ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো ২০১৫

৯৮ হাজার থেকে নির্বাচিত ছবি, প্রামাণ্য দলিল

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৬ জানুয়ারি ২০১৬

৯৮ হাজার থেকে নির্বাচিত ছবি, প্রামাণ্য দলিল

মোরসালিন মিজান ॥ সাম্প্রতিক সময় ঘটনাবহুল। কত কী যে ঘটে চলেছে দুনিয়াজুড়ে! একটু ঘাড় ঘুুরিয়ে দেখা গেলে অবাক হতে হয়। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো সেই ফিরে দেখার নাম। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই প্রতিযোগিতা বিগত দিনগুলোকে খুঁটিয়ে দেখা ও মূল্যায়নের সুযোগ করে দেয়। প্রতিযোগীরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের ছবি তুলেন। অসংখ্যা ছবি থেকে নির্বাচিতগুলো পায় ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোর মর্যাদা। তারপর দুনিয়াব্যাপী প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এখন চলছে ২০০১৫ সালে নির্বাচিত ছবির প্রদর্শনী। ৪৫টি দেশের ১০০টি শহরে প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেয়া হয়। এখন চলছে বাংলাদেশে। রাজধানী ঢাকার দৃক গ্যালারিতে কৌতূহল নিয়ে প্রদর্শনী দেখছেন আলোকচিত্রপ্রেমীরা। কারও অজানা নয়, ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো প্রতিযোগিতা পৃথিবীব্যাপী আলোচিত। একনামে পরিচিতি পেয়েছে। সারা বিশ্বের আলোকচিত্র সাংবাদিক ও ডকুমেন্টারি আলোকচিত্রীদের জন্য অন্যতম প্রধান প্রতিযোগিতা এটি। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো ২০১৫ প্রতিযোগিতায় ১৩১টি দেশ থেকে ৫ হাজার ৬৯২জন আলোকচিত্রী অংশগ্রহণ করেন। মোট ছবি জমা পড়ে ৯৭ হাজার ৯১২টি। আলোকচিত্র সাংবাদিকতা এবং ডকুমেন্টারি আলোকচিত্রীদের সমন্বয়ে গঠিত শক্তিশালী জুরিবোর্ড আমস্টারডামে মিলিত হয়ে সেরা ছবিগুলো নির্বাচন করে। ৮ বিভাগে মোট ৪৫টি পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৭ দেশের ৪১ জন আলোকচিত্রী লাভ করেন এই পুরস্কার। আনন্দের খবর এই যে, তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নামটিও। পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, চায়না, ডেনমার্ক, ইরিত্রিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ইরান, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, পোল্যান্ড, রাশিয়া, সুইডেন ও তুরস্ক। মঙ্গলবার দৃক গ্যালারি ঘুরে দেখা যায়, প্রায় পুরোটাজুড়েই ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোর প্রদর্শনী। আলোকচিত্রগুলো ওসিইর ক্যানন লার্জ ফরম্যাট ও এ্যারিজোনা ফ্যাল্টবেড প্রিন্টার্স দ্বারা প্রিন্ট করা হয়েছে। একটু ভাল করে দেখলে বোঝা যায়, শুধু ছবি নয় এগুলো। সময়ের প্রামাণ্য দলিল। বিচিত্র বিষয় আর বাস্তবতাকে ক্যামেরাবন্দী করেছেন দক্ষ আলোকচিত্রীরা। এবার ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো অফ দ্য ইয়ার নির্বাচিত হয়েছে ডেনমার্কের একটি ছবি। ছবিতে এক সমকামী দম্পতি। রাশিয়ার সেন্ট পিটারসবাগ থেকে জন ও আলেক্সের অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করে পুরস্কার জিতেছেন ম্যাডস্ নিসেন। নিসেন ডেনমার্কের দৈনিক ‘পলিটিকেন’র নিজস্ব আলোকচিত্রী। একইসঙ্গে প্যানোসের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ছবিটি তার ‘হোমোফেবিয়া ইন রাশিয়া’ থেকে নেয়া। এখানে সমকামীদের অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন আলোকচিত্রী। তার বলাটিÑ রাশিয়াতে লেসবিয়ান, সমকামী, উভয়কামী বা হিজড়াদের জীবনযাপন ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। তারা সামাজিক বৈষম্যের শিকার। রক্ষণশীল ধর্মীয় মৌলবাদী ও জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী দ্বারা এমনকি আক্রমণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা। আলোকচিত্রটি সমসাময়িক বিভাগেও প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করে। পুরস্কারপ্রাপ্ত বাকি ছবিগুলোতেও স্বতন্ত্র বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে। কোথায় কীভাবে মানুষের বাঁচার অধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে, চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়েছেন আলোকচিত্রীরা। ঘুরে ফিরে এসেছে যুদ্ধবিগ্রহ। ফিলিস্তিনী জনগণের ওপর ইজারইলের বর্বর আক্রমণের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে একাধিক আলোকচিত্র। নিউইয়র্ক টাইমসে ছাপা হওয়া একটি ছবিতে দেখা যায়, ইসরাইলী মিসাইল আক্রমণে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাওয়া শিশুর শরীর। মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া নিথর দেহটি যেন সভ্যতাকে পরিহাস করছে। একই ছবিতে আহত স্বজনকে কোলে নিয়ে ছুটতে দেখা যায় এক যুবককে। বেঁচে থাকার এই অধিকার আজও তারা পায়নি। প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়েছে উদ্বাস্তু মানুষের জীবনছবি। একটি ছবিতে যুদ্ধে ঘরহারা মানুষ। জীবনের নিরাপত্তা নেই। বড় নৌকোয় করে ছুটে চলেছে সবাই। অথচ গন্তব্য অজানা! বিভিন্ন দেশের স্বৈরাচারী সরকারের স্বরূপ আলোকচিত্রের ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে। প্রদর্শনীতে খুঁজে পাওয়া যায় ইরানের সেই আলোচিত মাকে। এই মা তার সন্তানের খুনীকে শেষ মুহূর্তে ক্ষমা করে অনন্য নজির গড়েছিলেন। সিরিজ ছবিতে দেখা যায়, অপরাধীর চোখ বাঁধা। ফাঁসির রশি গলায় পরানো হয়েছে। ঝুলিয়ে দেয়া হবে। ঠিক সেই মুহূর্তে কেঁদে ওঠে মায়ের মন। অপরাধীকে তার নিজের সন্তানের জায়গায় যেন আবিষ্কার করেন। ছুটে গিয়ে নিজ হাতে চপেটাঘাত করেন তাকে। এর পর কান্নার রোল। চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে যান মা। মা ক্ষমা করে দেন নিজ ছেলের খুনীকে। বেশ কিছু আলোচিত্রে খেলাধুলা। একটি ছবিতে আর্জেন্টিনার তারকা ফুটবলার মেসি। বিশ্বকাপ ট্রফির সামনে বিশেষ ভঙ্গিতে ধরা পড়েছেন তিনি। অন্য ছবিতে বলের আঘাতে মাঠে লুটিয়ে পড়া এক ক্রিকেটার। এভাবে নানা ঘটনা। বহুবিধ প্রকাশ। সব মিলিয়ে ২০১৪ সালের পৃথিবী। সুন্দর একটি ফিরে দেখা। আর যা খুব গর্বের তা হচ্ছে, এ বছর ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো প্রতিযোগিতার জুরিবোর্ডে ছিলেন বাংলাদেশের আলোকচিত্রী মুনেম ওয়াসিফ। পুরস্কার জিতে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছে আরেক আলোকচিত্রী সরকার প্রতীক। সব মিলিয়ে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বটে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো ২০১৫। প্রদর্শনী চলবে শুক্রবার পর্যন্ত।
×