ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আলিয়ঁসে মাঈনুদ্দিনের চিত্রপ্রদর্শনী মানব জাতির অভিব্যক্তি

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৫ জানুয়ারি ২০১৬

আলিয়ঁসে মাঈনুদ্দিনের চিত্রপ্রদর্শনী মানব জাতির অভিব্যক্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাদামি বর্ণের জমিনে আঁকা ক্যানভাস। তাতে দৃশ্যমান খেটে খাওয়া এক নারী। শরীরে আবৃত সবুজ শাড়ির সঙ্গে বেনী করা চুলের খোঁপায় গোঁজা কমলা রঙের ফুল। বসে আছে কাঠের পাটাতনের ওপর। জুতাহীন খালি পা জোড়া বলে যায় জীবন সংগ্রামের কথা। তবে কপালের লাল টিপের সঙ্গে অভিব্যক্তিপূর্ণ চোখ জোড়ায় যেন ভাসছে সংগ্রামী জীবনের মাঝেও উচ্ছ্বাসের আবহ। প্রান্তিক মানুষের এমন অর্থপূর্ণ জীবনের ছবিটি ঝুলছে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার ক্যাফে লা ভেরান্দায়। চিত্রকর্মটি এঁকেছেন তরুণ চিত্রশিল্পী মাঈনুদ্দিন। আলিয়ঁসের লা গ্যালারি ও লা ভেরান্দায় চলছে এই শিল্পীর প্রদর্শনী। শিরোনাম মানবজাতির অভিব্যক্তি। ছবি সৃজনের বিষয় হিসেবে মাঈনুদ্দিন বেঁছে নিয়েছেন সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের সংগ্রাম। শিল্পী নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন শ্রমজীবী মানুষের যাপিত জীবন এবং সে জীবনের সমস্যাসহ তা মোকাবেলার প্রয়াসটি। শিল্পী সেই পর্যবেক্ষণের উপস্থাপন করেছেন রং-তুলির আশ্রয়ে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযুদ্ধে পরাজয়ের উল্টোপিঠে ঘটে যাওয়া বিজয়ের আনন্দ-উল্লাস মেলে ধরেছেন চিত্রপটে। তাই বিচিত্রভাবে ক্যানভাসে চিত্রিত হয়েছে তৃণমূল মানুষের অভিব্যক্তি ও অনুভব। বিশাল আকারের একটি চিত্রকর্ম ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনীতে। এ ছবিতে শিল্পী নানা পেশার অসংখ্য মানুষকে জায়গা করে দিয়েছেন। ছবিটির পশ্চাৎপটে রয়েছে কয়লাচালিত রেলগাড়ি, যার মাধ্যমে শিল্পী ফুটিয়ে তুলেছেন নিত্যদিনের সংগ্রামী মানুষের জীবনের রূপকল্প। দোসরা জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। সোম থেকে বৃহ¯পতিবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ৬৪ জেলা শিল্পকলা একাডেমির অংশগ্রহণে চলছে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া উৎসবের চতুর্থ দিন ছিল সোমবার। পৌষের বিকেলে একাডেমির নন্দনমঞ্চে শুরু হয় নাচ ও গানে সাজানো আয়োজন। পরিবেশনায় অংশ নেয় যশোর, পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি। পঞ্চগড় জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিশু শিল্পীরা পরিবেশন করে দুটি সম্মেলক সঙ্গীত। গানগুলোর শিরোনাম ছিল ‘সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা’ ও ‘আমাদের দেশটা স্বপ্নপূরী’। এছাড়া ‘কোটি প্রাণের আশা’ ও ‘কোন্ঠে গেল ফেলানী’ গানের সুরে নৃত্য পরিবেশন করে শিশুরা। ছিল ‘লাল সবুজের বিজয় নিশান’ ও ‘দিনী নাচি’ সাঁওতালি গানের আশ্রয়ে বড়দের পরিবেশিত সমবেত নৃত্য। এ জেলার সব শেষ উপস্থাপনায় উঠে আসে পঞ্চগড় জেলার মনোমুগ্ধকর ঐতিহ্যবাহী গান ‘দাওয়াত রহিল বন্ধু রে তোর আসিস হামার ঘরত’। সিরাজগঞ্জের শিল্পীরা ‘তুমি নির্মল কর মঙ্গল করে’ ও ‘নীল দিগন্তে ঐ ফুলের আগুন লাগলো’ গানের সুরে পরিবেশন করে সমবেত নৃত্য। শিশুদের পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ’ ও ‘কল কল ছল ছল নদী করে টলমল’। মুন্সীগঞ্জ জেলার শিল্পীরা ‘এসো বাংলাদেশের যত’ ও ‘মাটির গাছে লাউ ধইরাছে’ গানের সঙ্গে পরিবেশন করে দলীয় নৃত্য। ‘পূবালী বাতাসে আষাঢ় মাইসা’ গানটি পরিবেশন করে শিল্পী শিশির রহমান এবং সবশেষে মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরের ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে পরিবেশিত হয় সমবেত সঙ্গীত। যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে গেয়ে শোনায় ‘আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে’, ‘ওরে আমার মন মেতেছে’, ‘ভাঙ্গনের জয় গান গাও’ ও ‘নিরুদ্দেশের পথিক আমায়’ শিরোনামের গানগুলো। ‘আমি ভাবি যার ভাবে’ গানটি পরিবেশন করেন মোঃ তাওহীদুল ইসলাম খান এবং ‘শ্রাবণের ধারার মতন’ গানটি গেয়ে শোনান স্মৃতিকনা পাল। সব শেষে সম্মেলক কণ্ঠে গীত হয় জেলার ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত ‘দৈনিক হাটবারে দাদি কাঁঠাল আনতি কয়’। প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় শুরু হওয়া উৎসব চলে রাত অবধি। আজ মঙ্গলবার থাকবে কুড়িগ্রাম, মৌলভীবাজার, নোয়াখালী ও রাজবাড়ী জেলা শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনা। ইডেন কলেজে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ॥ সোমবার রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজে অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের উদ্যোগে ‘ইতিহাস কথা বলে : সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক প্রদর্শনীটির আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনীর পাশাপাশি ছিল হাজারো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কমোডর (অব) এ ডব্লিউ চৌধরীর বীর উত্তম বীর বিক্রম। ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হোসনে আরার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল (অব) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক, বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টের সদস্য মেজর জেনারেল (অব) আবদুল হাফিজ মল্লিক ও বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টের সিইও মাশুরা হোসেন। এ ডব্লিউ চৌধুরী বলেন, ইতিহাস কথা বলে। এটি সত্য কথা। সত্য নিজের জন্য আসেনি। সত্য কোনদিনও মরবে না। তেমনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করা হলেও মিথ্যা কখনও প্রতিষ্ঠিত হবে না। মিথ্যা একদিন নিজেকেই কবর দিবে। দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ আমাদের অত্যন্ত গৌরবের। যতদিন বাঙালী, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষ বেঁচে থাকবে ততদিন তা বুকে ধারণ করে রাখতে পারব। এ সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তানের জাহাজ ধংসের পরিকল্পনার নানা দিক তুলে ধরেন। তরুণ সমাজকে সঠিক ইতিহাস থেকে নিতেও আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানের শুরুতে হাজারো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গীত হওয়ার পাশাপাশ ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন। আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে দুর্লভ কিছু ছবি। সেখানে ১৯৪৮ সালে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার প্রতিবাদে বাংলা ভাষার জন্য প্রথম আন্দোলনে সচিবালয়ের সম্মুখে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত সহকর্মী শওকতকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু, ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩ সালে মওলানা ভাসানীর সঙ্গে প্রভাতফেরিতে বঙ্গবন্ধু, ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে ৬ দফার ঘোষণা দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিশেষ আদালতে যাবার প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু, একাত্তরের সাতই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে জাতির জনকের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৩ মার্চ ১৯৭১ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনসহ নানা ঐতিহাসিক আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে।
×