ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মার্চেন্ট ব্যাংকের মহাজনি নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ৫ জানুয়ারি ২০১৬

মার্চেন্ট ব্যাংকের মহাজনি নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী

অপূর্ব কুমার ॥ পুঁজিবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের দুঃস্বপ্ন কাটছে না। যার কারণে পতন শেষে বাজার ঘুরে দাঁড়ালেও মূলত মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীদের কোনই লাভ হচ্ছে না। কারণ তাদের পোর্টফোলিও থেকে যে লাভ হচ্ছে তা মার্জিন ঋণের সুদ হিসেবে কেটে রাখা হচ্ছে। এক কথায় মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোর রক্তচোষা বা মহাজনি নীতির কারণেই মূলত বিনিয়োগকারীদের অবস্থা রুগ্ন থেকে রুগ্নতর হচ্ছে। ফলে মার্জিন ঋণের বোঝা থেকে বের হতে পারছে না কেউই। অন্যদিকে লাভবান হচ্ছে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। জানা গেছে, গত এক বছরে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে আমানত এবং ঋণের সুদ হার কমলেও এর কোন প্রভাব নেই পুঁজিবাজারের মার্জিন ঋণে। বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার জন্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের দেয়া এ ঋণে এখনও আদায় করা হচ্ছে উচ্চ সুদ। ফলে মার্জিন ঋণের বিনিয়োগে এখনও বাড়তি ঝুঁকি নিতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানভেদে মার্জিন ঋণে ১৬ থেকে ১৯ শতাংশ সুদ আদায় করছে। গত কয়েক বছর ধরেই এ হারে ঋণ দিচ্ছে তারা। সম্প্রতি ব্যাংকিং চ্যানেলে বিপুল নগদ টাকার চাপে বিভিন্ন খাতে ঋণের সুদ হার কমেছে। কিন্তু তার কোনই প্রভাব নেই মার্জিন ঋণে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান সুদ হার কমালেও তা ০.৫ থেকে ০.৭৫ শতাংশের বেশি নয়। রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। টাকা খাটাতে না পারায় আমানতের সুদ হার কমিয়ে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। মেয়াদি আমানতের সুদ হার নেমে এসেছে ৭Ñ৮ শতাংশে। একই কারণে কমিয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঋণের সুদ হারও। মার্চেন্ট ব্যাংক ও ট্রেকহোল্ডারের ( ব্রোকারেজ হাউস) কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের নিজেদের তেমন কোন তহবিল নেই। তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গ্রাহকদের ঋণ দিয়ে থাকেন। ব্যাংকগুলো তাদের কম সুদে ঋণ না দেয়ায় তারা মার্জিন ঋণের সুদ কমাতে পারছেন না। তাছাড়া তারা সুদ হারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে মার্জিন ঋণকে কিছুটা নিরুৎসাহিত করতে চান। এদিকে, বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বিনিয়োগ স্থবিরতার জন্য ব্যাংকের সুদ হার কমছে। কিন্তু পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য মার্জিন ঋণের সুদের হার কমছে না। অনেকেই চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ নিচ্ছে। এটা তাদের ওপর জুলুম। তাদের অভিযোগ, ২০১০ সালের ধসের পরে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীদের পোর্টফলিওই এখন ঋণাত্মক। এরপরে যারা ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেছেন, তাদের পরিস্থিতি আরও করুন। তাই মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউসের রক্তচোষা নীতি থেকে বের হয়ে না আসলে বাজার স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে না। জানা গেছে, বর্তমানে ব্র্যাক ইপিএল ১৮ শতাংশ হারে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ দিচ্ছে। আর আইডিএলসি ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১৬ দশমিক ৫০ শাতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে। আর ইন্টারন্যাশনাল লিজিং দিচ্ছে ১৬ শতাংশ হারে। মার্জিন ঋণ বিষয়ে বিনিয়োগকারী আমিনুর রশীদ বলেন, ব্যাংকগুলো এফডিআরের রেট কমাচ্ছে। অথচ মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো কমাচ্ছে না। ২০১০ সাল থেকে লোকসান দিতে দিতে আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছি। ভাবছিলাম বাজার ভাল হলো হয়তো এটি পুষিয়ে নিতে পারবো। কিন্তু সেটি আর হচ্ছে না। একদিকে মার্জিন ঋণ দেয়ার পরিমাণ কমে অন্যদিকে, সুদের হার আগের মতোই আছে। আইআইডিএফসির বিনিয়োগকারী আলমগীর হোসাইন বলেন, লোকসান দিতে দিতে আমাদের পুঁজি শেষ। এখন আমাদের যদি বাঁচতে হয় তাহলে মার্জিন ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে হবে। কিন্তু উচ্চ হারে সুদ দিয়ে আমরা বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছি না। ব্যাংকগুলো আমানতের সুদ হার কমালেও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো কেন কমাচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রহমত পাশা বলেন, আমরা এ প্রোডাক্টিকে (মার্জিন ঋণ) বাদ দেয়ার চিন্তা করছি। যার কারণে ব্যাংকে এফডিআর রেট কমার পরেও আমরা কামাচ্ছি না। তিনি বলেন, ২০১০ সালে বাজার ধসের অন্যতম একটি কারণ ছিল মার্জিন ঋণ। এ জন্য আমরা এটি থেকে বিনিয়োগকারীদের দূরে রাখার চেষ্টা করছি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক ব্রোকারেজ হাউস কর্মকর্তা বলেন, মূলত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা আবার বাজারে বিনিয়োগকারীদের মাঝে বিনিয়োগ করা হয়। এ কারণে সুদের হার বেশি। তাই বাজার খুব বেশি ভাল না হলে ঋণ নিয়ে মুনাফা করাটা কঠিন।
×