ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আইসিস দমনে কঠোর ভূমিকার পক্ষে হিলারি

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৬ জানুয়ারি ২০১৬

আইসিস দমনে কঠোর ভূমিকার পক্ষে হিলারি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের মনোনয়ন প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন আইসিসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কঠোর ভূমিকা নেয়ার পক্ষপাতী। তিনি বিমান যুদ্ধের টার্গেট আরও প্রসারিত করার অনুকূলে। তবে তিনি বলেন, কার্পেট বোম্বিংয়ের মাধ্যমে মরুভূমিকে অগ্নিকু-ে পরিণত করলেই নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করে তোলা যায় না। মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়ে রিপাবলিকান মনোনয়ন প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এক ধরনের উন্মাদনা সৃষ্টি করার পর হিলারি ডিসেম্বরের এক সন্ধ্যায় নিউ হ্যাম্পশায়ারের সালেমে নগরবাসীর সঙ্গে এক সভায় মিলিত হন। সেখানে হিলারি ট্রাম্পের ওই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন। সেই সঙ্গে মার্কো রুবিওকেও এক হাত নিতে ছাড়েননি। এরপর তিনি সরাসরি প্রশ্নোত্তর পর্বে যান। তাকে কয়েক ডজন প্রশ্ন করা হয়। তবে একটাও র‌্যাডিক্যাল ইসলামী সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি একক বৃহত্তম হুমকি বলে যে বিষয়টিকে অনেক আমেরিকান দেখে থাকেন ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের সে বিষয়টির ধারেকাছে দিয়ে না যাওয়াটা অনেককেই বিস্মিত করেছে। এমনকি হিলারি নিজে বেশ কয়েকবার তার উত্তরগুলো ওই প্রসঙ্গের দিকে নেয়ার চেষ্টা করলেও উপস্থিত জনম-লীর দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। নিউ হ্যাম্পশায়ার ডেমোক্র্যাটদের একটা ঘাঁটি বিশেষ। সেখানে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে মনমতো উত্তর দেয়া না গেলে ঝুঁকির মুখে পড়তে হতে পারে। বলাবাহুল্য, সন্ত্রাস ও জাতীয় নিরাপত্তা এখন আমেরিকানদের কাছে সবচেয়ে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইদানীং হিলারি এই ইস্যুটি নিয়ে বেশ বলাবলি করছেন। প্যারিস হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তার ওপর তিনটি ভাষণ দিয়েছেন। আইসিস মোকাবেলায় বেশ কঠিন কঠোর ভাষণ। বলা যেতে পারে এটা আইসিস দমনের এক ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোগ। হিলারি দেশবাসীকে এই মর্মে আশ্বস্ত করার ও বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, স্বদেশজাত সন্ত্রাসবাদ রোধে তিনিই সবচেয়ে উপযুক্ত প্রার্থী। তার সন্ত্রাস দমন কৌশলে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেয়া হয়েছে তেমনি মুসলিম সমাজকেও তাদের মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। হিলারি স্বদেশে উৎপন্ন র‌্যাডিক্যাল ভাবধারা মোকাবেলা এবং কার্যকর করতে পারার আগে সন্ত্রাসবাদী ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটন ও ব্যর্থ করে দেয়ার পাঁচ দফা পরিকল্পনা ব্যক্ত করেছেন। তিনি সন্ত্রাসবাদের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত দেশগুলোতে যারা গিয়েছিল এমন ব্যক্তিরা মার্কিন ভিসার আবেদন করলে তাদের স্ক্র্যানিংয়ের প্রক্রিয়া জোরদার করার প্রস্তাব দিয়েছেন। হিলারি বলেন, আইসিসের রাশ টেনে ধরাই যথেষ্ট নয়। এর মেরুদ-ও ভেঙ্গে দিতে হবে। হিলারি রিপাবলিকান প্রার্থীদের মতো মুসলমানদের ওপর খড়গ্হস্ত হতে চাননি। বরং সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে তাদেরও শামিল করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে মার্কিন মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার আছে। স্বদেশজাত র‌্যাডিক্যাল ভাবধারা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তারা হতে পারে আমাদের প্রথম, শেষ ও সর্বোত্তম প্রতিরক্ষা। হিলারি আগের বক্তব্যগুলোর জের টেনে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে জঙ্গী ওয়েবসাইট ও সাঙ্কেতিক যোগাযোগ বার্তাগুলো আটকে দিয়ে বা অপসারণ করে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান। হিলারি সেই পর্যায় পর্যন্ত গিয়েছেন যেখানে কোন রিপাবলিকান আজ পর্যন্ত যাননি। তিনি সেদিকের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন বিশ্বের সর্বত্র যেসব সংগঠন, স্কুল, মাদ্রাসা-মসজিদ অসংখ্য তরুণকে উগ্রবাদের পথে ঠেলে দিয়েছে সৌদি নাগরিকদের উচিত তাদের অর্থ যোগানো বন্ধ করে দেয়া। হিলারি ইরানের ব্যাপারেও কঠোর বক্তব্য দিয়েছেন। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনে দর্শকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পারমাণবিক চুক্তির সামান্যতম লঙ্ঘন হলেও তার পরিণতি ইরানকে ভোগ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কৌশলটা হবে অবিশ্বাস করা ও খতিয়ে দেখা।’ তার মুখ দিয়ে এমন কথাও বেফাঁস বেরিয়ে যায় যে ইরান চুক্তি লঙ্ঘন করলে এর ‘পারমাণবিক’ জবাব দেয়ার সম্ভাবনাও তিনি নাকচ করে দেবেন না। দর্শকদের মধ্যে উপবিষ্ট বিচারপতি স্টিফেন ব্রেয়ার কথাটা সংশোধন করে দিয়ে বলে ওঠেন ‘সামরিক জবাব’। হিলারি তখন দ্রুত নিজেকে সামলে নেন। অবশ্য হিলারি মনোনয়ন লাভের জন্য বেশ জমজমাট প্রচারাভিযান চালাচ্ছেন এমন নয়। জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে বেশ সাহসী ভূমিকায় দেখা গেলেও অভ্যন্তরীণ অনেক নীতিতে তাকে বেশ ভীরু বলে মনে করছেন অনেকে। দলের নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিক্ষা, বাণিজ্য ও সরকারের সংস্কারের প্রশ্নে তার মধ্যে একটা গোটানো ভাব লক্ষ্য করা গেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে তিনি কিছু গুরুতর ভুল করেছিলেন সেটাও মার্কিন নাগরিকরা ভুলে যাননি। তথাপি আসছে নির্বাচনে হিলারির জয়লাভের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়ার মতো নয় বলে মনে করেন পর্যবেক্ষক মহল। সূত্র : টাইম
×