ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি পালন

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৫ জানুয়ারি ২০১৬

বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি পালন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেতন স্কেলে বৈষম্য সৃষ্টি এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের প্রতিবাদে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দুই দিনের কর্মবিরতির প্রথম দিন অচল হলো সারাদেশের ৩০৮ সরকারী কলেজসহ সংশ্লিষ্ট দফতর। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ডাকে সোমবার পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন সরকারী কলেজ, শিক্ষা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তা। আজও চলবে কর্মসূচী। ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি সরকারী কলেজের অধিকাংশতেই। জানা গেছে, আগামী ২২ জানুয়ারি সমিতির সাধারণ সভা থেকে আসতে পারে আরও কঠোর কর্মসূচীর। এদিকে বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা। এর আগে একই দাবিতে গত এক মাসে কয়েক দফা কর্মবিরতিসহ নানা কর্মসূচী পালন করেছেন সরকারী কলেজের শিক্ষকরা। এরপর শিক্ষকরা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বেতন স্কেলে বৈষম্যের অভিযোগ এনে সঙ্কট নিরসনের দাবি জানান। সোমবারের কর্মসূচী থেকেও শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আলাদা বেতন স্কেল নয়, বর্তমান বেতন কাঠামোতেই সকল স্তরে বেতন বৈষম্য নিরসন করতে হবে। এটা শিক্ষকদের মর্যাদার প্রশ্ন। বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ ছাড়া আন্দোলন থেকে সড়ে আসার কোন পথ নেই। অবিলম্বে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল পুনর্বহাল করে বৈষম্য নিরসন ছাড়া শিক্ষকদের অসন্তোষ কমবে না। শিক্ষক নেতারা দাবি পূরণে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, বর্তমান সরকার সম্প্রতি ৮ম জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণা করেছে। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। পে স্কেলের অনেক ইতিবাচক দিক আছে। কিন্তু র্শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক পদে বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিকে বিবেচনায় না এনে অধ্যাপক পদের বেতন স্কেল ও গ্রেড অবনমন করা হয়েছে। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল করে প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপকসহ র্শিক্ষা ক্যাডারের সকল স্তরের বেতন বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ হাজার সদস্য এটি উপভোগ করতে পারছে না। শিক্ষকরা তথ্য প্রমাণ তুলে ধরে বলেছেন, এখনো বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা পঞ্চম গ্রেড হতে পদোন্নতি পেয়ে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হন। কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারের সহযোগী অধ্যাপকরা পঞ্চম গ্রেড হতে চতুর্থ গ্রেডে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান, যা বৈষম্যমূলক। ৫০ শতাংশ অধ্যাপক সিলেকশন গ্রেড পেয়ে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হন। এ বৈষম্য নিরসনের দীর্ঘদিনের চেষ্টা, ১৯৮৪ সনের এনাম কমিশন, ১৯৮৭ সনের সচিব কমিটির সুপারিশ এবং সর্বশেষ ২০১৪ সনের চাকরি ও বেতন কমিশনের নিকট আবেদন সত্ত্বেও অধ্যাপকদের বেতন গ্রেড চতুর্থ গ্রেড হতে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হয়নি। উল্টো সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বন্ধ করে দেয়ায় শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ সর্বোচ্চ চতুর্থ গ্রেড হতে অবসরে যাবেন। অন্যদিকে পদোন্নতির সুযোগ না থাকায় শিক্ষা ক্যাডারের অনেকেই সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অবসরে যান। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল না থাকায় এখন সহযোগী অধ্যাপকদের পঞ্চম গ্রেড হতে অবসরে যেতে হবে। প্রাপ্য মর্যাদায় উন্নীত না করে স্কেল ও পদ অবনমনে শিক্ষকরা মর্মাহত। শিক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, পদ ও স্কেল অবনমনের মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ চতুর্থ গ্রেডে নির্দিষ্ট করে, শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন অধিদফতর ও শিক্ষা প্রকল্পের তৃতীয়, দ্বিতীয় ও প্রথম গ্রেডে অন্য ক্যাডার হতে পদায়ন করার সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সোমবার বিভিন্ন সরকারী কলেজে মানববন্ধন, প্রদিবাদ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচী পালন করেছেন শিক্ষকরা। বেতন বৈষম্য নিরসন ও মর্যাদা ফিরে আনার দাবিতে ঢাকা, বরিশাল, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করেছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির শিক্ষকরা। দেশের সকল সরকারী কলেজ ছাড়াও শিক্ষকরা, সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ (টিটি) কলেজ, গবর্নমেন্ট কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট, শিক্ষাবোর্ড, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অফিস ও প্রকল্পে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন। শিক্ষা সমিতির মহাসচিব আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলছিলেন, তার কাছে যে খবর আছে, তাতে দেশের সব সরকারী কলেজে শিক্ষকরা সংগঠনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচী পালন করছেন। মঙ্গলবারও এই কর্মসূচী চলবে। দাবি পূরণ না হলে আগামী ২২ জানুয়ারি সমিতির সাধারণ সভায় আরও কঠোর কর্মসূচীর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রথম দিনের কর্মসূচী শেষে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নাসরিন বেগম ও মহাসচিব মোঃ আই কে সেলিম উল্লাগ খোন্দকার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মঙ্গলবারও একই কর্মসূচী পালিত হবে। সমিতি মনে করে, শিক্ষা ক্যাডারে সুনির্দিষ্ট সংখ্যক পদ প্রথমগ্রেডে উন্নীতকরণসহ ক্যাডারের সকল পদের আপগ্রেডেশন করতে হবে। তা না করে বর্তমান পে স্কেলে তার অবনমন হয়েছে। যা সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার ক্ষুণœ করার শাামিল। তারা বলেছেন, সারাদেশে কর্মবিরতি চলেছে শান্তিপূর্ণভাবে। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মানববন্ধন, স্মারকলিপি ॥ বেতন স্কেলে অবমূল্যায়ন ও বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা। মানববন্ধন শেষে ইনস্টিটিউটশ অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ বা আইডিইবি’র চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বেতন বৈষম্যের প্রেক্ষাপটে ছয়দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর নিকট হস্তান্তর করেন। স্মারকলিপি গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব। প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন আইডিইবি’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ শামসুর রহমান। স্মারকলিপিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের প্রারম্ভিক বেতন ক্যাডার এন্ট্রি পদের একধাপ নিচে নবম গ্রেডে নির্ধারণ, বেতন বৈষম্য হ্রাসে ক্যাডার নন-ক্যাডার এন্ট্রি পদ একই গ্রেডে নির্ধারণ, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার উপ-সহকারী প্রকৌশলী/সমমান পদে কর্মরতদের ৪ বছর চাকরি পূর্তিতে অষ্টম গ্রেড নির্ধারণসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়। কর্মসূচীতে আইডিইবি’র সভাপতি এ কে এম এ হামিদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়তে হলে সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ পরিপন্থি ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী বৈষম্যমূলক অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল অবশ্যই সংশোধন করতে হবে। সাধারণ সম্পাদক মোঃ শামসুর রহমান বলেন, বিতর্কিত ও বিভেদমূলক বেতন স্কেল ঘোষণা করে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর ষড়যন্ত্র গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি আইডিইবি’র দাবি অনুযায়ী অবিলম্বে বেতন স্কেল সংশোধনের আহ্বান জানান। আরও বক্তব্য রাখেন আইডিইবি’র সহ-সভাপতি এ কে এম আব্দুল মোতালেব, ফজলুল হক মল্লিক, ঢাকা ওয়াসা ডিইএ’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ আরমান ভূঞা, সওজ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুন্তাসীর হাফিজ, পলিটেকনিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ ইদ্রীস আলী, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
×