ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঋণ পরিশোধে বাজারে আসলেও নতুন করে দায় বাড়াচ্ছে বিবিএস

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ৭ জানুয়ারি ২০১৬

ঋণ পরিশোধে বাজারে আসলেও নতুন করে দায় বাড়াচ্ছে বিবিএস

অপূর্ব কুমার ॥ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে টাকা উত্তোলনে বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেম (বিবিএস) কর্তৃপক্ষের ছলাকলার কৌশল আশ্রয় নিয়েছে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ঋণ পরিশোধ করবে বলে পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করে। কিন্তু কোম্পানিটি নিয়মিতভাবে ঋণ গ্রহণ শুরু করেছে, ফলে প্রতিনিয়তই কোম্পানির দায় বাড়ছে। ফলে নগদ লভ্যাংশ কমে যাওয়া নানা চাপ বাড়ছে শেয়ারধারীদের ওপর। আবার নতুন করে বাজার থেকে তুলে নেয়ার জন্য রাইট ছাড়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছে কোম্পানিটি। যদিও গত বছরে টাকা উত্তোলনের জন্য কোম্পানিটি বাজারে রাইট ছাড়ার আবেদন করলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন তা বাতিল করে দেয়। কারণ বিএসইসির নতুন আইন অনুযায়ী কোন কোম্পানির তালিকাভুক্তির অন্তত তিন বছর পর রাইট শেয়ার ছাড়তে পারবে। ফলে আর কোম্পানিটি রাইট শেয়ার ছাড়ার মাধ্যমে টাকা তুলতে পারেনি। জানা গেছে, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেম কোম্পানিটি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। উত্তোলিত টাকার ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ ও ১ কোটি ২০ লাখ টাকা আইপিওতে ব্যয় করা হবে বলে প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করা হয়। কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলিত টাকা দিয়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধ করেনি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করেছে তার চেয়ে বেশি নিয়েছে। এ বছরে কোম্পানিটি ৩ কোটি ৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকার ঋণ পরিশোধ করে। আর দীর্ঘমেয়াদি ঋণের কারেন্ট পোরশন হিসাবে ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকার ঋণ গ্রহণ বাড়ে। এ হিসাবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নিট ঋণগ্রহণ বেড়েছে ৬০ লাখ ৭৫ হাজার টাকার। অর্থাৎ কোম্পানিটি ঋণ পরিশোধের জন্য পুঁজিবাজারে আসলেও ঋণগ্রহণ করছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দীর্ঘমেয়াদি হিসাবে ৭ কোটি ৩ লাখ ৩০ হাজার, স্বল্পমেয়াদি হিসাবে ৩৯ কোটি ২৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের কারেন্ট পোরশন হিসাবে ২ কোটি ৪৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকার ঋণগ্রহণ বেড়েছে। অর্থাৎ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে নিট ঋণগ্রহণ বেড়েছে ৪৮ কোটি ৭৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকার ঋণ বেড়েছে। এ দিকে কোম্পানিটি ২০১৩ সালে আইপিওর মাধ্যমে ১৪ কোটি টাকা সংগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ারের মাধ্যমে আরও ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকার মূলধন বাড়ায়। এরপর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২০ শতাংশ বা ১৪ কোটি ৭২ লাখ টাকার ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২০ শতাংশ বা ১৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকার বোনাস শেয়ার প্রদান করে। কিন্তু তারপরও নিয়মিতভাবে ঋণে জড়াচ্ছে। কোম্পানিটির কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স বিভাগের শামীমুল ইসলাম বলেন, আগের ঋণ পরিশোধ করে নতুন ঋণ নেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় ঋণ পরিশোধের জন্য পুঁজিবাজারে আসার উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় কিনা এমন প্রশ্নে বলেন, ঋণ পরিশোধ করে আর নেব না এমন কমিটমেন্ট তো করি নাই। ব্যয় কমাতে ঋণ পরিশোধের জন্য পুঁজিবাজারে এসে আবার গ্রহণ এতে ব্যয় বাড়বে না এমন প্রশ্নে শামীমুল ইসলাম বলেন, কিছু করার নাই। আমরা বাজার থেকে মাত্র ১৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে পেরেছি। অথচ বুক বিল্ডিং এ আসার জন্য ৩ বছর অপেক্ষা করার পরে তা বাদ করে দেয়া হয়। যদি প্রিমিয়াম আদায় করতে পারতাম, তাহলে হয়তো এই ঋণে জড়াতে হতো না। সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো পার শেয়ার ছিল ০.০২ টাকা। আগের বছর ছিল ১.৫৭ টাকা। এ হিসাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কোম্পানিটির নগদ লভ্যাংশ দেয়ার মতো কোন ক্ষমতা ছিল না। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কোম্পানিটি ৩৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকার ফিক্সড এ্যাসেট ক্রয় করেছে। এ হিসাবে কোম্পানিটি সম্পদ ক্রয় বাবদ পাওনাদারকে টাকা প্রদান করার কথা। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সম্পদ ক্রয় করলেও ক্রয়কৃত সম্পদের বিপরীতে টাকা গ্রহণ করেছে বলে নগদ প্রবাহে উল্লেখ করেছে। তালিকাভুক্তির পরও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে কোম্পানিটির মুনাফা। তালিকাভুক্তির পূর্বের ২০১২-১৩ অর্থবছরের ৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার মুনাফা ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ২২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আরও বেড়ে হয়েছে ২৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
×