ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কেঁপে ওঠে ভূমি

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৬ জানুয়ারি ২০১৬

কেঁপে ওঠে ভূমি

বলা নেই, কওয়া নেই, হঠাৎ কেঁপে উঠল, সেই কম্পনে চারপাশের সব কিছু কাঁপতে থাকে, দুলতে থাকে। দুলতে দুলতে ধ্বংসের গর্জনও হানে। ঘটে যায় প্রাণহানি। ভূপৃষ্ঠে ধ্বংস হয় কত স্থাপনা। সর্বত্র ল-ভ- কা- ঘটে যেতে পারে কয়েক সেকেন্ডে। ভূমিতে এই কম্পনের স্থায়িত্ব সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ভূমির এই কম্পনই ভূমিকম্প। এর মূল কারণ ভূ-অভ্যন্তরে স্থিত গ্যাস যখন ভূপৃষ্ঠের ফাটল বা আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে তখন সেই গ্যাসের অবস্থানটি ফাঁকা হয়ে পড়ে আর পৃথিবীর উপরিতলের চাপ এই ফাঁকা স্থানে দেবে গিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখে। আর তখনই ভূপৃষ্ঠে প্রবল কম্পনের সৃষ্টি হয়। তবে ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যাকে প্রতিরোধ করার কোন উপায় মানুষের আয়ত্তাধীন নয় এখনও, আর এর কোন সঠিক পূর্বাভাস দেয়া এখনও সম্ভব হয়নি। এর ক্ষয়ক্ষতি কমানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া যায়। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। দেশের একাংশের নিচ দিয়ে টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল গিয়েছে। এই প্লেটের নড়াচড়ার কারণে প্রতি এক হাজার বছরে বাংলাদেশ তিন থেকে পনেরো মিটার করে সঙ্কুচিত হচ্ছে। এই সঙ্কোচনের ফলে ভূ-অভ্যন্তরে প্রবল শক্তি জমা হচ্ছে। জমে থাকা এই শক্তি যে কোন সময়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে বের হয়ে আসতে পারে। ঘনবসতির দেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও অনেক বেশি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত হলেও বাংলাদেশ এখনও বড় ধরনের ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়নি। তবে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমারসহ এ অঞ্চলে ভয়াবহ মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কার কথা বলেছে মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভে। এ অঞ্চলে ৬ থেকে ৮ মাত্রার অন্তত ৬টি ভূমিকম্প আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে হওয়ার আশঙ্কা করছে তারা। নেপাল, বিহার, অসম ও মিয়ানমারের ভূগর্ভে টেকটোনিক প্লেটে ফাটল ও চ্যুতি থাকায় এসব অঞ্চলে ভূমিকম্পের আশঙ্কা প্রবল। সেক্ষেত্রে যে কোন বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশে। ঢাকা, কুমিল্লা, সিলেট ও ময়মনসিংহসহ দেশের পূর্বাঞ্চলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেশি। ২০টি ভূমিকম্প ঝুঁকিপ্রবণ শহরের তালিকায় ঢাকার নামও রয়েছে। ঢাকায় যেখানে ভূমিকম্প ছাড়াই ভবন ধসে পড়ে সেখানে ভূমিকম্প হলে কী অবস্থা হবে, তা নিয়ে আগাম ভাবনা নেই। ফলে কঠিন পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নেই! রাজধানীর মাটির নিচ দিয়ে বিস্তৃত রয়েছে যে গ্যাস লাইন, বড় ভূমিকম্পের ফলে তাতে অগ্নিকা-ের আশঙ্কাও যথেষ্ট। ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প প্রতিরোধ ব্যবস্থা রাখা হয় না অনেক ক্ষেত্রে। মূলত ভূমিকম্প মোকাবেলার জন্যও নেই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি। নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, দক্ষ জনবল ও সমন্বিত উদ্ধার ব্যবস্থাপনা। সারাদেশের অবস্থা এ রকমই। শুধু ভূমিকম্প হলেই প্রস্তুতির বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের নড়াচড়া শুরু হয়। তারপর আবার সবই স্তিমিত হয়ে পড়ে। দুই দিন আগে সংঘটিত ভোরের ভূমিকম্পে তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও মানুষের মনে আশঙ্কা তৈরি করেছে বৈকি। বাংলাদেশে প্রতিবার ভূমিকম্পের পরে ভূমিকম্পের প্রস্তুতি, করণীয়- এসব বিষয়ে প্রবন্ধ-নিবন্ধ-আলোচনা প্রকাশিত বা পুনর্প্রকাশিত হয়। ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমেও এ নিয়ে কথাবার্তা হয়, কিন্তু কখনও কি এই হিসাব করা হয়েছে যে, গত বছরের ঘটনার পরে আলাপ-আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয় চিহ্নিত করেছিলেন, সেক্ষেত্রে অগ্রগতি কতটুকু? দেশবাসীর নিরাপত্তার বিবেচনা এবং তাগিদ থেকেই এটা বোঝা দরকার। পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার নাগরিকদের জন্য ভূমিকম্প মোকাবেলার প্রস্তুতি কতটা তা এখন পর্যালোচনা জরুরী। এই লক্ষ্যে কতটা অগ্রগতি হচ্ছে তা-ও ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। ভূমিকম্প মোকাবেলার দায়িত্ব যাদের এ বিষয়ে তাদের উদ্যোগ নেয়া বিশেষ জরুরী।
×