ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভেজাল খেজুর গুড়ে রাজশাহীর হাট বাজার সয়লাব

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৫ জানুয়ারি ২০১৬

ভেজাল খেজুর গুড়ে রাজশাহীর হাট বাজার সয়লাব

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ অধিক মুনাফার আশায় রাজশাহী বিভিন্ন উপজেলায় চিনি মেশানো ভেজাল খেজুর গুড় তৈরির হিড়িক পড়েছে। জেলার দুর্গাপুর, পুঠিয়া, বাগমারা, চারঘাট বাঘা উপজেলায় উৎপাদিত সুমিষ্ট খেজুরের গুড়ের সুনাম থাকায় দেদার খেজুরের গুড় তৈরি করা হচ্ছে চিনি মিশিয়ে। মুনাফালোভী চাষীরা খেজুর রসের সঙ্গে চিনি ও হাইড্রোজ মিশিয়ে গুড় তৈরি করে বাজারজাত করছে। আর এসব গুড় ছড়িয়ে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র। এরই মধ্যে বেশ কয়েকদফা এসব গুড় তৈরির কারখানায় হানা দিলেও বন্ধ হয়নি ভেজাল গুড় তৈরি। সর্বশেষ রবিবার জেলার চারঘাট উপজেলার মেরামতপুর গ্রামে ভেজালবিরোধী অভিযানে প্রায় ৩৫ মণ গুড় ৩ বস্তা চিনি, গমের আটা, ১০ কেজি চুন ও রংসহ একজনকে আটক করে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। উদ্ধার করা গুড় ও উপকরণ বড়াল নদীতে ফেলে ধ্বংস করা হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, গুড়ের চেয়ে চিনির দাম কম হওয়ায় খেজুর গুড়ে চিনি মেশাচ্ছেন চাষীরা। ভোরবেলা গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে এসে কড়াইয়ে রসজাল করে লালচে বর্ণের হলেই চিনি ঢেলে দেয় কড়াইয়ে। তারপর একটু জাল দিলেই চিনিগুলিয়ে রসের সঙ্গে মিশে তৈরি হচ্ছে গুড়। খেজুর রসের সমপরিমাণ চিনি মেশানো হচ্ছে। বাজারে প্রতিকেজি চিনির দাম ৪১ টাকা আর গুড় বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা। গুড়ে চিনি মিশিয়ে চাষীরা প্রতিকেজি গুড়ে পাচ্ছে ২০ টাকা বেশি। দোমাদী গ্রামের এক চাষী বলেন, রস জাল করে লালচে বর্ণের হলেই চিনি মিশিয়ে দেয়া হয়। চিনি গলে গেলে হাইড্রোজ, ফিটকারিতে রস গাড়ো হয়ে গুড়ের রং হয় উজ্জ্বল। চিনি, হাইড্রোজ, ফিটকিরি মিশ্রিত গুড় দেখতে চকচকে ও অনেক সুন্দর লাগে। সে কারণে বাজারে চাহিদাও অনেক বেশি। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিটি গ্রামের চাষীরা একইভাবে গুড় তৈরি করছেন। জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারের আমদানি হওয়া খেজুর গুড়ের ৯৮ ভাগই চিনি মিশ্রিত গুড়। পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারের আড়তদার আলম হোসেন জানান, বর্তমানে হাট-বাজারে আমদানি খেজুর গুড়ের অধিকাংশই চিনি মিশ্রিত ভেজাল। আমরা কেনার সময় টের পেলেও কিছু করার থাকে না। কারণ চিনি মিশ্রিত ব্যতীত স্বচ্ছ খেজুর রসের তৈরি গুড় পাওয়া এখন দুষ্কর। রাজশাহীর সিভিল সার্জন (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ফারহানা হক বলেন, খেজুর রসের সঙ্গে চিনি ও অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে জাল করে একত্রিত করলে সেটি বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আর এই চিনি মিশ্রিত ভেজাল গুড় দিয়ে কোন খাদ্যদ্রব্য তৈরি করে খেলে মানবদেহের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ বলেন, সম্প্রতি উপজেলার মেরামতপুর এলাকায় ভেজালবিরোধী অভিযান চালিয়ে বেশকিছু অবৈধ মালামাল জব্দ করা হয়েছে। একজনকে আটক করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
×