ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বালানি তেলের জ্বালা

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৭ জানুয়ারি ২০১৬

জ্বালানি তেলের জ্বালা

জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমশ কমে আসছে। কিন্তু জ্বালানি তেলের জ্বালা সয়ে যেতে হচ্ছে দেশবাসীকে। কারণ বিশ্ববাজারের সঙ্গে দামের সমন্বয় করা হচ্ছে না। দেশীয় বাজারে আগের দামের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত দামেই দীর্ঘদিন ধরে তেল বিক্রি হচ্ছে। আমদানিনির্ভর এ পণ্যের দাম গত চার বছরে আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দ্বিগুণ দামে ক্রয় করতে হচ্ছে দেশীয় ক্রেতাদের। দাম না কমানোর পক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে মোক্ষম একটি যুক্তিও দাঁড় করানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন দীর্ঘকাল ধরে বেশি দামে জ্বালানি তেল কিনে কম দামে বিক্রি করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দামে ধস নামায় এ সুযোগে সে লোকসান পুষিয়ে নেয়া হচ্ছে। এ খাতের আগের লোকসান ইতোমধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব হয়েছে। বিশ্ববাজারে তেলের দামের নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকায় এবং তেলের দাম খুব শীঘ্রই বাড়বে এমন কোন পরিস্থিতি না হওয়ায় দেশের ব্যবসায়ী সমাজ তেলের দাম কমানোর দাবি করে আসছে। এমনিতে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কথা বলে ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দেন, কিন্তু বিশ্ববাজারে দাম কমলেও সচরাচর দেশের বাজারে দাম কমে না। বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বরাবরই থাকে অকার্যকর। তাই জনগণকে সেই বর্ধিত মূল্যের বোঝা টানতে হয় বাধ্য হয়ে। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বিশ্ববাজারে ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ১২০ ডলার। তখন বাংলাদেশে লিটারপ্রতি জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারিত হয় অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রোল ৯৭ টাকা, ডিজেল ও কেরোসিন ৬৮ টাকা। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমতে কমতে দু’সপ্তাহ আগে দাঁড়িয়েছে ৩৫ ডলারে। ইতোমধ্যে ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতেও দফায় দফায় তেলের দাম কমানো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এক পয়সাও দাম কমেনি। দেশে জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় ভোক্তা সরকারের বিদ্যুত খাত। বর্ধিত মূল্যে তেল কেনার কারণে তারা ক্রমাগত বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে চলেছে। আর জনগণ সেই বোঝা টানছে। পরিবহন খাতেরও একই অবস্থা। যাত্রী ভাড়া বেড়েছে। বেড়েছে পরিবহন ব্যয়। অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয়ের অজুহাতে পণ্যমূল্যও অনেক বেড়েছে। নিত্যদিন সেই বোঝা টানছে জনগণ। একইভাবে শিল্প, কৃষি বা বিভিন্ন সেবা খাতেও তার প্রভাব পড়ছে। ২০১৩ সালে বিশ্ববাজারে তেলের দাম যা ছিল, সে তুলনায় বর্তমানে দাম প্রায় তিনভাগের একভাগে নেমে এসেছে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে দেশের জনগণকে যদি এর চাপ নিতে হয়, তবে দাম কমার ফলে স্বস্তির ভাগীদারও কেন জনগণ হবে না? এক হিসেবে দেখা গেছে, লিটারপ্রতি ডিজেলে ১০ ও অকটেনে ২০ টাকা কমানো হলে সরকারের খুব বেশি মুনাফা কমবে না। দাম কমালে মূল্যস্ফীতি কমবে। আর তা দু’ভাবে অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে। প্রথমত. মূল্যস্ফীতি কমলে তা ভোক্তা চাহিদা বাড়িয়ে দেবে। ভোক্তা চাহিদা বাড়লে উৎপাদন বাড়বে। আর উৎপাদন বাড়লে তা প্রবৃদ্ধিকেও বাড়িয়ে দেবে। দ্বিতীয়ত. মূল্যস্ফীতি কমলে সুদের হার কমবে, এতে বাড়বে বিনিয়োগ। বিনিয়োগ বাড়লে তা উৎপাদনকে বাড়িয়ে দেবে। উৎপাদন বাড়লে প্রবৃদ্ধিও বাড়বে। ব্যবসায় খরচ কমানোর অন্যতম বড় সুযোগ হলো জ্বালানি খরচ কমানো। উৎপাদন পর্যায়ের বড় একটি অংশই খরচ হয় এ জ্বালানি বাবদ ব্যয়ে। এখন যদি দাম আংশিকও কমানো হয় তবে ২০১৬ সালে যে বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টার কথা বলা হচ্ছে, তাতে কাজে লাগবে, ব্যবসায় খরচ কমলে বিনিয়োগ বাড়বে। বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। উৎপাদনশীলতার কারণে রাজস্বও বাড়বে। তাই সবদিক বিবেচনায় এনে তেলের দাম দ্রুত পুনর্নির্ধারণ বা যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনা হবে বলে আশা করা যায়।
×