ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি রোধে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৫ জানুয়ারি ২০১৬

ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি রোধে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে

এম শাহজাহান ॥ ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় ১৩শ’ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় দুর্ঘটনাপরবর্তী উদ্ধারকার্যক্রম পরিচালনার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হবে। এছাড়া ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট সেন্টার, ওয়্যার হাউজ, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা এবং পরামর্শ দেয়ার মতো কর্মসূচী গ্রহণ করেছে সরকার। পুরো প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুন নাগাদ বাস্তবায়ন করা হবে। যেকোন মুহূর্তে ভূমিকম্পের কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের অন্যান্য শহরাঞ্চলের লক্ষাধিক বিল্ডিং ধ্বংস ও বহু প্রাণহানি এবং সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বাস্তবতায় ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে জাতীয় কন্টিনজেন্সি প্ল্যান তৈরি করা হবে। দেশের ৬৪টি জেলা এ কন্টিনজেন্সি প্ল্যানের আওতায় নিয়ে আসা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। এদিকে গত বছরের জুন মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গাজীপুর, সিলেট ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভূমিকম্পের প্রভাব, ক্ষয়ক্ষতি ও জরুরী অবস্থা মোকাবেলায় ১ হাজার ৩৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৩২ কোটি ১০ লাখ টাকা অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে- ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট (ডিএমডিপি) ও সিলেট মহানগরী এলাকায় ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ জরুরী অবস্থা মোকাবেলায় দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এ প্রকল্পের কাজ এখন এগিয়ে চলছে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশের আশপাশে সকল স্থানে ভূমিকম্প হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা ও সিলেট অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। ভূমিকম্প সরাসরি মোকাবেলা করা যায় না। কিন্তু এর ক্ষয়ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে সরকারের কিছু পদক্ষেপ রয়েছে। একনেক সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে অনুমোদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় ভূমি সার্ভে করা হবে। কোথায় কত তলাবিশিষ্ট বাড়ি তৈরি করা যাবে। কোথায় কী পরিমাণে বাড়িঘর তৈরির উপাদান ব্যবহার করা যাবে সেসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। ভূমিকম্পপরবর্তী সময়ে দুর্গম এলাকায় যাতে সহজে পৌঁছানো যায় সেসব সরঞ্জামও কেনা হবে। ভয়াবহ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। এ রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যৌথভাবে দুর্যোগের হাত থেকে তিন শহর রক্ষায় সহযোগিতা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক ও জাপানের সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। জানা গেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে অন্যান্য মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় করা হবে। বর্তমান এক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সঙ্গে আরেক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সমন্বয় নেই। এ কারণে দুর্যোগ মোকাবিলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থা থেকে মানুষ কাক্সিক্ষত সহায়তা পায় না। এতে যেকোন দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হচ্ছে। তাই এবার স্থানীয় সরকার বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের সমন্বয়ে অগ্নিকা-, ভবনধস ও ভূমিকম্প প্রতিরোধে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে রিখটার স্কেলে সাড়ে ৭ থেকে ৮ মাত্রায় ভূমিকম্প হলে ৮৫ শতাংশ ভবন ভেঙে পড়বে। এতে প্রচুর প্রাণহানি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে রাজধানী ঢাকাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে নতুন মহাপরিকল্পনায়। ঢাকা শহরে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য একটি ইমারজেন্সি অপারেটিং সিস্টেম (ইওসি) এবং সিটি কর্পোরেশনের ১০টি জোনাল অফিসের প্রতিটিতে স্যাটেলাইট কন্ট্রোল রুম চালু করা হবে। ভূমিকম্পের পর রাস্তা পরিষ্কার করতে ও বর্জ্য সরাতে কেনা হবে অত্যাধুনিক হুইল ডোজার। এক্সক্যাভেটর, ক্রেন ও মোবাইল জেনারেটরের মতো ভারি যন্ত্রপাতিও কেনা হবে। এসব যন্ত্রপাতি রাখার জন্য নির্মাণ করা হবে ওয়্যারহাউস। দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বাড়াতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা ও পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য ইতোমধ্যে আরবান রেজিলিয়েন্স ঢাকা নর্থ সিটি কর্পোরেশন নামের একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭৫১ কোটি টাকা। এতে বিশ্বব্যাংক ঋণ হিসেবে দেবে ৭৩১ কোটি টাকা। বাকি ২০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে। ভূমিকম্প ঝুঁকি মানচিত্র তৈরি করা হবে ॥ ভৌগোলিক অবস্থান, ভূতাত্ত্বিক গঠনের জন্য বাংলাদেশ তীব্র ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। সূত্রগুলো বলছে, সিলেট সীমান্তে সক্রিয় ডাউকি ফল্টের অবস্থান ও টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্টের অবস্থান এবং উত্তরপূর্বে সীমান্তসংলগ্ন ইন্ডিয়ান প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সংযোগস্থল হওয়ায় বাংলাদেশ ভূমিকম্পের আশঙ্কামুক্ত নয়। এ কারণে তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ইতোমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জন্য ভূমিকম্প ঝুঁকি মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর ও রাজশাহীর ভূমিকম্প ঝুঁকি মানচিত্র তৈরি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কন্টিনজেন্সি প্ল্যান ॥ ভূমিকম্পসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরবর্তী অবস্থা থেকে দ্রুত উত্তরণের জন্য জাতীয় কন্টিনজেন্সি প্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে। দ্রুত সাড়া প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন প্রভৃতি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর (ডিডিএম), ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী (সিপিপি), ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এবং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াসা, বিটিসিএল, তিতাস, বাখরাবাদ বিদ্যুত, স্বাস্থ্যসেবা প্রভৃতি বিভিন্ন সংস্থার কন্টিনজেন্সি প্ল্যান তৈরি করে তার মাধ্যমে হালনাগাদ করা হচ্ছে। বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন ॥ ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণের কারিগরি তথ্য সন্নিবেশিত করে প্রণয়ন ও কার্যকর করার লক্ষ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন অপরিহার্য। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছে।
×