ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়াতে পরামর্শ দেয়া হবে উদ্যোক্তাদের

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৫ জানুয়ারি ২০১৬

বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়াতে পরামর্শ দেয়া হবে উদ্যোক্তাদের

এম শাহজাহান ॥ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দেয়া হবে। এ জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যাপারে আবারও সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের আশ্বস্ত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ গ্রহণ করে রফতানিতে নগদ সহায়তা বৃদ্ধি, ইউরোর দর পতনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশেষ সহায়তা প্রদান এবং ব্যাংক ঋণের বিপরীতে সুদহার কমিয়ে আনার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সরকার। এছাড়া শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগ চালু এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুত সংযোগের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ শুরু করা হবে। বেসরকারী খাতের বিনিয়োগের প্রধান বাধাগুলো দূর করে ওয়ান স্টপ সার্ভিস দেয়া যায় কিনা, সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগ বাড়াতে আগামী ৭ জানুয়ারি ‘বাণিজ্য-সহায়ক পরামর্শক কমিটি’র সভা আহ্বান করেছে সরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে ওই সভায় এসব বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, রূপকল্প-২১ বাস্তবায়ন ও দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরে সরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়েনি। আস্থাহীনতার সঙ্কট, অবকাঠামোগত সমস্যা এবং ব্যাংক ঋণের উচ্চমাত্রার সুদের কারণে গত কয়েক বছর ধরে বিনিয়োগের খরা কাটছে না। এই বাস্তবতায় ঘোষিত সময়ের মধ্যে রূপকল্প-২১ বাস্তবায়ন করতে হলে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর তাই নতুন বছরের শুরুতেই উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে চায় সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবার বাণিজ্যসহায়ক পরামর্শক কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দেশের শীর্ষ স্থানীয় বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, বাণিজ্যসহায়ক পরামর্শক কমিটির সভায় এবারও উদ্যোক্তাদের পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করা হবে। তাদের সমস্যা এবং সম্ভাবনাগুলো শুনে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, দেশে এখন ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে। তাই তাদের বিনিয়োগের জন্য পরামর্শ দেয়া হবে। রূপকল্প-২১ এবং দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যেতে হলে অবশ্যই বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। বিনিয়োগের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে সরকার। এছাড়া উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর রফতানি বাড়াতে হবে। ইতোমধ্যে ইউরোর দাম পড়ে যাওয়ায় রফতানিকারকরা বেকায়দায় রয়েছেন। তারা সহায়তা চাচ্ছেন। ব্যাংক ঋণের সুদহার কমানো হয়েছে। উদ্যোক্তারা এটি সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার দাবি করেছেন। তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের এসব দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করা প্রয়োজন। এ বিষয়গুলো নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। জানা গেছে, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীকে পরামর্শ দেয়ার জন্য প্রায় দুই বছর আগে ২৫ সদস্যের একটি বাণিজ্যসহায়ক পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এফবিসিসিআই সভাপতিসহ দেশের শীর্ষ উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের এই কমিটিতে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই কমিটির তিনটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি সভায় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ॥ উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পূর্বশর্ত হলো বিনিয়োগ বাড়ানো। গত দশ বছরে সরকারী বিনিয়োগ জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হলেও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২১-২২ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এই বাস্তবতায় রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ বাড়াতেই হবে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে উৎপাদনশীল ও রফতানিমুখী খাতগুলোতে বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে ৪০ লাখ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে এ শিল্পখাত থেকে অথচ গত কয়েক বছরে এ শিল্পে তেমন বিনিয়োগ বাড়েনি। ক্রেতাজোট এ্যাকোর্ড এবং এ্যালায়েন্সের অসহযোগিতা এবং অব্যাহত চাপ বৃদ্ধির কারণে শীর্ষ এ শিল্পখাতটি কঠিন সময় পার করছে। ইউরোর দর পতনে ইউরোপের রফতানিকারকরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পোশাক রফতানিকারক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, রফতানিতে নগদ সহায়তা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে ইউরোর দর পতনে রফতানিকারকরা আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। বাণিজ্যসহায়ক পরামর্শক কমিটির সভায় এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। তিনি বলেন, পোশাক শিল্পের বিনিয়োগকারীরা গ্যাসের সংযোগ পাচ্ছেন না। বিদ্যুত সংযোগের আবেদন করেও মাসের পর মাস ঘুরতে হচ্ছে। এই বাস্তবতায় বিনিয়োগ বাড়ানো কঠিন বিষয়। অবকাঠামোগত সমস্যা দূর করা গেলে পোশাক শিল্পসহ সব খাতে বেসরকারী বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসবেন। বাড়বে বিনিয়োগ। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের পরামর্শ ॥ রূপকল্প ভিশন-২১ বাস্তবায়ন, দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে শামিল হতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এতে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে। এ লক্ষ্যে সপ্তম পঞ্চ বার্ষিকীতে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ লাখ কোটি টাকা। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে ১ কোটি ২৯ লাখ মানুষের নতুন কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করছে সরকার। শুধু তাই নয়, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে ব্যাপক কর্মসূচী। এ লক্ষ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, ব্যাংক সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা, বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো, গ্যাসের পরিবর্তে কয়লা ও বিদ্যুতভিত্তিক কারখানা প্রতিষ্ঠা, বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন, অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারী বিনিয়োগে অগ্রাধিকার, দ্রুততম সময়ে আটটি প্রকল্প বাস্তবায়ন, সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্ব বাড়ানো, ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগের সকল প্রতিবন্ধকতা অপসারণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, উৎপাদনে নৈপুণ্য উন্নয়ন এবং বহিঃবাজার সম্প্রসারণের মতো কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সরকারের কোন উদ্যোগ কাজে আসছে না বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগে কোন সুখবর নেই। বাণিজ্যসহায়ক পরামর্শক কমিটির সভায় বিনিয়োগের বাধা দূরীকরণে তাগিদ দেয়া হবে।
×