ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ নুরুজ্জামান

ডাবল সেঞ্চুরিতে উদ্ভাসিত বেন স্টোকস

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৬ জানুয়ারি ২০১৬

ডাবল সেঞ্চুরিতে উদ্ভাসিত বেন স্টোকস

এক ডাবল সেঞ্চুরিতে ক্রিকেট বিশ্বকে মাত করে দিয়েছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যেন মনোমুগ্ধকর উইলোবাজির প্রদর্শনীই হয়ে গেল। হ্যাঁ স্টোকস প্রতিভাবান, তাই বলে এতটা করে ফেলবেন, সেটি হয়ত তিনি নিজেও ভাবেননি। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরিটাকে ডাবল সেঞ্চুরিতে রূপ দেয়ার পথে ইংলিশ ব্যাটসম্যান ইতিহাসের একাধিক রেকর্ডই নাড়িয়ে দিয়েছেন। কেপটাউন টেস্টের প্রথম ইনিংসে খেলেছেন ২৫৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস, যার ওপর ভর করে ৬ উইকেটে ৬২৯ রানের বিশাল স্কোর গড়ে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে সফরকারী ইংল্যান্ড। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য স্টোকসের সুনাম আছে। তাই বলে র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল প্রোটিয়াদের তাদেরই মাটিতে এভাবে চোখের জল-নাকের জলে এক করে দেবেন? নির্দিষ্ট করে বললে কেপটাউন টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই প্রতিপক্ষ বোলারদের এমন কচুকাটা করলেন, টেস্টে দ্বিতীয় দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডটাই নিজের করে নিলেন স্টোকস। এখানেই থামেননি ইংলিশ ব্যাটসম্যান, আরও বেশ কয়েকটি রেকর্ড করে ফেলেছেন এই এক ইনিংসেই। প্রথম দিন শেষে ৭৪ বলে অপরাজিত ছিলেন। ৯৩ বলে ৭৪ রান নিয়ে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় দিনে এই বাঁহাতি নিজের ‘আসল চেহারা’ দেখালেন, জাতটাকেও চেনালেন নতুন করে। লাঞ্চের আগেই ৭৪ বলে ১৩০ রান যোগ করে পূর্ণ করেছেন নিজের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। ২০০ ছুঁতে লেগেছে মাত্র ১৬৩ বল। ২০০১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের নাথান এ্যাস্টল ১৫৩ বলে ২শ’র পথে গড়েছিলেন দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড। এদিন বেশ কিছুক্ষণ সেই রেকর্ডকে হুমকির মুখে রেখে শেষ পর্যন্ত পারলেন না মাত্র দশটি বলের জন্য। টেস্টে দ্বিতীয় দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডটা এতদিন ছিল বিরেন্দর শেবাগের দখলে। ২০০৯-১০-এ মুম্বাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৬৮ বলে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন সাবেক ভারতীয় ওপেনার। এ্যাস্টলের রেকর্ড হাতছাড়া হলেও এর মধ্য দিয়েই স্টোকস রেকর্ড বইয়ে বেশকিছু ওলটপালট এনে দিয়েছেন, যার মধ্যে প্রথমটি অনেকটাই অবিশ্বাস্য। ১৩৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে ছয়ে নেমে কখনই ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারেনি কোনা ইংলিশ ব্যাটসম্যান। প্রথম ইংলিশ হিসেবে সেই কীর্তি গড়ে ট্রিপল সেঞ্চুরির দিকে ছুটে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সতীর্থের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হয়েছেন ২৫৮ রানে। ৩৩৮ মিনিটে ১৯৮ রানের ইনিংসটি ৩০ চার ও ১১ ছক্কায় সাজানো। তবে আউট হওয়ার আগে একটি বিশ্বরেকর্ড ঠিকই গড়ে ফেলেছেন। দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনেই করেছেন ১৩০ রান, যা টেস্টের যে কোন দিনের প্রথম সেশনে (লাঞ্চের আগে) সবচেয়ে বেশি রান তোলার বিশ্বরেকর্ড! লেস এ্যামেস ১৯৩৫ সালে ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই প্রথম সেশনে ১২৩ রান করেছিলেন। ৮০ বছর পর সেই রেকর্ড ভাঙলেন আরেক ইংলিশম্যান। ২২৩ রানে পঞ্চম উইকেট পড়ার পর জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে সাড়ে ৩শ’ ছাড়ানো এক জুটিও গড়েছেন তিনি। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ইংল্যান্ডের নতুন রেকর্ড জুটি ভাঙ্গার পর ভেঙ্গেছেন বিশ্বরেকর্ডও। মাত্র ৫৭.৩ ওভারে ৩৯৯ রান যোগ করেন স্টোকস-বেয়ারস্টো। এর আগে ষষ্ঠ উইকেটে কেন উইলিয়ামসন ও বিজে ওয়াটলিং গড়েছিলেন ৩৬৫ রানের জুটি। আফসোস, ১ রানের জন্য প্রথমবারের মতো ৪০০ দেখল না ষষ্ঠ উইকেট জুটি। এখানেই শেষ নয়, আরও একটি রেকর্ডে নাম উঠিয়েছেন স্টোকস-বেয়ারস্টো। আড়াই শ’ ছাড়ানো জুটির ক্ষেত্রে সবচেয়ে দ্রুততম রান তোলা জুটি এটিই। স্টোকস তা-বে চাপা পড়ে গেছে বেয়ারস্টোর সেঞ্চুরি। ১৯১ বলে ১৮ চার ও ২ ছক্কায় ঠিক ১৫০ রান নিয়ে অপাাজিত থাকেন তিনি। ২২তম টেস্টে ইংলিশ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান বেয়ারস্টোর এটি প্রথম সেঞ্চুরি। স্টোকসের দুরন্ত ব্যাটিংয়ে ঝড় উঠেছে টুইটার দুনিয়ায়। নিউজিল্যান্ডের বংশোদ্ভূত ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সাবেক তারকারা। এ্যাডাম গিলক্রিস্ট, মাইকেল ভন, পল কলিংউড, গ্রাহাম অনিয়ন্স- কে নেই সেখানে। স্টোকস দ্যুতিতে সবাই মুগ্ধ। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক হাসিম আমলা যেমন বলেন, ‘সত্যি বলতে টেস্ট ক্যারিয়ারে মাঠে দাঁড়িয়ে দেখা আমার সেরা ইনিংস এটি। স্টোকস বোলারদের এক ইঞ্চি জায়গা দিচ্ছিল না। সে সহজাত এক ব্যাটসম্যান, যে বোলিংটাও ভাল করে।’ স্টোকসের তাণ্ডব দেখে সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভন টুইট করেন, ‘এখন পর্যন্ত আমি বেন স্টোকসের মধ্যে একজন গিলক্রিস্ট আর গ্যারি সোবার্সের মিলিত রূপ দেখতে পেলাম। ধন্যবাদ বেন!’ টেস্টে দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির মালিক নাথান এ্যাস্টলকে পেছনে ফেলতে পারেননি। তবে ইয়ান বোথামকে পেছনে ফেলে ইংল্যান্ডের হয়ে দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি ঠিকই করেছেন। ১৯৮২ সালে ভারতের বিপক্ষে বোথাম ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন ২২০ বলে। স্কাই স্পোর্টসের ধারাভাষ্যকার হিসেবে মাঠে বসেই নিজের রেকর্ডটা ভেঙ্গে যেতে দেখেছেন বোথাম। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম যাঁকে এরই মধ্যে ‘নতুন বোথাম’ বলতে শুরু করেছে, সেই স্টোকসকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত কিংবদন্তি ইংলিশ অলরাউন্ডারও। বোথাম বলেন, ‘বেন স্টোকস সত্যিকার বক্স অফিস। আজ ও যা করল, তা ওর সামর্থ্যরে ক্ষুদ্র এক অংশ।
×