ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জীবন-কাঁথায় স্বপ্নের বুনন

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৭ জানুয়ারি ২০১৬

জীবন-কাঁথায় স্বপ্নের বুনন

হাসান শিবলী বছর যায়, বছর আসে। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫-এর সন্ধ্যায় যে পাখিটা উড়ে নীড়ে ফিরে এসেছে, ঠিক পরদিন সকালে সে উড়াল দিল যে আকাশে সে আকাশটা ২০১৬-এর। এক নতুন বছর, নতুন দিন। পুরনো কিছু স্বপ্নের অবয়ব দেখার হাতছানি কিংবা আবার জীবনের কাঁথায় নতুন করে কিছু স্বপ্নের বুনন! পাখি তো আর এতসব বোঝে না। তার ক্যালেন্ডার নেই। তার কাছে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তই ক্যালেন্ডার। অন্ন অন্বেষণ, কিচিরমিচির, আকাশবিহারই তার কর্ম। মানুষ পাখি নয়। মানুষের ক্যালেন্ডার আছে। ধর্ম আছে, কর্ম আছে, বেঁচে থাকার জন্য অবিরত লড়াই আছে, আছে আশা-আকাক্সক্ষার ফুলঝুরি, হতাশার ভরাডুবি আর বুকভরা ভালবাসা। নতুন বছরে মানুষ নক্সা করে আগামী জীবনের, কিছু আশায় নিজেকে জড়িয়ে নেয়, ব্যর্থতার বুক খুঁচিয়ে নতুন শুরু করে, নতুন শপথ নেয়। আমরা দেশকে ভালবাসি, আমরা নিজেদের ভালবাসি। দেশকে এগিয়ে নিতে চাইলে নিজেদের এগিয়ে নিতে হবে। গত বছরের ব্যর্থতার সব দায়ভার শুধু আমাদের দুর্ভাগ্যের নয়, কর্মেরও। তেমনি গত বছরের সাফল্যও স্রেফ ভাগ্যের জোরে নয়, কর্মের জয়ে এসেছে। যে থার্টিফার্স্ট নাইট ছিল গত ও আগত দুই বছরের সন্ধিক্ষণ, সে রাতে আমরা শুধু আনন্দ করেছি নতুন বছরটাকে বরণ করে নেয়ার জন্য। কোন্ ফাঁকে যেন বাদ গেছে বিগত বছরের যত দুঃখ-গ্লানি-ব্যর্থতা-কষ্ট-নষ্টের কারণ বিশ্লেষণ। তাই বরাবরের মতো নতুন বছর সেই পুরনোর অনাহূত টার্মগুলোকেই চক্রাকারে নিয়ে আসতে থাকে। নতুন বছরের নতুন সূর্যটা ঠিক ভরসা দেয় না। থার্টিফার্স্টের পরদিন রাত সব আগের চক্রেই চলে। আমি রাস্তায় যেখানে সেখানে ময়লা ফেলছি, ফুটপাথে সাইকেল-মোটরসাইকেল তুলে দিচ্ছি, যানজটে পড়লে ট্রাফিক পুলিশকে গালি দিচ্ছি অথচ নিজেই গাড়ি পার্কিং বা ট্রাফিক রুলের ধার ধারি না, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, তারিয়ে-তারিয়ে ফুটপাথের দেয়ালে জলবিয়োগ করি। সকালে এসে গোয়ালা দুধ-পানির সংমিশ্রণে আমাকে ঠকাচ্ছে, অফিসে এসে আমি শত শত লোককে ঠকাচ্ছি, আমার মানিব্যাগে বেতনের চেয়েও বেশি টাকা ভরা থাকে। আমার গিন্নি সন্ধ্যায় স্টার জলসায় চক্ষু-কর্ণের সক্রিয় সমবায়ে বুঁদ হয়ে বসছে, আমার সন্তান তখন আমাকে জিজ্ঞাসা করছে, ড্যাডি একুশে ফেব্রুয়ারিতে কতজন ফ্রিডম ফাইটার মারা গিয়েছিল? গত বছরের শুরুর সময়গুলো ছিল বিভীষিকাময়। জানুয়ারিতে আমাদের ভাই-বোনদের ঝলসে যেতে দেখেছি। আমাদের ভেতরটা ঝলসে গেছে তা দেখে না অনেকেই। সন্ত্রাসী আগ্রাসন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। আমরাই রাস্তায় কুপিয়েছি নিজেদের। রাজনকে হত্যা করেছি আমরাই। অতীতে দুর্নীতিতে সেরা রেকর্ডও গড়েছি। এই আমরাই আবার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করছি কথিত অভিযোগের বিরুদ্ধে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে, এই আমরাই চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ জিতেছি। আমরা গত বছর মরে বা পচে যাইনি। আমাদের অসংখ্য সম্ভাবনার কলি আছে, সেগুলো ফোটাতে হবে। বিশৃঙ্খলতার টুঁটি চেপে ধরে এগোতে হবে। আমাদের হতে হবে সৎ, কর্মঠ। আমাদের সফলতা দেশের সফলতা, আমাদের ব্যর্থতা দেশের ব্যর্থতা। নতুন বছরের নতুন দিনগুলো আমাদেরই জয়গান গাক। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×