ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোকসানা বেগম

চ্যালেঞ্জ জাহানারাদেরও

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৬ জানুয়ারি ২০১৬

চ্যালেঞ্জ জাহানারাদেরও

বাংলাদেশে হওয়া ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপে যেমনটি হয়েছে, ভারতে অনুষ্ঠেয় এ বছরের টি২০ বিশ্বকাপেও তেমনটি দেখা যাবে। বাংলাদেশ এবারও গ্রুপ পর্বে ভারত, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলবে। শুধু এবার শ্রীলঙ্কা প্রতিপক্ষ নেই। আছে পাকিস্তান। সেবারের বিশ্বকাপে স্বাগতিক হিসেবে সুযোগ পেয়ে সরাসরি খেলেছিল বাংলাদেশ। এবার বাছাইপর্ব উতরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নিয়েছে। এ অর্জনকে আরও মধুর করতে প্রস্তুত হচ্ছেন জাহানারা আলমবাহিনী। যেন টি২০ বিশ্বকাপেও ভাল করা যায়। সামনে টি২০র ভরা মৌসুমে ঝাঁপ দিতে রবিবার থেকে প্রস্তুতি শুরু করেছেন মাশরাফি, তামিম, মুশফিকরা। সেই কাজটি ৩০ ডিসেম্বর থেকেই শুরু করে দিয়েছেন জাহানারা, আয়েশা, সালমা, পান্নারা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে চলছে তাদের অনুশীলন। টি২০ বিশ্বকাপের উদ্দেশ্যে শুরু হওয়া সেই অনুশীলনের তত্ত্বাবধানে আছেন বাংলাদেশ মহিলা দলের শ্রীলঙ্কান কোচ চাম্পিকা গামাগে। ভারতে ১৫ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় মহিলা টি২০ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে অনুশীলন ক্যাম্প চলছে। ক্যাম্পে প্রাথমিক দলে ডাক পেয়েছেন ২৩ ক্রিকেটার। প্রথমদিনের ক্যাম্পে প্রাথমিক দলের ২৩ মহিলা ক্রিকেটারের মধ্যে ১৭ জন উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন না সালমা খাতুন, শুকতারা রহমান ও রুমানা আহমেদসহ ছয় ক্রিকেটার। ধীরে ধীরে যোগ দিয়েছেন সবাই। প্রথমদিনের অনুশীলনে জাহানারা আলমরা ফুটবল খেলার পর ওয়ার্মআপ সারেন। এরপর জিমে গিয়ে ফিটনেস ট্রেনিং করেন। সেই ফিটনেস ট্রেনিং এখনও চলছে। বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ক্যাম্পের প্রথম ১০ দিন ফিটনেস নিয়েই কাজ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ নারী দলের প্রধান কোচ চাম্পিকা গামাগে। এ ছাড়া প্রাথমিক দলে ডাক পাওয়া খেলোয়াড়দের কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিজেদের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলারও চিন্তা-ভাবনা করছেন এই লঙ্কান কোচ। বাংলাদেশ নারী দলের টি২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সম্পর্কে অধিনায়ক জাহানারা আলম বলেন, ‘ভারতে অনুষ্ঠেয় টি২০ বিশ্বকাপে আমাদের লক্ষ্য ভাল খেলা। সে লক্ষ্যেই আমরা প্রস্তুত হচ্ছি। ওখানে ভাল করার জন্য আমরা কঠোর পরিশ্রম করতেও প্রস্তুত রয়েছি।’ স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে ১৫ মার্চ ব্যাঙ্গালুরুতে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের প্রথম ম্যাচ। এরপর একই ভেন্যুতে ১৭ মার্চ ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ নারী দল। চেন্নাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচটি ২০ মার্চ। এরপর দিল্লীতে ২৪ মার্চ গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশের মেয়েরা। গত বছরটিতে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হিসেবেও বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব উতরানোকে বলছেন টি২০ অধিনায়ক জাহানারা। জানিয়েছেন, ‘আমরা বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করলাম। পরবর্তী বছরে আমরা বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছি। তো খুব বেশি টুর্নামেন্ট না পেলেও আমি মনে করি এটা আমাদের অনেক বড় অর্জন।’ এর আগে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল কোন ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেনি। শুধু ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপে খেলে। তাও বাংলাদেশে হওয়ায় আয়োজক হিসেবে সেটিতে সরাসরি খেলার সুযোগ পায়। কোন বাছাইপর্ব খেলতে হয়নি। এবার যোগ্যতা দেখিয়েই বাছাইপর্ব উতরে গিয়েছে। এখন বিশ্বকাপে নামার অপেক্ষা। ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপে চার ম্যাচের মধ্যে শুধু শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পেরেছে বাংলাদেশ। এবার চারটি প্রতিপক্ষই কঠিন। তবুও ভাল করার যে আশা আছে, তাতে অন্তত একটি ম্যাচ জয়ের হিসেবতো থাকছেই। সালমা খাতুন ছিলেন নিয়মিত অধিনায়ক। কিন্তু তার নেতৃত্বে যখন স্বল্পওভারের ম্যাচে বাংলাদেশ খুব ভাল করতে পারছিল না তখন পেস বোলার জাহানারার কাঁধে গত বছর নবেম্বরের শেষে নেতৃত্ব তুলে দেয়া হয়। তাতেই চমকও মিলে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে কক্সবাজারে দুটি ম্যাচ খেলে দুটিতেই জয় মিলে। জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে দেয় বাংলাদেশ। ঠিক যেমন মুশফিকুর রহীমের কাছ থেকে নেতৃত্ব কেড়ে নিয়ে ২০১৪ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে অধিনায়ক করা হয়। তাতেই দলের ভাগ্যেরও পরিবর্তন ঘটে যায়। একইভাবে যেন জাহানারার বেলাতেও ঘটে, মহিলা ক্রিকেট দলের বেলাতেও ঘটে। নেতৃত্ব পেয়ে প্রথম সিরিজ জয়কে তাই বছরের সেরা প্রাপ্তির খাতাতেই রাখছেন জাহানারা। বলেছেন, ‘খুবই ভাল বছর গেছে। অনেক ভাল অর্জন ছিল। যেমন আমরা জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করলাম।’ জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করার পর ক্রিকেটারদের ভেতরেও যেন আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। সালমার নেতৃত্বে যেখানে ২০১৫ সালে তিনটি টি২০ খেলে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১টি হার হয়। আর দুটি ওয়ানডেতেই পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের স্বাদ মিলে। সেখানে জাহানারার ছোঁয়ায় শুধু জয়ই ধরা দেয়। যদিও টি২০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে ফাইনালে উঠেই টি২০ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নেয়। সেমিফাইনালে জিম্বাবুইয়েকে হারানোর আগে গ্রুপ পর্বে থাইল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও পাপুয়া নিউগিনিকে হারায় জাহানারারা। ফাইনালে আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে জয়টিই বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে, তা পুঁজি করেই ২০১৬ সালটি রাঙ্গিয়ে তুলতে চান জাহানারা। বলেছেন, ‘জয় মানেই আত্মবিশ্বাস বাড়া। আর আমরা ভালভাবেই জিতেছি।’ সঙ্গে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব নিয়ে টি২০ অধিনায়ক বলেন, ‘যে কোন কারণে হয়তো আমরা ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। তারপরও আমি মনে করি আমরা অনেক ভাল ক্রিকেট খেলেছি। এই জয়ের রেশ আমাদের পরবর্তী টুর্নামেন্টে অনেক কাজে আসবে।’ এ জন্য সবার আগে ফিটনেস নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। ‘শরীর ফিট, তো সব হিট’ ফর্মুলাই যে সাফল্য এনে দেয়। জাহানারা বললেন, ‘আমরা সবাই ক্যাম্প শুরু করেছি ফিটনেসের স্কিল দিয়ে। আমাদের হাতে এখনও দুইমাসের মতো সময় আছে। ফিটনেসের ওপর কাজ করছি। আমরা ভাল কিছু করতে পারব।’ এখন সামনে এগিয়ে যেতে চান জাহানারাকে। তিনি নিজেই বললেন, ‘একমাত্র একাত্ম হয়ে থাকব সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এবং যার যতটুকু আছে শুধু ততটুকুই যদি আমরা দিতে পারি, বাংলাদেশকে জয় এনে দিতে পারব।’ ২০১৫ সাল যেমন মাশরাফিদের স্বর্ণময় বছর গেছে, তেমনি মহিলা ক্রিকেটারদের জন্যও ভাল সময় মিলেছে। তা পুঁজি করে এখন ২০১৬ সালটিও রাঙ্গিয়ে দিতে পারলেই হয়। টি২০ বিশ্বকাপে ভাল কিছু অর্জন করতে পারলেই হয়।
×