ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে জঙ্গী হামলা

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ৫ জানুয়ারি ২০১৬

ভারতে জঙ্গী হামলা

খ্রিস্ট নববর্ষের শুরুতে আবারও জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটেছে ভারতে। সন্ত্রাসীদের এবারের লক্ষ্যস্থল ছিল পাঞ্জাবের পাঠানকোটে অবস্থিত ভারতীয় বিমানবাহিনীর বড় একটি ঘাঁটি। এটি পাকিস্তান সীমান্ত থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে। শুক্রবার শেষ রাতে বিমানবাহিনী ঘাঁটিটি আচমকাই কেঁপে ওঠে জঙ্গীদের মুহুর্মুহু আক্রমণে। এর আগে জম্মু-পাঠানকোট মহাসড়কে কয়েকজন সশস্ত্র দুষ্কৃতকারী রাজ্য পুলিশের এক কর্মকর্তার গাড়ি ছিনতাই করে নেয়। এর পর রাজ্যের সর্বত্র ‘রেড এলার্ট’ জারি এবং সতর্কতা অবলম্বন করা হলেও শেষ রক্ষা করা যায়নি। হামলার পর পরই দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয় তুমুল লড়াই তথা গোলাগুলি। চালানো হয় চিরুনি তল্লাশি। এই পর্যন্ত ৪ সন্ত্রাসী ও ৭ জন সেনা নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে কোন জঙ্গী সংগঠন হামলার দায় না নিলেও ধারণা করা হচ্ছে পাকিস্তানী মদদপুষ্ট জয়শ-ই-মোহাম্মদই এর জন্য দায়ী। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার হাতে ধারণকৃত ফোনালাপ থেকে এর সত্যতা পাওয়া যায়। তদুপরি জঙ্গীরা জয়শ-ই-মোহাম্মদের প্রয়াত নেতা আফজাল গুরুকে হত্যার বদলা নিতেই এই হামলা চালায় বলেও জানা গেছে। উল্লেখ্য, ২০০১ সালে ভারতের পার্লামেন্টে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর দিল্লীর তিহার জেলে ফাঁসি দেয়া হয় আফজাল গুরুকে। এর আগে গত বছরের জুলাই মাসে সন্ত্রাসীরা পাকিস্তান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে এসে একই কায়দায় হামলা চালিয়েছিল একটি ফাঁড়িতে, যাতে ৭ জন পুলিশ নিহত হন। তবে এবারের হামলাটি আরও ব্যাপক, পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক। কেননা, এটি ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি সুরক্ষিত বড় ঘাঁটি এবং এখানে যুদ্ধবিমান মিগ ও সামরিক হেলিকপ্টার সুরক্ষিত রাখা হয়। এর রেশ না কাটতেই আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে প্রাদেশিক নগরী মাজার-ই-শরীফে ভারতীয় কনস্যুলেটে জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটেছে। দু’জন জঙ্গী নিহত হওয়ার খবরও আছে। হামলার পরপরই ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবার সংযত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, সন্ত্রাসী হামলার যথোপযুক্ত জবাব দেয়া হবে। এর ফলে সাম্প্রতিককালে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ ও প্রস্তুতি চলছে, তা কি ভেস্তে যাবে? এই প্রশ্ন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের। সবাই জানেন, গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়া-আফগানিস্তান থেকে দেশে ফেরার পথে আকস্মিকভাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে লাহোরে অবতরণ করেন। তারও আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক শুভেচ্ছা সফরে পাকিস্তান যান। গত কয়েক দিনে উভয় দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কথাবার্তায় এটা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, জম্মু ও কাশ্মীর সমস্যাসহ সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমনে উভয় দেশই পারস্পরিক আলাপ আলোচনা ও সংলাপ চালিয়ে যেতে আগ্রহী। এতে করে পাকিস্তান-ভারতের জনগণের পাশাপাশি বিশ্ববাসীও আশান্বিত হয়ে উঠেছিল। ঠিক তখনই পাঠানকোটে বিমান ঘাঁটিতে জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটল! এতে করে অনেকের মনেই এই প্রশ্নের উদয় হওয়া স্বাভাবিক যে, তাহলে কি শান্তি আলোচনা হোঁচট খেল? কেননা অতীতেও দেখা গেছে যে, যখনই ভারত এবং পাকিস্তান একটি শান্তিপূর্ণ আলোচনার জন্য পরস্পরের দিকে এগিয়ে যায়, ঠিক তখনই এরকম অঘটন ঘটে। একটি মহল থেকে শান্তি প্রক্রিয়া ভ-ুল করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এর পেছনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একাংশ তথা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের হাত থাকারও অভিযোগ আছে। তবে এবারে অন্তত ভারত-পাকিস্তানের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার যে সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে, তাতে অন্তর্ঘাতমূলক হামলাকারীরা সফল হবে বলে মনে হয় না। আগামী কয়েকদিনেই এর প্রতিফলন পাওয়া যাবে।
×