ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদিতে মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৬ জানুয়ারি ২০১৬

সৌদিতে মৃত্যুদণ্ড

সৌদি আরবে একদিনে ৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। সবার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল। এরা বেশিরভাগই ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তালিকায় এক শিয়া ধর্মীয় নেতাও রয়েছেন। সন্ত্রাসবাদের দায়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। দেশটির ১২টি স্থানে একই সময়ে ৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ২০০৩ সালে জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদার সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন কয়েক সুন্নিরও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এদের মধ্যে আল কায়েদার শীর্ষ নেতা আল-জাহানি রয়েছেন। ৪৭ জনের মধ্যে শাদ ও মিসরের দুই নাগরিকও রয়েছেন। বাকি সবাই সৌদি নাগরিক। এদের মধ্যে শিয়া নেতা শেখ নিমর আল নিমর অন্যতম। নিমর বরাবরই সৌদি রাজপরিবারের সমালোচক ছিলেন। ২০১১ সালে সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে সরকারবিরোধী গণবিক্ষোভে তার জোরালো সমর্থন ছিল। এমনকি তার বিরুদ্ধে সৌদি শাসকদের অমান্য করা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নেয়ার অভিযোগ ছিল। শেখ নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে সৌদি আরবকে চড়া মূল্য দিতে হবে বলে সতর্ক করেছিল প্রতিবেশী ইরান। নিমরের মৃত্যুদ- নতুন করে দুই বৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘাত এবং সঙ্কটের পথ প্রশস্ত করল তাতে সন্দেহ নেই। শুধু ইরানই নয়, এ মৃত্যুদণ্ডের সমালোচনা করেছে ইরাক সরকারের শিয়া জোটের সকল এমপি, লেবাননের শিয়া কাউন্সিলও। উল্লেখ্য, গত বছর সৌদি আরবে ১৫০ জনের বেশি মানুষের শিরñেদে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের থাবায় বিধ্বস্ত আজ মধ্যপ্রাচ্য। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সৃষ্ট অস্থিরতার কারণে ওই অঞ্চলে বার বার নানা সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্রক্ষমতা, নেতৃত্বের লোভ, তেলবাণিজ্য, ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং বিদেশী শক্তির লেজুড়বৃত্তির কারণে অঞ্চলটিতে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রসারিত হচ্ছে। অঞ্চলটিতে এখন নৃশংসতা ও সহিংসতা মানেই আইএস। তারা নানা স্থানে নানা নামে পরিচিত। কোথাও এরা আইএস, কোথাও হুতি, কোথাও বোকো হারাম, কোথাও বা তালেবান। তারা হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা, মসজিদসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা, বিদেশী নাগরিক, ভিন্ন মতাবলম্বী বা অন্য ধর্মের লোকের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে। নানা নামে এই জঙ্গীরা বিশ্বশান্তির জন্য চরমভাবে হুমকিস্বরূপ। ইরাক-সিরিয়ার একটা বড় অংশ দখলের পর মিসর, লিবিয়া, ইয়েমেন এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানসহ তাদের সমর্থক ও সহযোগীদের মাধ্যমে উপস্থিতির বার্তা পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। এখন সৌদি আরবের অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে, তা সে পথেরই আলামত বলা যায়। দেখা গেছে, কোন দেশের অপরাধীর মৃত্যুদ- কার্যকর নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশ বিভিন্ন সময় মানবাধিকারের প্রশ্ন তোলে। খোদ সৌদি আরবও। আমাদের দেশে ’৭১-এর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের রায় নিয়েও তারা নানা সময়ে নানা মন্তব্য করেছে, মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রশ্ন তুলেছে, জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও নানাভাবে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছে। কেউ কেউ বিচারের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে, তুলছে; এমনকি এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউমেন রাইটস ওয়াচের মতো মানবাধিকার সংস্থাও। কিন্তু এই ৪৭ জনের মৃত্যুদ- কার্যকর নিয়ে তাদের বক্তব্য এবং ভূমিকা নামমাত্রও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মানবাধিকারের উচ্চকণ্ঠ এখন কোথায়? মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অবস্থানইবা কী? এই প্রশ্নটি তোলা নিশ্চয়ই অপ্রাসঙ্গিক নয়।
×