ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুনতাসীর মামুন

বাংলাদেশে পাকিস্তানী ছিটমহলগুলো অপসারণ করাই এখন বড় কাজ

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ৬ জানুয়ারি ২০১৬

বাংলাদেশে পাকিস্তানী ছিটমহলগুলো অপসারণ করাই এখন বড় কাজ

পৌর নির্বাচনের রেশ এখনও মিলিয়ে যায়নি। বিএনপি, জামায়াত বা পাকিপন্থিরা আগামী এক মাস অন্তত এ বিষয়ে বক্তব্য দেবে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ এর উত্তর দেবে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কী সিদ্ধান্ত দেয় সেটিও আলোচনায় আসবে। এর পর ইউনিয়ন কাউন্সিলের নির্বাচন অব্দি এই চাপান উতরান চলবে। বিরোধীদের এ ছাড়া আর কোন ইস্যু তো নেই। নির্বাচন যে সুষ্ঠু হবে না এ মন্তব্য পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন থেকেই বিএনপি বলছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে তাই বলত। আমাদের রাজনীতিবিদরা কখনও ইতিবাচক কোন বিষয় বিবেচনা করেন না। এই দুঃখজনক সংস্কৃতি থেকে কবে তারা বেরিয়ে আসতে পারবেন জানি না, আদৌ বেরিয়ে আসতে চান কিনা সেটাও প্রশ্ন। একটি টকশোতে সুভাষ সিংহ রায় এ প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন, অন্তত আমার তাই মনে হয়েছে। নির্বাচন প্রক্রিয়া বা নির্বাচন কার্যকরের ওপর আমরা জোর দিই। কিন্তু যারা এটি কার্যকর করবে বা নেতৃত্ব দেবে তাদের কী অবস্থা। তিনি তথ্য উপাত্ত দিয়ে দেখিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের লোকবল, অর্থবল, অবকাঠামো সব কিছুর অভাব। প্রশাসন বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসন সব সময় যে সহায়তা করে তাও নয়। কিন্তু কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার কথা বলে না। কোন সরকার এটিকে যথেষ্ট শক্তিশালীও করে না। সিভিল সমাজ বা এনজিওরা শক্তিশালীকরণের কথা বললেও কিভাবে শক্তিশালী করা যেতে পারে তার কথা কেউ বলেন না, নির্বাচন কমিশন যতই শক্তিশালী হবে, ততই স্বাধীন হবে এবং এক সময় সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ ফিরে আসবে, আসতে বাধ্য। ভারতে তাই হয়েছে। আমাদের এখানে সমস্ত আন্দোলনের প্রধান কারণ সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভোটের অধিকার। বাংলাদেশ হওয়ার পরও এটি মৌলিক বিষয় হয়ে উঠবে তা ভাবিনি। কিন্তু, বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভায়োলেন্স, অর্থ এবং প্রশাসনের সাহায্যে প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচন দখলের প্রক্রিয়া শুরু করেন জেনারেল জিয়া ও বিএনপি, জেনারেল এরশাদ ও জাতীয় পার্টি এবং খালেদা জিয়া ও বিএনপি। সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তারা বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিনষ্ট করেন। শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের নির্বাচন করেছেন। সবাই একে ভোটারবিহীন ও বিতর্কিত নির্বাচন বলেছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থক অনেকেও তাই বলেছেন। এতে, এ কথা প্রমাণিত হয় শিক্ষার সার্টিফিকেট, দীর্ঘদিনের রাজনীতি বা পেশাদার হলেও মাথার মগজটা ঔপনিবেশিক প্রভুদের। তারা পাশ্চাত্যের কয়েকটি বাধাধরা শব্দ শিখেছে বহুদলীয় গণতন্ত্র, গণতন্ত্রায়ন ইত্যাদি। কিন্তু, একটি প্রশ্ন সবাই এড়িয়ে যান বা গেছেন, নির্বাচন কমিশনের কাজ নির্বাচন তফসিল ঘোষণা ও নির্বাচন করা। কে নির্বাচনে আসবে কি আসবে না তা দেখা কি নির্বাচন কমিশনের কাজ? সরকারের কি কাজ সবাইকে ডেকে এনে নির্বাচন করানো, মান ভাঙ্গানো, কোন দেশে প্রথা প্রচলিত? কেউ নির্বাচন না করলে ভোটারবিহীন হবে। কিন্তু, ২০১৪ সালের নির্বাচন কি ভোটারবিহীন হয়েছে? তা তো হয়নি। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে আসেনি দেখে গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত হয়নি, বৈধতা পায়নি এগুলো মতলববাজদের ধান্দাবাজি কথাবার্তা। পাকিস্তানের প্রতি পরাজয়ের গহীন গভীরে তাদের এক ধরনের মমতা আছে, বাস্তব পরিস্থিতিতে তারা তা প্রকাশ করতে পারে না, ইনকিলাব তারা প্রকাশ্যে পড়ে না, পড়লে হয়ত অন্য পত্রিকা পড়ে। গয়েশ্বর বা খালেদার মতো স্থূ’ল তারা নয়। সে কারণেই এই কৌশল। এ কথাও কেউ বলেনি, বিএনপি-জামায়াতের অধিকার আছে কিনা নির্বাচন প্রতিহতের নামে ভোটের দিনে চরম ভায়োলেন্স, স্কুল পোড়ানো এবং তিন মাসের আগুন সন্ত্রাস। এগুলো কি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এই যে মজুমদার প্রমুখ। শুদ্ধ গণতন্ত্রের জন্য যাদের কলিজা খাক খাক হয়ে যায় এ বিষয়ে তারা নিশ্চুপ, একেবারে নিশ্চুপ। নির্বাচন ‘সুষ্ঠু’ হবে না শুরু থেকে এটি বলার উদ্দেশ্য, পরাজিত হলে বলা যে তারা আগেই বলেছিল এ সরকারের অধীন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, সুতরাং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন কাম্য। এটি ছিল বহিরঙ্গের জঙ্গী। ভেতরের উদ্দেশ্য ছিল দলটিকে চাঙ্গা করা। সেটিতে বিএনপি সফল হয়েছে। আমাদের নির্বাচনী প-িতরা আওয়ামী লীগের জয় দেখেছিলেন, কিন্তু, বিএনপি কাছাকাছি প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দেখিয়েছে। এর উদ্দেশ্যে ছিল, একথা প্রমাণ যে, বিএনপি এখনও জামায়াত ছাড়া বড় শক্তি। এটিএন নিউজে ভোটের আগের দিন আলোচনা অনুষ্ঠানে সঞ্চালক প্রণব সাহা জানালেন, সমস্ত জরিপের গড় করে তারা একটি সিদ্ধান্তে পেয়েছেন আওয়ামী লীগ ১২৭টি, বিএনপি ৬৭টি আসন পাবে। অন্য আলোচকরা একমত হয়েছিলেন, শুধু আমি বলেছিলাম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আসন সংখ্যা আরও বাড়বে এবং বিএনপির আরও কমবে। বাস্তবে তাই হয়েছে। আওয়ামী লীগ পেয়েছে ১৮০+ বিদ্রোহী ১৭। বিএনপি ২৪ ও ১ বিদ্রোহী। আমরা যে রকম নির্বাচন চাই, ইউরোপে বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো তা বাংলাদেশে হয়ত সম্ভব হবে, কিন্তু কখন তা বলতে পারি না, বাস্তব বলে, ঝামেলা হবেই। স্থানীয়রা কেন্দ্রের অনুশাসন মানেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজের ইচ্ছায় কাজ করে, পোলিং এজেন্টদের ওপর সে রকম নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় না। এসব মেনেই কিন্তু সবাই নির্বাচনে যান। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও কি ইউরোপের মতো নির্বাচন হয়েছে? হয়নি। নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হলো তার মাপকাঠি হলো, পূর্ববর্তী নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা। এবারের নির্বাচনে প্রাণহানি কম, সামগ্রিক ভোট কেন্দ্রের তুলনায় গোলযোগ হয়েছে এমন কেন্দ্রের সংখ্যা কম। নির্বাচন কমিশন একটি পৌরসভাসহ কিছু কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করেছে। দৈনিক সমকাল লিখেছে “বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি পৌরসভায় সংঘর্ষ হলেও অধিকাংশ স্থানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ হয়। কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, জাল ভোটসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে মোট ৫০টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন ইসি (৩১.১২.২০১৫)। কিন্তু, তারপরও বলব, সাধারণের আশা ছিল আরও সুষ্ঠু হতে পারত নির্বাচন। এই আশা আরও বাড়বে। দেশের যে সামগ্রিক উন্নয়ন হচ্ছে তার সঙ্গে সমান্তরালে নির্বাচন প্রক্রিয়ার উন্নতি আশা করেন সবাই। কেননা, দেশের সার্বিক উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের আশা-আকাক্সক্ষাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সব দলের রাজনীতিবিদদেরই বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে। নেতিবাচককে ইতিবাচকে নেয়ার প্রক্রিয়া গ্রহণ না করলে তা গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে না। ধরা যাক, ইউরোপের মতো নির্বাচন হলো। তাতে কি বিএনপির আসন বাড়ত? কত বাড়ত। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ১৬ পৌরসভায় মেয়র পদে বিএনপির চেয়ে ৭ গুণেরও বেশি ভোট পেয়েছে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন ১৫ মেয়রের বাক্সে জমা পড়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৯২২টি। আর ১৫ পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা পেয়েছেন মাত্র ১৯ হাজার ৭৫৯ ভোট।... এ ছাড়া জেলা ভিত্তিতে বিএনপি সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছে ভোলায়। এখানে ৩ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৩৬৯ ভোট এবং বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা পেয়েছেন ২ হাজার ৯৪৯ ভোট। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের চেয়ে ১৭ ভাগ ভোট কম পেয়েছে বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা। [মানবকণ্ঠ, ৪.১.২০১৬]। লক্ষণীয়, ২০০১-৬ সালে বরিশাল ও ভোলায় বিএনপি জামায়াত পরিকল্পিতভাবে হিন্দু ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের ওপর আক্রমণ চালায়। লুটতরাজ, ধর্ষণ ছিল নৈমিত্তিক ব্যাপার। ভোলা থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে পালিয়ে যান। দেখা যাচ্ছে, মানুষের স্মৃতি থেকে তা মুছে যায়নি। সারাদেশেও পরাজয়ের মূল কারণ অত্যাচার অত্যাচার অত্যাচার। তার ওপর শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের শুধু বিরোধিতা নয়, ভায়োলেন্সের আশ্রয় ও নেতিবাচক রাজনীতি মানুষকে খুশি করেনি। মানবতাবিরোধী অপরাধের তারা সমর্থক। সবশেষে বিজয়ের মাসে শহীদদের সম্পর্কে ক’কথা এবং তার চেলা গয়েশ্বরকে দিয়ে অশালীন বক্তব্য মানুষের মনে এক ধরনের ঘৃণার সৃষ্টি করেছে, আমি অনেককে বলতে শুনেছি এরা কি মানুষ! এমনকি বিএনপি নেতা জেনারেল মাহবুবও বলেছেন, তিনি কষ্ট পেয়েছেন গয়া বাবুর বক্তব্য শুনে। আসলে সার্টিফিকেট মানুষকে শিক্ষিত করে না, ভদ্রও করে না। অনেকে বলেছেন, না এসব কারণ নয়, জামায়াতের ভোট বিএনপি পায়নি বা বিএনপি কি জামায়াতকে নিয়েই ঘর করবে? অনেকের উদ্বেগাকুল প্রশ্ন। এ বিষয়ে আমার বক্তব্যের সঙ্গে অনেকে একমত নন, কিন্তু আমি দীর্ঘদিন ধরে তা বলে আসছি। বিএনপি-জামায়াত দুটি আলাদা পার্টি বটে তবে একটি পার্টির দু’টি ফ্যাকশন হিসেবে বিবেচনা করলেই ভাল। জাপানের এলডিপির যেমন কয়েকটি ফ্যাকশন বা গ্রুপ আছে এবং তাদের আলাদা অফিসও আছে কিন্তু তারা একটি দল। স্বাধীনতাবিরোধী একটি দল তার দুটি অংশ বিএনপি-জামায়াত, একাংশের প্রধান নারী, তার সমর্থকরা পাশ্চাত্য পোশাক পরেন, অন্য অংশের প্রধান একজন শ্মশ্রুশোভিত পুরুষ, মাথায় টুপি। এদের সমর্থকরা পরেন পা’জামা পাঞ্জাবি। এটুকুই তো তফাৎ। দুটি দলের জন্ম ভায়োলেন্সের মাধ্যমে, দুটি দলই ভায়োলেন্সে বিশ্বাসী। দুটি দলই বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে স্বাধীনতা পোষণ করে এবং পাকিস্তানের এজেন্ট হিসেবে পাকি আদর্শ প্রচার করতে চায়। পাকি নেতারাও তাই বলেছেন। দুটি দলেই মানবতাবিরোধী অপরাধী আছে, তাদের বিচার ও রায় কার্যকর হচ্ছে। দু’টি দলই মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের বিরোধী। দুটি দলই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঘৃণা করে বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যাকে। দুটি দলই ক্ষমতায় থাকতে জঙ্গীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আজকের অবস্থায় এনেছে এবং জঙ্গীদের দ্বিতীয় ফ্রন্ট হিসেবে তৈরি করেছে। দুটি দলই ভারতবিরোধী ও পাকিস্তানে বিশ্বাসী। বিএনপি জামায়াতকে পুনরুজ্জীবিত নয়, তাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে শক্ত অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। জামায়াতও বিএনপিকে প্রায় সময় সহায়তা করেছে। প্রচ- টান না থাকলে খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করতেন না। তাহলে দু’টি দল আলাদা কিভাবে। প্রেমিক-প্রেমিকার মতো খুনসুটি করে মাঝে মাঝে তাদের মান-অভিমান হয়। কিন্তু কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারে না, পারবে না। সুতরাং, কেউ যখন তাদের বিচ্ছিন্ন করার কথা বলেন তখন তিনি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে মুক্তিযুদ্ধের ক্ষতি সাধন করেন। আমাদের লড়াইটা দু’টি দলের অপপ্রচার, পাকিস্তানায়ন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে। অনেকে জামায়াতের ওপর সমস্ত দোষ চাপান। এভাবে তারা বিএনপিকে সহায়তা করতে চান। কারণ, স্বাধীনতা পক্ষের অনেকের আত্মীয়স্বজন বিএনপির, শালাসম্বন্ধী বেয়াই বিএনপির, ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবী বিএনপির, ব্যবসায়ী পার্টনার বিএনপির। তাই পক্ষে তাদের এক ধরনের ডিফেন্স মেকানিজম কাজ করে। অনেকে আবার বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপিকে আরও স্পেস দেয়া দরকার। সত্যিকার একটি বিরোধী দল হিসেবে তাদের থাকাটা আমাদের জন্যও জরুরী। এই তত্ত্বেরও আমি বিরোধী। কারণ, এটিও বিএনপিকে রক্ষার একটি কৌশল। বাংলাদেশে পাকিস্তানের রাজনীতি চলতে পারে না। পাকিস্তানে বাংলাদেশের রাজনীতি করতে দেয়া হবে। আমেরিকায় সৌদি আরবের। জার্মানিতে নাৎসি এবং ইতালিতে ফ্যাসিস্টদের। না, দেয়া হয় না। তার কারণটি কী? কারণ গণতন্ত্র মানে অপরাধীকে অন্তর্ভুক্ত করা না তাকে রাজনীতি থেকে বিনাশ করা। ১৯৭৫ সাল থেকে জেনারেল জিয়া এবং তারপর তার দল সচেতনভাবে ১৯৭১ সালের সব মূল্যবোধ শুধু বিনাশ নয়, পাকিস্তানকে এ দেশে প্রোথিত করতে চেয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত যে পাকিস্তানবাদের প্রবক্তা একথা অসৎ মানসের ব্যক্তি ছাড়া কেউ অস্বীকার করবে না। এর অর্থ বাংলাদেশে পাকিস্তানের হয়ে কেউ রাজনীতি করতে পারে না, পারবে নাÑএ প্রত্যয়টিই জরুরী। গণতন্ত্রে বিএনপি-জামায়াতকে অন্তর্ভুক্ত করা এক ধরনের অসততা। বিএনপি-জামায়াতকে দৃঢ় করার আরেকটি কৌশল। তা’হলে কি আমরা আওয়ামী লীগের একনায়কত্ব চাই। মোটেই না, আওয়ামী লীগ যাতে একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করতে না পারে সে জন্য আমরা শক্তিশালী বিরোধী দল চাই। কিন্তু, সে দলকে বাংলাদেশে বিশ্বাস করতে হবে, ১৯৭১-এ বিশ্বাস করতে হবে। দু’টি বৃহৎ দলের অন্তহীন দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষে সাধারণ মানুষ যে বীতশ্রদ্ধ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু, এটিও বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মূল বিষয় না বুঝে তারা বীতশ্রদ্ধ। টেলিভিশনে ভদ্রলোক নামধারী কিছু আলোচক প্রায়ই এ কথা তোলেন তাতে সাধারণ মানুষ প্রভাবিত হন। কিন্তু এ বক্তব্য এক ধরনের বিভ্রান্তি। আওয়ামী লীগ-বিএনপি ঐকমত্যে পৌঁছাবে কিভাবে? এর ভিত্তিটা কী? বিএনপি বিশ্বাস করে পাকিস্তান, পাকিস্তানবাদে, আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে বাংলাদেশে। খালেদা জিয়া বিশ্বাস করেন সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ ও ভায়োলেন্সে, শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও শান্তিতে। খালেদা বিশ্বাস করেন জোরজবরদস্তি-হুকুমদারিতে। হাসিনা বিশ্বাস করেন পরমতসহিষ্ণুতা ও আলোচনায়। খালেদা ও বিএনপি বিশ্বাস করে রক্তপাতে। বিএনপির ইতিহাস দেখুন। জিয়ার আমল, খালি সৈনিক খুন। খালেদার প্রথম আমল ভায়োলেন্স। দ্বিতীয় আমল [বোধহয় মাসখানেকের] ভায়েলেন্স। তৃতীয় আমল রক্তপাত। যে সব সময় ক্ষমতায় ছিলেন না সে সময়ও খালি খুন-খারাবি। রক্ত না দেখলে তিনি উজ্জীবিত হন না, তার পার্টনার নিজামীরা রগ না কাটলে, মেরে ম্যানহোলে ফেলে না রাখলে আনন্দ পান না। ভ্যাম্পায়ার যেমন রক্ত পান না করলে উজ্জীবিত হয় না, খালেদার অবস্থাও তেমনি। রক্তপাত না দেখলে শান্তি পান না, উজ্জীবিত হন না। শান্তি বিরাজ করলেই শহীদদের নিয়ে বিকৃত কথাবার্তা বলেন। শেখ হাসিনা খালেদার পিতার বা স্বামীর মৃত্যুদিনে কেক কাটেন না। খালেদা শেখ হাসিনা কী, জাতির পিতার মৃত্যুদিনে সহর্ষে ৭০ পাউন্ডের [বছর হিসেবে ১ পাউন্ড] কেক কাটেন। বিকৃতি রুচি আর বাঙালী রুচির মিল হয় কিভাবে? আলোচনা হবে কি পাকিস্তানবাদ চলবে কি চলবে না নিয়ে? এ বিষয়গুলো বুঝেও সুশীল মজুমদাররা ঐক্যের আহ্বান জানান। এরা আরেক ধরনের মতলববাজ। এখন সময় এসেছে বাংলাদেশে বসবাসরত এই সব পাকিস্তানীকে প্রতিহত করার। আমরা বলেছি রাজনীতি দিয়ে ঐ পাকিস্তানী রাজনীতি প্রতিরোধ করতে। কিন্তু, বিএনপি তো অপরাজনীতি করে। জামায়াত তো খুনীদের দল। সুস্থ রাজনীতি তো বোঝে না তারা। চোর কি ধর্মের কথা শোনে? গয়েশ্বরের মতো বিবেকহীন মনুষ্যকে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে লাভ আছে? তার দেবী খালেদাকে। নেই। এ জন্য আমরা বলি মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার অপরাধ আইন করতে। ১৯৭৫ সালের পর বিএনপি-জামায়াত মিলে বাংলাদেশে পাকিস্তানী ছিটমহল গড়ে তুলেছিল। ২০০১-০৬ সাল দেখুন। যে সব নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি-জামায়াত জিতেছে সে সব এলাকায়ই পাকিস্তানী ছিটমহল গড়ে তোলা হয়েছিল। এবং ছিটমহলের বাসিন্দাদের অবস্থা কী হয়েছিল আমাদের জানা। ভারতে বাংলাদেশের ছিটমহলের অবস্থাগুলো দেখুন। কী অবস্থা হয়েছিল ছিটমহলবাসীর। ৭০ বছর পর মুক্তি পেয়ে তাদের কী অপার আনন্দ। ২০০৮ সাল থেকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে পাকিস্তানী ছিটমহলগুলো মুক্ত শুরু করেছেন। এই পৌর নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে, আরও ২৪টি পাকি ছিটমহল রয়ে গেছে। এই ছিটমহলগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই উন্নয়ন প্রক্রিয়া চলবে না, ভায়োলেন্স থাকবে। এই ছিটমহলগুলো বাংলাদেশে নিয়ে আসাই হবে আমাদের বড় কাজ। শেখ হাসিনা যেমন ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের ছিটমহল উদ্ধার করে দেশের সীমানা নির্ধারণ করেছেন, দেশ ঐক্যবদ্ধ করেছেন ও শান্তি ফিরিয়ে এনেছেন। বাংলাদেশে পাকিস্তানের ঐ ছিটমহলগুলো ফিরিয়ে এনে আশা করি দেশে শান্তি নিয়ে আসবেন।
×