ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২ হাজার ৩৯৯ জনের সনদ বাতিল হবে

পাঁচ হাজার ৮৪৯ নতুন মুক্তিযোদ্ধার গেজেট প্রকাশের সুপারিশ

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৬ জানুয়ারি ২০১৬

পাঁচ হাজার ৮৪৯ নতুন মুক্তিযোদ্ধার গেজেট প্রকাশের সুপারিশ

নাজনীন আখতার ॥ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করার জন্য ৪ হাজার ৮৪৯টি আবেদনকে সঠিক উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। পাশাপাশি ১২৪ জন নারী মুক্তিযোদ্ধার (বীরাঙ্গনা) নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত ও গেজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রামাণ্য কাগজপত্র না থাকায় ২ হাজার ৩৯৯ জন মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে এ সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিয়েছে জামুকা। প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এখন পর্যন্ত গেজেটভুক্ত হননি তাদের গেজেটভুক্ত করার জন্য যাচাই বাছাই করে সরকারের কাছে সুপারিশসহ তালিকা পাঠিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটভুক্ত করার জন্য ইতোমধ্যে জামুকার ৩৩টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভাগুলোতে ১ লাখ ২৫ হাজার আবেদন এবং ন্যাপ-কমিউনিস্ট গেরিলা বাহিনীর ৪ হাজার ৪৪৫ জনের একটি তালিকা উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে গেজেটভুক্ত করার জন্য সঠিক বিবেচিত ৪ হাজার ৮৪৯টি আবেদন জামুকা সুপারিশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রামাণ্য কাগজপত্র না থাকায় ২ হাজার ৩৯৯ জন মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। তাছাড়া ১২৪ জন নারী মুক্তিযোদ্ধার (বীরাঙ্গনা) নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত ও গেজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রতিবেদনে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে বলা হয়, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও অনেকে জাল ও ভুয়া ডকুমেন্ট তৈরি করে আবেদন করেন। অনেকে তাদের সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে গেজেটভুক্তির সুপারিশ করেন। আবার গেজেটভুক্ত হবার জন্য একজন প্রার্থীর আবেদন যাচাই বাছাই করে একবার বাতিল হবার পর তিনি পুনরায় আবেদন করেন। অনেক ক্ষেত্রে বার বার আবেদন করেন। ফলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদন নিষ্পত্তি করতে অহেতুক দেরি হয়। এতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ না নিয়েও অনেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন বলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করেন। এছাড়া অনেকে খাবার খাওয়ানো, সংবাদ বার্তা পৌঁছে দেয়া, নৌকা দিয়ে পার করে দেয়া, গান শোনানো, মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত গিয়েছেন, অনেকে প্রশিক্ষণ করেছেন তবে যুদ্ধে অংশ নেননি, অনেকে কলকাতা থেকে দিল্লী পর্যন্ত গিয়েছেন বলে তারাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করে গেজেটভুক্তির জন্য আবেদন করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গেজেটভুক্তির জন্য অনেকে নানান প্রতারণারও আশ্রয় নিচ্ছেন। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বিভিন্ন সরকারী সুবিধা গ্রহণ। তবে এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদন যাচাইয়ের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে জেলা, উপজেলা ও মহানগর যাচাই বাছাই কমিটি গঠন প্রক্রিয়াধীন। ইতোমধ্যে অনলাইনে এবং হাতে হাতে যে সকল মুক্তিযোদ্ধা তাদের আবেদন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে জমা দিয়েছেন তাদের সবার আবেদন (ভুল আবেদন ছাড়া) সংশ্লিষ্ট জেলা, উপজেলা ও মহানগর যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা (২৫১২/১৪) চলমান থাকায় যাচাই বাছাই কার্যক্রম স্থগিত আছে। এদিকে জামুকা সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গঠিত সারাদেশে ২১১টি সমিতি এ পর্যন্ত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে নিবন্ধিত হয়েছে। যার মোট সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। এছাড়াও ২৭৪টি সমিতির নিবন্ধন কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে।
×