ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রকল্পে নতুন ব্যয়ের সংশোধনী প্রস্তাব আজ একনেকে উঠছে ;###;ভবিষ্যতে ব্যয় আর না বাড়ানোর প্রত্যয়নপত্র সেতু বিভাগের

পদ্মা সেতুর ব্যয় আরেক দফা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৫ জানুয়ারি ২০১৬

পদ্মা সেতুর ব্যয় আরেক দফা বাড়ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ আরেক দফায় বাড়ছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়। মূল সেতু, নদী শাসন কাজ, সংযোগ সড়ক, পরামর্শক সেবা, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন কার্যক্রম খাতে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ব্যয় বাড়ছে বলে জানা গেছে। আগের হিসাবের তুলনায় ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে বর্তমানে প্রায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে। প্রকল্পটির ব্যয় এ নিয়ে দু’দফা বাড়ানো হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে আর ব্যয় বাড়ানো ও প্রকল্প সংশোধন করা হবে না বলে পরিকল্পনা কমিশনে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে সেতু বিভাগ। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটির নতুন ব্যয়ের প্রস্তাব (সংশোধনী প্রস্তাব) অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব শফিকুল আজম জনকণ্ঠকে বলেন, একটু পরেই (সোমবার বিকেল চারটা) পরিকল্পনামন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হলে জানা যাবে এটি একনেকে উঠবে কিনা। তার মতামতের ওপরই অনেক কিছুই নির্ভর করছে। তিনি আরও বলেন, একনেকের কার্যতালিকাভুক্ত না হলেও অগ্রাধিকার বিবেচনায় প্রকল্পটির সংশোধন অনুমোদন দেয়ার চেষ্টা চলছে। এ প্রেক্ষিতে একনেকের জন্য সারসংক্ষেপ প্রস্তুতসহ আনুষঙ্গিক কাজ দ্রুত শেষ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত এবং সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা প্রকল্পটির সংশোধিত ব্যয় প্রস্তাব প্রায় ছয় মাস আগে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় সেতু বিভাগ। প্রস্তাবে সেতু বিভাগের ভবন নির্মাণ, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ কয়েকটি খাতের ব্যয় নিয়ে আপত্তি তোলে কমিশন। কয়েক দফা বৈঠকেও সমাধান না হওয়ায় প্রকল্পটির বেশ কয়েকটি খাতে ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে ৫০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন দেয় পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ। এরপর একনেক সভার আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এরই মধ্যে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন। সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, মূল সেতু, নদী শাসন কাজ, সংযোগ সড়ক, পরামর্শক সেবা, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন কার্যক্রম খাতে ব্যয় বেড়েছে। অর্থের উৎসের পরিবর্তন, চুক্তি মূল্য ও চুক্তির মেয়াদ পরিবর্তনের কারণে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধন করা হচ্ছে। নতুন প্রস্তাবে প্রায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুটির ব্যয় হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৭ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তার উৎস ভারতের অনুদানের অর্থ। পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েকটি খাতে ব্যয় বাড়ার কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণে আরও অর্থ প্রয়োজন। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে তিন হাজার ৭৭২ কোটি টাকা, নদী শাসনে চার হাজার ৩২০ কোটি টাকা, সংযোগ সড়ক নির্মাণে ৬৩৮ কোটি টাকা, পরামর্শক বাবদ ১৭৬ কোটি টাকা, নতুন খাতে ১২৫ কোটি টাকা, জমি অধিগ্রহণে ২১২ কোটি টাকা এবং পদ্মা নদীর মাওয়া অংশে ভাঙ্গন ঠেকাতে ৫০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত প্রয়োজন। পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন ধরনের অবহেলা করছে না সেতু বিভাগ। সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই পদ্মা সেতু ব্যবহার করতে পারবে মানুষ। প্রকল্পটির আওতায় মূল সেতু ও নদী শাসনের কাজ বাস্তবায়নে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এসব চুক্তি আগের প্রাক্কলিত হিসাবের তুলনায় অনেক বেশি। বিশ^ব্যাংকসহ উন্নয়নসহযোগীদের অর্থায়নে ২০০৭ সালে মূল প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ নিয়ে মতবিরোধের একপর্যায়ে বিশ^ব্যাংকের অর্থায়ন থেকে সরে আসে সরকার। এর আগে ২০১১ সালে প্রথম দফা সংশোধন করে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা অনুমোদন দেয় একনেক। নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়ন না হওয়ায় নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে আরেক দফা ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। প্রতিটি প্যাকেজেই আগের চেয়ে বেশি দরে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কার্যক্রমের অগ্রগতি ॥ দেশের সবচেয়ে বড় সেতুটি নির্মাণে পদ্মা পাড়ে চলছে বিরাট কর্মযজ্ঞ। নদী শাসনের জন্য প্রতিদিন ২০ হাজার ৩০০টি ব্লক তৈরি হচ্ছে। প্রকল্পটির নদী শাসন অংশের অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ১২ শতাংশ। মূল সেতুর অগ্রগতি হয়েছে ১৬ শতাংশ। মূল সেতুর ১০টি টেস্ট পাইলের মধ্যে তিনটি, ভায়াডাক্টের ১৬টি টেস্ট পাইলের মধ্যে সাতটি এবং ৬৪টি এ্যাংকর পাইলের মধ্যে ২৮টি শেষ হয়েছে। সর্বশেষ হিসাব পর্যন্ত জাজিরা সংযোগ সড়কের ৫৩ শতাংশ, মাওয়া সংযোগ সড়কের ৬০ শতাংশ এবং সার্ভিস এরিয়া-২ এর ৬৭ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।
×