বিশেষ প্রতিনিধি ॥ অষ্টম বেতন কাঠামোতে একাধিক মহল থেকে বৈষম্যের অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় বিষয়টি নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেতন কাঠামো নিয়ে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের মধ্যে সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে ‘বেতন বৈষম্য দূরীকরণসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’তে থাকা কয়েক সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে এক অনির্ধারিত আলোচনায় বেতন কাঠামোয় কোন ত্রুটি আছে কিনা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে বেতন কাঠামো নিয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, গেজেট প্রকাশের সময় সেভাবে হয়নি। এ কারণেই এ অসন্তুষ্টি দেখা দিয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত এক মন্ত্রী সচিবদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের কথা জানান। তবে তারা কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি।
অষ্টম বেতন কাঠামোতে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করে আসছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিসিএস শিক্ষকসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মন্ত্রী বলেন, অষ্টম বেতন কাঠামোয় অসন্তোষ নিয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচনার অবতারণা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বেতন বৈষম্য দূরীকরণসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বেতন বৈষম্য নিরসন কমিটি গঠনের পর একটি সভা হলেও সেই সভার সিদ্ধান্তের প্রতিফলন বেতন কাঠামোর গেজেটে ছিল না। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও বলেন এ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত গেজেটে প্রতিফলন হয়নি।
নতুন বেতন কাঠামোতে শুধু শিক্ষক নয়, ক্যাডার-নন ক্যাডার বৈষম্য করা হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রীকে জানান তোফায়েল। আলোচনায় অন্যান্য মন্ত্রীও অংশ নেন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এ আলোচনা চলে বলে জানান তথ্য দেয়া ওই মন্ত্রী।
গত ১৫ ডিসেম্বর অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোর গেজেট জারি করে সরকার। নতুন পে স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাদ দেয়ায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিসিএস শিক্ষকদের বেতন আগের তুলনায় কয়েক ধাপ নিচে নেমে গেছে বলে অভিযোগ করে আসছেন। বৈষম্যের কথা বলছেন, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিৎসক এবং বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৬ ক্যাডার (প্রশাসন ছাড়া) ও বিভিন্ন ফাংশনাল সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড না থাকায় বঞ্চনার কথা বলছেন, সরকারী আরও কয়েকটি কর্মকর্তা-কর্মচারী সংগঠনও। এছাড়া নতুন কাঠামোতে বিসিএস ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের প্রবেশ পদ অষ্টম গ্রেডে নির্ধারিত হবে। অপরদিকে, নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা প্রথম শ্রেণীর পদে প্রবেশে আগের মতো নবম গ্রেডে বেতন পাবেন। এ বৈষম্যও আলোচনায় উঠে আসে।
বেতন দ্বিগুণ করে দেয়ার পরেও ক্ষোভ কেন’-এমন প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। পরে যেসব কর্মকর্তা (সচিব) বেতন বৈষম্য দূরীকরণসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বেতন ডাবল করলাম এরপরেও অসন্তোষ থাকবে কেন?
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা সচিবের মর্যাদা চান। সচিবদের সঙ্গে কী তাদের (অধ্যাপক) তুলনা চলে। ড. আনিসুজ্জামানকে কি কোন সচিবের সঙ্গে তুলনা করা যায়?
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনে দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা যেহেতু সচিব হতে চায়, তাই তাদের চাকরির বয়স কমিয়ে সচিবদের সমান ৫৯ বছর করে দেন। তারা কথায় কথায় সচিব সচিব করেন। তবে তারা সচিবই হোন। সচিবরা যেমন অফিস করেন, তারাও ঠিকমতো ক্লাস করান কিনা, তা দেখুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি থেকে অবসরের বয়স এখন ৬৫ বছর।