ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন সহজ হবে না ॥ খলীকুজ্জমান আহমদ

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৬ জানুয়ারি ২০১৬

প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন সহজ হবে না ॥ খলীকুজ্জমান আহমদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেছেন, সাম্প্রতিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক হলেও অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে এ কথা বলা যায়, প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন সহজ হবে না। অভিযোজন অর্থায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দুর্বল ভাষা বা অঙ্গীকারের বদলে ইচ্ছার কথা লিপিবদ্ধ করায় বাস্তবায়নসংক্রান্ত উদ্বিগ্নতা রয়েছে। মঙ্গলবার প্যারিস চুক্তিসংক্রান্ত এক জাতীয় আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিকেএসএফ ভবনে এ আলোচনার আয়োজন করে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ। সভায় বক্তব্য রাখেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত, পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল করিম, বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের নির্বাহী পরিচালক ড. নিলুফার বানু প্রমুখ। সভায় বক্তারা এই চুক্তি বাস্তবায়নসংক্রান্ত কমিটিগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ ও স্বল্পোন্নত দেশের পক্ষে নেতৃত্বের ভূমিকা পালনের তাগিদ দিয়েছেন। কাজী খলীকুজ্জমান আরও বলেন, সদস্য দেশসমূহের, বিশেষ করে যে সকল দেশ ঐতিহাসিকভাবে দায়ী এবং যাদের এই চুক্তি বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালনের অধিক সক্ষমতা রয়েছে তাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকা আবশ্যক। দ্রুত অবনতি ঘটা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আসন্ন জলবায়ু মহাসঙ্কট থেকে পৃথিবীকে এবং পৃথিবীর মানুষকে রক্ষা করার লক্ষ্যে অঙ্গীকারাবদ্ধ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। প্রশ্ন হচ্ছে তারা সেই দায়িত্ব গ্রহণ পালন করবেন কিনা। চুক্তি কিভাবে বাস্তবায়িত হবে তার ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত কিভাবে উপকৃত হতে পারে। এই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। বক্তারা বলেন, এই চুক্তি বিশ্ববাসীর জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় প্রাপ্তি এবং কনভেনশনের নীতিমালার ভিত্তিতে এটি বিশ্বের সকল দেশের জন্য প্রযোজ্য। চুক্তিটি কার্যকরণে পৃথিবীর সকল দেশ তথা উন্নত, উন্নয়নশীল, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহ, স্বল্পোন্নত দেশ সকলেই একমত হয়েছে। স্বভাবতই ঐকমত্যে পৌঁছাতে পৃথিবীর সকল দেশকেই কিছু ছাড় দিতে হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে চুক্তির ভাষা যথেষ্ট শক্তিশালী হয়নি এবং চুক্তি হতে যে কোন দেশের অন্তর্ভুক্তির ৩ বছর পর প্রত্যাহারের ব্যবস্থাও সন্নিবেশিত হয়েছে। তাছাড়াও কোন দেশ চুক্তি মোতাবেক কোন কোন কর্মসম্পাদনে ব্যর্থ হলে সেক্ষেত্রে সে দেশকে উক্ত কর্মসম্পাদনে বাধ্য করাটাও যথেষ্ট দুরূহ হবে। তবে আগামী চার বছরব্যাপী কার্যকর এ্যাডহক ওয়ার্কিং গ্রুপ অন প্যারিস এগ্রিমেন্টের কার্যক্রম ও নির্দেশনা ২০২০ সাল হতে কার্যকর প্যারিস এগ্রিমেন্ট বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ উক্ত কমিটিতে ঝুঁকিপূর্ণ ও স্বল্পোন্নত দেশের পক্ষে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সভায় জানানো হয়, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে গৃহীত চুক্তি সাম্প্রতিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক। প্যারিস চুক্তিটি হঠাৎ করে গৃহীত হয়নি। ১৯৮৮ সালে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ও জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচীর সহযোগিতায় জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেল গঠিত হয়। ১৯৯০ সালে সর্বপ্রথম তাদের প্রথম পর্যালোচনা রিপোর্ট প্রকাশ করে। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিওডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ধরিত্রী সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন গৃহীত ও ১৯৯৪ সালে তার কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৯৫ সালে শুরু হওয়া কনফারেন্স অব পার্টিজ বা বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের ২১তম সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হলো প্যারিস নগরীতে। জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তর্জাতিক কার্যক্রমের এই প্রায় ২৫ বছর সময়ে কনফারেন্স অব পার্টিজ বা বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের মাধ্যমে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
×