ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মাদকমুক্ত রাখার পরিকল্পনা, চলতি মাসে প্রচার

সড়ক দুর্ঘটনা-৩০ ভাগ ক্ষেত্রে দায়ী চালকের মাদক সেবন

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৬ জানুয়ারি ২০১৬

সড়ক দুর্ঘটনা-৩০ ভাগ ক্ষেত্রে দায়ী চালকের মাদক সেবন

আজাদ সুলায়মান ॥ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য শতকরা ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে দায়ী চালকের মাদক সেবন। গত তিন বছরে রাজধানীসহ দেশব্যাপী চালানো এক সমীক্ষায় দেখা যায়Ñ শুধু চালক ও হেলপারকে মাদকমুক্ত রাখা গেলে, বেপরোয়া দুর্ঘটনায় লাগাম টানা সম্ভব। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর রাজধানীসহ দেশব্যাপী পরিবহন চালকদের মাদকমুক্ত রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে। জানা যায়, স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় মাদকদ্রব্য অধিদফতর ব্যাপক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত সোমবার রাজধানীর বিআরটিএ অফিসে বিশেষ কর্মসভার আয়োজন করা হয়। এতে বিআরটিএ ও মাদকমুক্ত অধিদফতরের কর্মকর্তা ছাড়াও ছিলেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধি। নতুন বছরের চলতি মাস পুরোটাই চলবে দেশব্যাপী সচেতনতামূলক প্রচার। তারপর শুরু হবে বিশেষ অভিযান। মাদক অধিদফতর সূত্র জানায়, প্রথম দফায় শুধু রাজধানীতে অভিযান চালানো হবে। বিআরটিএ প্রদত্ত লাইসেন্সের বিপরীতে পরিসংখ্যান হাতে নিয়ে বাস মিনিবাসের চালকদের শনাক্ত করা হবে। মাদকদ্রব্য অধিদফতরের একটি বিশেষ ইউনিট বছরব্যাপীই চালাবে এ অভিযান। এ সম্পর্কে মাদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, মিরপুরের বিআরটিএ অফিসে পরিবহন মালিক শ্রমিক চালকদের নিয়ে সোমবার এক বিশেষ সভা ডাকা হয়। তাতে প্রত্যেকেই নিজস্ব মতামত তুলে ধরেন। প্রাথমিকভাবে চালকদের সচেতন করাই এ কর্মসূচির লক্ষ্য। জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা জনকণ্ঠকে বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই ভ্রাম্যমাণ এন্টি নারকটিক্স ইউনিট হাইওয়েতে আকস্মিক অভিযান চালায়। তাতে চালকদের মাঝে মাদকাসক্ত ধরা পড়লে তাৎক্ষণিক কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হয়। একইভাবে এখানেও চালকদের শরীরে চালানো হবে বিশেষ পরীক্ষা। যদি মাদক ধরা পড়ে, তাহলে তাৎক্ষণিক আইনের আওতায় আনা হবে। সোমবারের সভায় মালিক শ্রমিকদের মাদক সেবন অবস্থায় গাড়ি না চালানোর জন্য সচেতন দৃষ্টির পরামর্শ দেয়া হয়। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, মাদকের প্রচলিত আইনে তো এ প্রবিধান রয়েছেই। কোন চালক নেশা করে কোন ধরনের গাড়ি চালাতে পারবে না। গণপরিবহনের বাস মিনিবাস সিএনজির চালকরাই শুধু উদ্বেগের কারণ তা নয়। যারা নিজস্ব কার মোটরসাইকেল চালান তাদের বেলায়ও তো নেশাসক্তবস্থায় স্টিয়ারিং-এ হাত রাখা নিষিদ্ধ। এমনকি যার মদ খাওয়ার বৈধ লাইসেন্স রয়েছে মাদক সেবনের পর তাকেও গাড়ির চালকের আসনে বসা আইনত দ-নীয়। এ ধরনের বিধিবিধান তো আগে থেকেই বিদ্যমান। এখন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সেই আইন যে কোন প্রয়োগ করতে পারে। অভিযান চালাতে পারে। মুকুল জ্যোতি চাকমা জনকণ্ঠকে বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসজুড়েই চলছে মাদকবিরোধী বিশেষ প্রচার কর্মসূচী। তারপর অভিযান চালানো হবে বিশেষ কৌশলে। এ বিষয়ে মাদক অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে দূরপাল্লার নৈশ কোচগুলোকে টার্গেট করা হয়েছে। কারণ এসব রুটের চালকরা রাতে নেশা করে বাস নিয়ে রওনা দূর গন্তব্যে। যদিও এসব রুটে দুর্ঘটনার হার অনেকাংশে কম। তারপরও সমীক্ষায় দেখা যায়, দূরপাল্লার অধিকাংশ চালক ও হেলপার নেশাগ্রস্ত থাকে। তারা টার্মিনালে বসে কিংবা ফেরিঘাটে নেমে দেশীয় মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে। এবার তাদেরই টার্গেট করে হানা দেয়া হবে টার্মিনালগুলোতে। যদি কোন চালকের শরীরে মাদক ধরা পড়ে তাকে তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালতে শাস্তি দেয়া হবে। পরবর্তী ধাপে তার লাইসেন্স বাতিলের জন্য বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। জানতে চাইলে বিআরটিএ চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো অপরাধ। এটাকে ব্যাপকহারে সচেতন করার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কাজ করছে। এ জন্য সোমবার একটি পরিবহন মালিক শ্রমিক চালক ও মাদক দফতরের সঙ্গে বিশেষ সমন্বিত সভা ডাকা হয়। সেখানে চালকদের সচেতন করার জন্য মালিকদের পরামর্শ দেয়া হয়।
×