ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোল বোমার জীবন্ত সাক্ষী

যন্ত্রণাদায়ক এক দুঃস্বপ্নে দিন কাটে মোস্তফার

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৫ জানুয়ারি ২০১৬

যন্ত্রণাদায়ক এক দুঃস্বপ্নে দিন কাটে মোস্তফার

মাহমুদুল আলম নয়ন, বগুড়া অফিস ॥ ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না মোস্তাফা। দুঃস্বপ্নে চিৎকার দিয়ে উঠেন মাঝে মাঝেই। ঘুমাতে গেলেই যন্ত্রণা আর পেট্রোলবোমা হামলার সেই ভয়াবহ নৃশংস মুহূর্ত চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বছর গড়িয়ে এসেছে আবার নতুন বছর। বিএনপি জামায়াত জোটের পেট্রোলবোমায় সাধারণ মানুষ হত্যারও বছর পেরুতে চললেও নতুন বছরে কোন কিছু স্পর্শ করেনি মোস্তাফার জীবন। মোস্তাফা এক সময়ের কর্মঠ ট্রাকচালক। এখন শুধু নিদারুণ অক্ষমতা ও যন্ত্রণাদায়ক অমানবিক বিভৎসার স্বাক্ষী হয়ে পঙ্গুত্বের জীবনযাপন করতে হচ্ছে। স্ত্রী ও শিশু সন্তানদের নিয়ে পরিবার কিভাবে চলবে সেই অসহায়ত্ব এখন সার্বক্ষণিক তাড়া করছে তাকে। চিকিৎসা অব্যাহত রাখার টাকাও নেই। বিএনপি জামায়াত জোটের নিষ্ঠুরতার বিচারসহ সাহায্যের আবেদন নিয়ে শুধু ঘুরে ফিরছেন। সঙ্গে স্ত্রী গোলাপী। তার জীবনে এখন সম্বল বলতে স্ত্রীর মনোবল ও সঙ্গ। ১৮ বছর আগে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার মোস্তফা যখন প্রাইভেট কারচালক ছিলেন, তখন পরিচয় গোলাপীর সঙ্গে। তার সাবলীল কথা, লম্বা সুন্দর গড়ন, আর স্মার্ট আচরণে মুগ্ধ হয়েছিলেন গোলাপী। তারপর বিয়ে। সেই গোলাপীর ভালবাসা আগের মতোই রয়েছে। কিন্তু স্বামীর মুখমণ্ডল দেখে নিজেই মাঝে মাঝে আঁতকে ওঠেন। পুড়ে যাওয়া দু’হাত দিয়ে কোন কাজ করতে পারেন না। মুখম-লসহ গোটা শরীরে পেট্রোলবোমার বিভৎসতা। এখন সুন্দর গড়নের সেই মোস্তাফাকে নিয়ে স্ত্রী গোলাপী যখন বাস বা অটোরিক্সায় ওঠেন তখন অন্য কেউ সেখানে থাকতে চান না। সে সময় মোস্তাফা দম্পত্তির চোখজুড়ে শুধু চাপা কান্না আর অসহায়ত্বের যন্ত্রণা ছাড়া কিছুই থাকে না। বেশির ভাগ সময়েই তাকে মুখ ও হাত ঢেকে চলতে হয়। আন্দোলনের নামে তখন বিএনপি জামায়াত জোটের জ্বালাও পোড়াও আর নাশকতা চলছিল। বগুড়া সদরের ছোট কুমিড়া সর্দারপাড়ার ট্রাকচালক গোলাম মোস্তফা পরিবারের মুখে খাবার যোগাতে নিরুপায় হয়ে ট্রাক নিয়ে বের হন। গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি সবজি বোঝাই ট্রাক নিয়ে রওনা হয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন দুই সবজি ব্যবসায়ীসহ হেলপার হাসিব। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার রুপিহার এলাকায় পেট্রোলবোমা হামলার শিকার হন। পুড়ে যায় ট্রাক। ট্রাকে থাকা ৪ জনের শরীরই দগ্ধ হয়। রাতেই হাসপাতালে মারা যায় হেলপার হাসিব। এর পর থেকেই শুধু যন্ত্রণা আর দুঃস্বপ্ন। বিএনপি জামায়াত জোটের পেট্রোলবোমা মোস্তাফার জীবনে নেমে আনে অমানিশার ঘোর আঁধার। বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২ মাস ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ৩০ মে থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রায় ৫ মাস হাসপাতালে চিকিৎসার পরও মোস্তাফা পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার আরও চিকিৎসা ও অপারেশন প্রয়োজন। তবে চিকিৎসা চালানোর সার্মথ্য নেই তার পরিবারের। মোস্তফার ৪ ছেলে মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে নুরজাহানের বিয়ে হয়েছে। ছোট ছেলে নুরুন্নবী বয়স ৮ ও ছোট মেয়ে নুরুন্নাহারের বয়স ৪। বড় ছেলে ইব্রাহিম রিক্সাভ্যান চালায়। স্ত্রী গোলাপী অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। পঙ্গুত্বের কারণে মোস্তফা পরিবারে সবার মুখে অন্ন যোগাতেও পারছেন না। অন্যর বাড়িতে কাজ করে স্ত্রীকে সংসারের ঘানি টানতে দেখে অক্ষমতা এখন মোস্তফাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। স্ত্রী গোলাপীকে নিয়ে সাহায্যের আবেদন নিয়ে ঘুরে ফিরছেন সর্বত্র। আর প্রতি মুহূর্ত বয়ে চলছেন পোড়া শরীরের অসহ্য যন্ত্রণা। নৃশংসতার স্বাক্ষী হয়ে তিনি খুঁজে ফিরছেন সেই উত্তর, আন্দোলনের নামে পেট্রোলবোমায় কেন পোড়ানো হলো তার সুখময় বেঁচে থাকার স্বাভাবিক স্বপ্ন।
×