তার চেয়ে বেশি হবে। তিনি জানান, চলতি অর্থবছর যেমন আমরা এক দশমিক আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাব বলে মনে করছি। সেটি হয়ত নতুন ফ্রেমওর্য়াকে প্রতি অর্থবছরে দুই বিলিয়ম মার্কিন ডলারের কম হবে না। বরং তার চেয়ে বেশি হতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন বিশ্বব্যাংক আমাদের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। সে হিসেবে সহায়তার পরিমাণ বাড়তে পারে। সূত্র জানায়, গত নবেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর এ বৈঠকে বসে উন্নয়নসহযোগীরা। দুদিনের বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ২০২০ সালের মধ্যে আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। এটি খুবই উচ্চাভিলাষী নয়, কিন্তু চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এ ধরনের প্রবৃদ্ধি করতে হলে ক্ষমতা ও দায়িত্বশীলতার প্রয়োজন। তবে উন্নয়নসহযোগীরা বলেছে, এক্ষেত্রে তিনটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে যথেষ্ট বিনিয়োগ প্রয়োজন এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়াতে হবে। বৈঠকে ব্যাপক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে সরকারের সঙ্গে উন্নয়নে এক সঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে উন্নয়নসহযোগীরা।
×