ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

ননী ও তাহেরের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক আজ থেকে

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৫ জানুয়ারি ২০১৬

ননী ও তাহেরের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক আজ থেকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেত্রকোনার দুই রাজাকার মুসলিমলীগ নেতা আতাউর রহমান ননী ও নেজামে ইসলামের ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে প্রসিকিউশন পক্ষের যুক্তিতর্ক। অন্যদিকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার গ্রেফতারকৃত রিয়াজ ফকির ও পলাতক ওয়াজউদ্দিনের বিরুদ্ধে (ফরমাল চার্জ) আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নি। ননী ও তাহেরের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৩ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। আতাউর রহমান নন ও নেজামে ইসলামের ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটসহ ৬ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী ছয়টি অপরাধের অভিযোগে ননী ও তাহেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধা আলী রেজা কাঞ্চন বাদী হয়ে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ননী ও তাহেরসহ ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ২০১৪ সালের ১২ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির এ দুই আসামিকে গ্রেফতারের পরদিন ১৩ আগস্ট তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ৫ নবেম্বর একটি মামলার আসামি ওবায়েদুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটের মোট ৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাট। ১৫ জনকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যা, প্রায় সাড়ে ৪শ’ বাড়ি ঘরে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়ার অভিযোগ। তদন্ত সংস্থা ৪টি অভিযোগ থেকে প্রসিকিউশন যাচাই-বাছাই করে পরবর্তীতে ৬টি অভিযোগ দাখিল করেন। ময়মনসিংহের দুই রাজাকার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার গ্রেফতারকৃত রিয়াজ ফকির ও পলাতক ওয়াজউদ্দিনের বিরুদ্ধে (ফরমাল চার্জ) আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা সময়ের আবেদন করলে চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ফুলবাড়িয়ার রাজাকার বাহিনীর প্রধান আমজাদ হাজী ও আলবদর বাহিনীর প্রধান রিয়াজউদ্দিন ফকির এবং ওয়াজউদ্দিন একটি মামলার আসামি। ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর গত বছরের ১১ আগস্ট আমজাদ ও রিয়াজকে ফুলবাড়িয়া উপজেলার কেশরগঞ্জ ও ভালুকজান গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১২ আগস্ট ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করার উদ্দেশে ময়মনসিংহ থেকে দুই আসামিকে নিয়ে আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে পুলিশের প্রিজন ভ্যান। এতে চার পুলিশ ও আসামি আমজাদ হাজী গুরুতর আহত হন। পরে আমজাদকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান তিনি। ফলে বর্তমানে রিয়াজ উদ্দিন ফকির ও পলাতক ওয়াজউদ্দিন এ মামলার আসামি। গ্রেফতারকৃত রিয়াজ উদ্দিন ফকিরকে সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা। ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভালুকজান গ্রামের শহীদ তালেব ম-লের ছেলে খোরশেদ আলী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তার বাবা তালেব ম-লকে আখিলা নদীর ব্রিজের ওপর দাঁড় করে গুলি করে হত্যা করে থানা রাজাকার বাহিনীর প্রধান আমজাদ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান রিয়াজ ফকিরের নেতৃত্বে ওয়াজউদ্দিনসহ রাজাকাররা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমজাদ আলী, রিয়াজউদ্দিন ফকির ও ওয়াজউদ্দিন হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধে নেতৃত্ব দেন। আছিম যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাসহ বহু মানুষকে হত্যা ও পাটিরায় দুই হিন্দু নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
×